খুলনা: খুলনা মহানগরীর মুজগুন্নি এলাকার বাস্তুহারা কলোনিতে উচ্ছেদ অভিযানের সময় পুলিশের সাথে স্থানীয় বাসিন্দাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। রোববার (২১ আগস্ট) সকালে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়।
জানা গেছে, শুরু থেকেই টায়ার জ্বালিয়ে, গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ করে রাখেন বাসিন্দারা। সকাল ১০টার পর পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করলে সংঘর্ষের শুরু হয়। স্থানীয়রা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে পুলিশ পিছু হটতে বাধ্য হয়। পরে পুলিশ টিয়ার সেল নিক্ষেপ করে। এ সময় উচ্ছেদ অভিযানে যাওয়া বুলডেজার গাড়ি ভেঙে দেয়া হয়। এ ঘটনায় পুলিশসহ অর্ধশত লোক আহত হয়েছেন।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বাস্তুহারা কলোনিতে সংঘর্ষের ঘটনায় গুরুতর আহত ২৫ জন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বাস্তুহারার বাসিন্দারা জানান, আমরা ভূমিহীন, আমাদের কোন জায়গা নেই। আমাদের উপর লাঠিচার্জ করা হয়েছে। আহতের অবস্থা খুবই খারাপ। পুলিশ কার নির্দেশে আমাদের উপর হামলা করেছেঅ আমরা এর বিচার চাই। আহতদের সুচিকিৎসা চাই। গতকাল রাতে মাইকিং করে ২ দিন ব্যাপী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে আমাদের ডিসি অফিসে স্বারক দেওয়া আছে। যা হবে আলোচনা করে হবে। কিন্তু তা না করে সকালে ভূমিদস্যুদের মতো হামলা করেছে।
কলোনির বাসিন্দা মো. নাসির উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, আমরা প্রথমেই শান্তিপূর্ণভাবে রাস্তায় টায়ার জ্বালিয়ে, গাছের গুড়ি ফেলে বাঁধা দিচ্ছিলাম। আর মুরক্কিরা পুলিশের সাথে আলোচনা করছিল। কিন্তু পুলিশ ভিতরে ডুকতে থাকলে আমাদের মধ্যে থেকে কেউ কেউ প্রতিবাদ করে। পুলিশ তাদের লাঠচার্জ করতে শুরু করে। এসময় আমরা অনেকে রাস্তায় শুয়ে বাঁধা দেওয়া চেষ্টা করি। পুলিশ আমাদের মারতে আসলে। কলোনির লোকজন ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। পুলিশ পিছু হটে টিয়ারসেল মারা শুরু করে। তখন কলোনির লোকজন আবার ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। অভিযানে সিভিলে কিছু লোক ছিল যাদের হাতে লঠি ছিলো। ইসরাফিল নামের একজন এতটা গুরুতর আহত হয়েছেন যার মাথায় ৭টা সেলাই লেগেছে। এ সংঘর্ষে আনুমানিক শতাধিক লোক আহত হয়েছেন।
স্থানীয়দের দাবি, পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করলে তারা উচ্ছেদ করতে দিবে না।
এদিকে, বাস্তুহারা কলোনীতে দুপুর ২ টা পর্যন্ত বিক্ষোভ করছেন বাসিন্দারা।
গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ জানায়, এলাকাটি বাস্তুহারা কলোনি নামে পরিচিত হলেও খাতাপত্রে নাম ‘বয়রা আবাসিক এলাকা’। এ এলাকার সি-ব্লকের ৫৫টি প্লট ১৯৮৭ সালে বরাদ্দ দেওয়া হয়। কিন্তু এর মধ্যে ৪২টি প্লট বেদখল থাকায় সেগুলো বরাদ্দ দেওয়া লোকজনকে বুঝিয়ে দেওয়া যায়নি। সে কারণে উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর আগে বেশ কয়েক দফায় উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা যায়নি।
খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর আতাহার আলী বাংলানিউজকে বলেন, বাস্তাহারা কলোনীতে সংঘর্ষের ঘটনায় আমিসহ ১৪ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) রাশিদুল ইসলাম বলেন, সংঘর্ষের ঘটনার পর গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান স্থগিত করেছে। পুলিশ বাস্তহারা কলোনী থেকে সরে গেছে।
এমআরএম