ঢাকা, বুধবার, ১২ ভাদ্র ১৪৩২, ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

সারাদেশ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা, রেজিস্ট্রার নিয়োগে ইউজিসির আপত্তি

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:০২, আগস্ট ২৭, ২০২৫
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা, রেজিস্ট্রার নিয়োগে ইউজিসির আপত্তি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়

ময়মনসিংহ: নানা কারণে প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা বিরাজ করছে ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। এতে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সিএসই (কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমানকে। ফলে অদক্ষ প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

বিষয়টিকে নিয়মের ব্যত্যয় হিসেবেই দেখছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। সম্প্রতি ইউজিসির বাজেট অ্যাসেসমেন্ট দল ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেট মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বিষয়টি উল্লেখ করে আপত্তি জানিয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় আইনের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে  কমিশনকে জানানোর সুপারিশ করেছে ইউজিসির প্রতিনিধি দল। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সিন্ডিকেট সদস্যদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিযোগ, প্রশাসনিক অদক্ষতার কারণে নিয়মিত সিন্ডিকেট সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। প্রতি তিন মাস পর পর সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। নিয়মিত হচ্ছে না অর্থ কমিটির সভাও। মাসের পর মাস রেজিস্ট্রার দপ্তরে শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিভিন্ন আবেদন ফাইল পড়ে আছে। শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের প্রায় এক বছর পেরিয়ে গেলেও কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে।  

হচ্ছে না জনবল ছাড়। এ ছাড়া ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডে যুক্ত শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে প্রায় এক বছর আগে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ফলে অভিযোগ উঠেছে, ওই চক্র এখনো বহাল তবিয়তে প্রভাব বিস্তার করছে।
অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি সাবেক ছাত্রলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন স্বপনকে রেজিস্ট্রার দপ্তরে প্রাইজপোস্টিং দেওয়া হয়েছে।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, অদক্ষ প্রশাসনের সুযোগ নিচ্ছে ফ্যাসিবাদের সুবিধাভোগী একটি চক্র। তাদের পরামর্শেই সম্প্রতি এক কর্মকর্তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।  

অভিযোগ অনুযায়ী, ভবিষ্যতে আইনি সুবিধা নিশ্চিত করার জন্যই এমন পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে কলকাঠি নেড়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার এক নেতা।

কিছু শিক্ষক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বছর পেরিয়ে গেলেও শিক্ষক ও কর্মকর্তা নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। অথচ অল্প সময়ের নোটিশে পরীক্ষা আহ্বান করে দুই জন কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। যাদের নিয়োগ দেওয়ার গুঞ্জন রয়েছে, তারা জুলাই গণঅভ্যুত্থানবিরোধী পরিবারের সদস্য। এর আগেও একই চক্র ইমাম নিয়োগে কেলেঙ্কারি ঘটিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ পরিচালক অধ্যাপক ড. রাজু আহমেদ বলেন, অর্থ কমিটির সভা আহ্বান প্রশাসনিক কাজ। এতে আমার কোনো ক্ষমতা নেই। তাছাড়া প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা সৃষ্টির মতো কোনো বিষয় আমার জানা নেই।

অভিযোগ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মিজানুর রহমান বলেন, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তেই আমি দায়িত্ব পালন করছি। তবে প্রশাসনিক কাজে স্থবিরতা চলছে-এটি বলা যাবে না। বরং দীর্ঘস্থায়ী স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠার জন্য আমরা কাজ করছি। আগামী ২৮ আগস্ট সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে।

যথাসময়ে সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা সম্ভব হয়নি স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, সিন্ডিকেট সভার এজেন্ডা নির্ধারণের জন্য কিছুটা সময় লেগেছে। তবে অর্থ কমিটির সভা এরই মধ্যে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নিজের নিয়োগে ইউজিসির আপত্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউজিসির কিছু আপত্তি থাকার কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে আছে। তবে কিছু নিয়োগে অনাপত্তি থাকায় সেগুলো চলমান রয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, রেজিস্ট্রার পদে শিক্ষক থাকতে পারবে না, এটি বাধ্যতামূলক নয়। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই এমনটি আছে। মূলত পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে প্রশাসনিক কাজ গতিশীল করার জন্যই তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো বিষয়ে বাধাগ্রস্ত হলে ভিন্ন চিন্তা করা যাবে।

তবে এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ডা. মাহাবুবুর রহমান লিটন। তিনি বলেন, ইউজিসির আপত্তির বিষয়টি আমি শুনেছি। মূলত প্রশাসনিক কর্মকর্তা দিয়েই প্রশাসন পরিচালনা করা উচিত। না হলে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে হতাশা তৈরি হয়। একই সঙ্গে কর্মকর্তারা পদোন্নতি নিয়েও শঙ্কায় ভুগতে পারেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ভিসি প্রফেসর ড. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, গত ১৭ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি সেক্টরে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে কর্মকাণ্ডে গতি আনতে চেষ্টার পরও অগ্রগতি হচ্ছে না। প্রাইজপোস্টিংয়ের অভিযোগ সঠিক নয়। যারা এতদিন কাজ না করে বসে ছিলেন, তাদের কাজের আওতায় আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। কারও কারও বিরুদ্ধে মামলা আছে এবং তদন্ত চলছে। প্রতিবেদন পেলেই তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসআই
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।