ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৬ ভাদ্র ১৪৩২, ২১ আগস্ট ২০২৫, ২৬ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

খানাখন্দে ভরা খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক, সীমাহীন দুর্ভোগ

মাহবুবুর রহমান মুন্না, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:২৭, আগস্ট ২১, ২০২৫
খানাখন্দে ভরা খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক, সীমাহীন দুর্ভোগ খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক

সড়কে বৃষ্টির পানি-কাদায় একাকার। অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত।

বেশির ভাগ স্থানে পিচঢালাই নেই। বৃষ্টিতে গর্তে পানি জমে গেছে। খানাখন্দের কারণে যানবাহন চলছে হেলেদুলে। সড়কে তৈরি হওয়া বড় বড় গর্তের কারণে প্রায়ই ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। উল্টে যাওয়া যানবাহন কখনো কখনো সড়ক থেকে পাশের বাড়িঘরের ওপর গিয়ে পড়ছে। এতে ঘটছে হতাহতের ঘটনা। খুলনা-সাতক্ষীরা জাতীয় মহাসড়কে এমন দৃশ্য প্রতিদিনের। ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৩ কিলোমিটার সড়ক পুনর্নির্মাণের মাত্র ৫ বছরে এমন দশা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, খানাখন্দে ভরা মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় বৃষ্টির পানি জমে তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। উঁচু-নিচু সড়কে যানবাহনগুলো চলছে হেলেদুলে। গর্তে পড়ে কোথাও ইজিবাইক, ট্রাক ও মাহেন্দ্র কাত হয়ে পড়ে আছে, কোথাও ধীরগতিতে চলাচল করা যানবাহনে তৈরি হয়েছে যানজট। খানাখন্দ মেরামতে সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ইট ফেলে রাখা হয়েছে। মহাসড়কটির জিরোপয়েন্ট এলাকা, নিচখামার রেলক্রসিংয়ের দুপাশে দুই কিলোমিটার খুব খারাপ অবস্থা। বড় বড় গর্ত। এ ছাড়া হোগলাডাঙ্গায়, গুটুদিয়া ও ডুমুরিয়া বাজার, গোলনা, টিপনা ও বালিয়াখালি সংলগ্ন বিভিন্ন জায়গা এবং কাঁঠালতলা থেকে চুকনগর বাজারের মধ্যে বড় বড় অংশ উঁচু-নিচু ও এবড়োখেবড়ো হয়ে গেছে। চলমান বৃষ্টিতে অনেক গর্তে পানি জমে আছে।

আব্দুল্লাহ নামে এক পরিবহন চালক বলেন, এই সড়কে এখন আর চলাচল করা সম্ভব না। গর্তে পড়ে প্রায় দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে। আমরা এই সড়কটি দ্রুত মেরামতের দাবি জানাচ্ছি।

ডুমুরিয়া উপজেলা শ্রমিকদলের সভাপতি ফরিদ হোসেন সেখ বলেন, রাস্তাটির বেহাল অবস্থায় গুরুতর রোগী আসা-নেওয়ার সময় সমস্যাটা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। সড়কটি সংস্কার না হওয়া এবং নিয়মিত ভারী যানবাহন চলাচলের ফলে বিভিন্ন অংশ ভেঙে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে যান চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে, বাড়ছে দুর্ঘটনার ঝুঁকি। বিগত সরকারের আমলে এই সড়কটি মেরামতে কোটি কোটি টাকা লুট হয়েছে। কিন্তু মানুষের কোনো উপকার হয়নি। মাত্র ৫ বছরেই সড়কের হয়েছে নরক অবস্থা।

নিরাপদ সড়ক চাই ডুমুরিয়া উপজেলা শাখার সভাপতি খান মহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কটি এখন মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সড়কটির কোথাও পিচঢালাই আছে, কোথাও নেই। খানাখন্দে ভরা সড়কে বৃষ্টির পানি-কাদায় একাকার। দিন দিন এসব খানাখন্দ বড় আকার ধারণ করছে। তাতে প্রতিদিন উল্টে পড়ছে যানবাহন। আহত ও নিহত হচ্ছেন যাত্রীরা। দীর্ঘদিনের অবহেলা ও দুর্ভোগের চিত্র সামনে আনতে আমরা সড়কে ধানের চারা রোপণ কর্মসূচি হাতে নিয়েছি। যাতে কর্তৃপক্ষের নজরে আসে।

তিনি অভিযোগ করেন, এ সড়ক নির্মাণে রাজনীতিবিদ, ঠিকাদার ও সড়ক জনপদ বিভাগের কর্মকর্তাদের ত্রিপক্ষীয় আঁতাতের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা দুর্নীতি হয়েছে। যে কারণে সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের দায়সারা কাজ হয়েছে। এতে একদিকে যেমন কাঙ্ক্ষিত উদ্দেশ্য অর্জনকে ব্যাহত হয়েছে, অন্যদিকে জাতীয় সম্পদের বিপুল পরিমাণ অপব্যবহার ও অপচয় হয়েছে।

খুলনা সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কটির দৈর্ঘ্য ৬৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে নগরীর জিরো পয়েন্ট থেকে ডুমুরিয়ার চুকনগর-আঠারোমাইল বাজার পর্যন্ত প্রায় ৩৩ কিলোমিটার খুলনা জেলার মধ্যে। বাকি অংশ সাতক্ষীরা জেলার মধ্যে। ২০১৮ সালে মহাসড়কের প্রশস্তকরণ ও পুনর্নির্মাণ কাজ শুরু হয়। খুলনা অংশের ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির আগে সড়কটির প্রশস্ততা ছিল ১৮ ফুট। সংস্কার করে সেটিকে ৩৬ ফুট করা হয়। তৎকালীন প্রভাবশালী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘মোজাহার এন্টারপ্রাইজ’ প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুনে শেষ করে।

নাগরিক সমাজের অভিযোগ, আগের টেন্ডারে নিম্নমানের কাজ হওয়ায় অল্প সময়েই খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের অবস্থা আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। প্রায় এক বছর ধরে সড়কটির বেশ কিছু অংশ সম্পূর্ণভাবে ব্যবহারের অযোগ্য হয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে মানুষ।

সড়ক বিভাগ সংশ্লিষ্টরা জানান, পদ্মা সেতু চালুর পর খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। বিশেষ করে এ সড়ক দিয়ে বেনাপোল ও ভোমরা বন্দরগামী পণ্য নিয়ে ভারী যানবাহনের চাপ বেড়েছে। সড়কটির সর্বোচ্চ ওজন নেওয়ার সক্ষমতা সাড়ে ২২ মেট্রিক টন হলেও এ দুই বন্দর থেকে ৫০ মেট্রিক টনের যান চলছে নিয়মিত। চাপ নিতে না পারায় দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ব্যস্ততম সড়কটি।

খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. তানিমুল হক বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কটির ৬টি স্থানে সংস্কার না করলেই নয়। এর মধ্যে জিরোপয়েন্ট ও চুকনগর এলাকায় মঙ্গলবার (১৯ আগস্ট) কাজ শুরু করেছি। বাকি ৪টি স্থানে কাজ না করলে ভোগান্তি রয়েই যাবে।

এমআরএম/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।