ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

বিলুপ্তির পথে ভোলার সিনেমা হল, চালু আছে একটি

ছোটন সাহা, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৩৫, আগস্ট ২৮, ২০২৫
বিলুপ্তির পথে ভোলার সিনেমা হল, চালু আছে একটি সিনেমা হল

ভোলা: ইউটিউব, ফেসবুক আর আধুনিক প্রযুক্তির কাছে হার মেনেছে সিনেমা হল। শুধু তাই নয়, হলগুলোতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা, ব্যবস্থাপনা ও উন্নত বসার ব্যবস্থা না থাকায় সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন দর্শকরা।

 

অন্যদিকে লোকসান গুণতে গুণতে হল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন মালিকরা। ফলে ভোলার সিনেমা শিল্পে এখন ধস নেমেছে। জমজমাট সিনেমা ব্যবসা মুখ থুবড়ে পড়েছে।

এক সময় জেলায় ২৭টি সিনেমা হল থাকলেও বর্তমানে চালু আছে মাত্র একটি। সেটিও দর্শকশূন্যতায় খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। যেকোনো সময় সেটিও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এদিকে বন্ধ হওয়া হলগুলোর স্থানে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন, মার্কেট, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও দোকানপাট। লোকসানের বোঝা সামলাতে বাধ্য হয়ে এগুলো বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকরা।

অনলাইন প্ল্যাটফর্মে ছবি মুক্তির কারণে দর্শকরা ক্রমান্বয়ে হল বিমুখ হয়েছেন বলে জানা গেছে। ফলে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেও বছরের পর বছর লোকসান গুণতে হচ্ছে হল মালিকদের।

হল মালিক-কর্মচারী ও স্থানীয়দের তথ্যমতে, আশির দশক থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ভোলায় সিনেমা ব্যবসা ছিল জমজমাট। ওই সময় সাত উপজেলায় একের পর এক গড়ে উঠেছিল ২৫টি সিনেমা হল।

হলগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য— সদর উপজেলায় অবসর, রূপসি ও অনুপম; বোরহানউদ্দিনে রাজমনি, চিত্রমনি ও রূপালি; দৌলতখানে বিউটি, আনন্দ, ডায়মন্ড ও অন্তরা; লালমোহনে লালমনি, বিনোদন, মেঘনা, মধুচ্ছন্দা ও সংগীতা; তজুমদ্দিনে স্বাধীন, শশী ও সখী; চরফ্যাশনে সাগরি, ফ্যাশন, সাগর, সবুজ, দুলারি ও রঙ্গিলা এবং মনপুরায় সনি ও ঝলক সিনেমা হল। বর্তমানে চালু রয়েছে ভোলা সদরের রূপসি সিনেমা হল। বাকি সব বন্ধ হয়ে গেছে।

বন্ধ অবসর সিনেমা হলের স্থানে এখন মার্কেট নির্মাণ করা হয়েছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে অবসর সেন্টার। সিনেমা বন্ধ হলেও মার্কেট জমে উঠেছে।

অবসর সিনেমা হলের স্টাফ সামসুদ্দিন বলেন, দর্শক নেই, লোকসান হচ্ছে। তাই মালিকপক্ষ হল বন্ধ করে দিয়েছে।

জানা গেছে, বন্ধ হওয়া বেশির ভাগ সিনেমা হল এখন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হচ্ছে। অনুপম সিনেমা হলের স্থানে গড়ে উঠেছে বহুতল ভবন, চিত্রমনির জায়গায় গোডাউন, শশীতে মার্কেট, সাগরিতে ডায়াগনস্টিক সেন্টার, সবুজে খাবারের হোটেল। এছাড়া রূপালি সিনেমা হল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

অবসর সিনেমা হলের মালিক রাজিব চৌধুরী বলেন, প্রতিদিনই লোকসান গুণতে হচ্ছে। লোকসানের মূল কারণ পাইরেসি। লাখ টাকা দিয়ে নতুন ছবি এনে হলে দেখানোর আগে সেটি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে যায়। দর্শকরা ঘরে বসেই নতুন ছবি দেখে ফেলেন, তাই সিনেমা হলে আসেন না।

চরফ্যাশন উপজেলার সবুজ সিনেমা হলের মালিকপক্ষের পান্না বলেন, গত ঈদ থেকে হলটি বন্ধ করা হয়েছে। অনেক লোকসান হচ্ছে। হলে দর্শক নেই। যা খরচ হয়, তা উঠছে না।

দর্শক সোহেল, মঞ্জু, রতন ও ইশতিয়াক জানান, আগে বন্ধুদের নিয়ে দল বেধে সিনেমা দেখতে যেতাম। কিন্তু এখন ইউটিউবে সার্চ করেই সিনেমা দেখে ফেলি, তাই সিনেমা হলে যাই না।

কয়েকজন হল মালিক বলেন, হলে যদি বলিউড সিনেমা মুক্তি দেওয়া যায়, দর্শক বাড়তে পারে। তবে দর্শক না এলে আবারও লোকসান গুণতে হবে, যেমনটা বাংলা ছবিতে হচ্ছে।

একমাত্র চালু থাকা রূপসি সিনেমা হলের ম্যানেজার মো. ফিরোজ বলেন, সিনেমা চালাতে গিয়ে প্রতিদিন আমাদের খরচ হচ্ছে ১২ হাজার টাকা, কিন্তু শো চালিয়ে উঠছে মাত্র ৬-৮ হাজার টাকা। ১৮-২০ দর্শক দিয়ে হল চালাতে গিয়ে খরচ উঠছেই না, বরং প্রতিদিনই লোকসান হচ্ছে। ”

অন্যদিকে দর্শকরা বলেন, পরিচালকরা যদি সামাজিক ছবি নির্মাণ করেন, যেগুলো পরিবার নিয়ে দেখা যায়, এবং এগুলো পাইরেসি না হয়, তাহলে মানুষ আবার হলমুখী হবে। এতে মালিকরাও লাভবান হবেন।

এ বিষয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট নজরুল হক অনু দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, কালের আবর্তে সিনেমা হলের এমন দুর্দশা। এ শিল্পকে পুনরুদ্ধার করা অনেক কঠিন। তবে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ থাকলে সিনেমা শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব।

এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।