ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২, ২৯ আগস্ট ২০২৫, ০৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

সিলেটে গণঅভ্যুত্থানে মামলা: তদন্তকালে ২৮ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২:৩৫, আগস্ট ২৯, ২০২৫
সিলেটে গণঅভ্যুত্থানে মামলা: তদন্তকালে ২৮ জনকে অব্যাহতির সুপারিশ

সিলেট: ২০২২ সাল থেকে যুক্তরাজ্যের ওয়েলস শহরে সপরিবারে বসবাস করে আসছেন সাংবাদিক মনোয়ার জাহান চৌধুরী। দৈনিক সময়ের আলো ও দ্য এডিটরসহ স্থানীয় ও জাতীয় স্বনামধন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমে কাজ করেছেন তিনি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর দায়েরকৃত একটি মামলায় এজাহারে তাকে ৪৪ নম্বর আসামি করা হয়েছে।

ওই মামলায় মনোয়ার জাহান চৌধুরীর মতো সিলেটের বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী, প্রধান প্রকৌশলী, ব্যাংক ম্যানেজার, পেশকার, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী, এমনকি হযরত শাহজালাল (রা.) মাজার কমিটির সেক্রেটারিকেও আসামি করা হয়েছে। এভাবে অসংখ্য মামলায় প্রকৃত অপরাধীদের সঙ্গে জড়িয়ে সাংবাদিক, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী ছাড়াও নিরীহ মানুষকে আসামি করা হয়েছে।   

মামলার বাদী শেখ শফিউর রহমান কায়েছ এজাহারে উল্লেখ করেন, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই ছাত্র আন্দোলনে তিনি দেশীয় অস্ত্র ও বিস্ফোরক দ্রব্য দিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করেন। কিন্তু বাস্তবে মনোয়ার জাহান চৌধুরী তখন ছিলেন লন্ডনে। উল্লেখিত ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ।

পুলিশের তদন্তে ঘটনার সঙ্গে দৃশ্যমান কোনো সম্পৃক্ততা না পাওয়ার বিষয়টি প্রমাণ হওয়ায় মামলার আসামি থেকে ২৮ জনকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করেছে এসএমপি।

সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়াউল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, নির্দোষ কেউ যেন মামলায় হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের নির্দেশনা রয়েছে।  

পুলিশ সূত্র জানায়, ছাত্র আন্দোলন সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর তদন্তকালে কারও সম্পৃক্ততা প্রমাণিত না হলে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৭৩-এ ধারা মোতাবেক তাকে আদালতের কাছে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হচ্ছে।  

জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর দায়ের করা মামলাগুলোর মধ্যে কোতোয়ালি থানায় করা প্রথম মামলা দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু করেছে এসএমপি।  

তদন্ত সূত্র জানায়, বাদী শেখ শফিউর রহমান কায়েছের করা ওই মামলায় ২৮ জন আসামি আছেন, যাদের ঘটনার সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তাদের সবাইকে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৭৩-এ ধারা মোতাবেক এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। অন্য আসামিদের যাচাই বাছাই করে দেখা হচ্ছে। এ রকম আরও কয়েকটি মামলায়ও নির্দোষ ব্যক্তিদের আদালতে অব্যাহতির আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

অব্যাহতির সুপারিশপ্রাপ্ত ২৮ জন হলেন- সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ, স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুর রহমান, নর্থইস্ট ইউনিভার্সিটি সিলেটের সহকারী অধ্যাপক মো. সাহাদাৎ হোসেন পারভেজ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম ফারুক হোসেন, সহকারী প্রকৌশলী মো. আবুর হাসান শোভন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. মাহমুদুল হাসান, জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসের ভারপ্রাপ্ত পেশকার সাধন কুমার চাকমা, সহকারী প্রেস অফিসার গোলাম মোস্তফা লিটন, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের শাহজালাল উপশহর শাখা ম্যানেজার ও সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যোতি লাল গোস্বামী, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের সুনামগঞ্জ ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ও সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. গোলাম আজাদ, সিলেট সিটি করপোরেশনের সুপারভাইজার কাওছার আহমদ, সেবুল অধিকারী ও চয়ন দাশ, সিলেট সিটি করপোরেশনের সদ্য সাবেক প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান, অফিস সহায়ক মোফাচ্ছর হোসেন, ফাহিম আহমদ, জুনায়েদ আহমদ, জান্নাতুল ইসলাম, বাজার আদায়কারী আনোয়ারুল হক, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর জিকরুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আব্দুল হাই আজাদ, হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারের প্রধান খাদেম ও মাজার পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি সামুন মাহমুদ খাঁন, লন্ডনপ্রবাসী সাংবাদিক মনোয়ার জাহান চৌধুরী, ব্যবসায়ী সৈয়দ ইফতেকার আহমদ এলিছ, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. খালেদুজ্জামান খালেদ, সিম্ফনি মোবাইল ফোন কোম্পানির ম্যানেজার মো. এমরান হোসেন তানিম, দোকানদার হেদায়েত হোসেন খোকন ও ইউসুফ হোসেন।  

সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক মামলা হয়েছে। আসামিও অসংখ্য। তবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলন নিয়ে মামলা বাণিজ্য করতে শুরু করে একটি চক্র। এ চক্রটি যেন কোনো নির্দোষ মানুষকে হয়রানি করতে না পারে, সেজন্য আমরা কাজ শুরু করেছি। এসব মামলার তদন্ত করে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৭৩ এ ধারা মোতাবেক মামলায় সংশ্লিষ্ট নয়, এমন মানুষকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায় এসএমপির কোতোয়ালি থানাধীন ১নং মামলা হতে ২৮ জন নিরীহ, নির্দোষ মানুষকে আসামি হতে অব্যাহতি দিতে আদালতে আবেদন করা হয়েছে।  

তিনি আরও বলেন, ওই মামলার বাদী শেখ শফিউর রহমান কায়েছের সঙ্গে কথা বলেও আমরা মামলার ঘটনার সঙ্গে ২৮ জনের কোনো সম্পৃক্ততা পাইনি। এ ২৮ জনের মধ্যে বেশিরভাগই হলেন বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাই আমরা তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে আদালতে সুপারিশ করেছি। পরবর্তীতে আদালত যাচাই-বাচাই করে দেখবেন। এরকম আরও কয়েকটি মামলার নিরীহ আসামিদের অব্যাহতি প্রদানের আবেদন আদালতে দাখিলের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।  

গত বছরে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে এসএমপিতে যোগ দেওয়া কমিশনার মো. রেজাউল করিমের তত্ত্বাবধানে মামলাটির তদন্তকাজ সম্পন্ন হয়েছে। সম্প্রতি তিনি পদোন্নতি পেয়েছেন। সিলেট ছেড়ে ঢাকায় নতুন কর্মস্থলে যোগ দেবেন।  

গত বছরের জুলাই আগস্টে আন্দোলনের পর সিলেট জেলা ও মেট্টোপলিটন এলাকার ছয়টি থানায় ১৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরমধ্যে ১৬টি হত্যা ও ১২০টি বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়ের করা হয়। তবে হত্যা মামলাগুলোর পাঁচজন বাদী নিজেরা কিছুই না জানায় প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। কেননা, সহযোগিতার নাম করে স্বাক্ষর এতে এসব হত্যা মামলার কয়েকটিতে বাদীর আত্মীয়-স্বজনদেরও জড়ানোর অভিযোগ রয়েছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, জেলা পুলিশের আওতাধীন বিভিন্ন থানায় ৪৪টি এবং মহানগরীর ৬টি থানায় ৯২ মামলা দায়ের করা হয়। জেলায় মামলাগুলোতে আসামি সাড়ে ৯ হাজার জন। তন্মধ্যে এজাহার নামীয় ২ হাজার ৩২১ জন এবং অজ্ঞাত ৭ হাজার ১৮৫ জন। বিপরীতে ১০২ জন গ্রেপ্তার হন।  

এসএমপিতে দায়ের করা ৯২টি মামলায় আসামি ২০ হাজার ২২২ জন। এরমধ্যে এজাহার নামীয় ৬ হাজার ৪৮২ জন এবং অজ্ঞাত ১৩ হাজার ৭৪০ জন এবং ১৭৭ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

এনইউ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।