কুড়িগ্রাম-চিলমারী রেলপথে রমনা লোকাল ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। রোববার (১৭ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে উলিপুরের তবকপুর ইউনিয়নের রসূলপুর এলাকায় চিলমারীর বালাবাড়ি রেল স্টেশনের উত্তরে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়।
এরপর ট্রেনটি উদ্ধারে লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে আসা রিলিফ ট্রেন (টুলস ভ্যান) উলিপুরের পাঁচপীর রেলস্টেশন পার হতেই বিকেল সাড়ে ৪টায় সেটিও লাইনচ্যুত হয়। বিকেল ৫টায় পাওয়া খবরে রিলিফ ট্রেনটি উদ্ধারে কাজ করছিলেন রেলকর্মীরা।
রমনা লোকাল ট্রেনের পরিচালক (গার্ড) রিয়াজুল ইসলাম এবং উদ্ধারকারী ট্রেনের পরিচালক আনোয়ার হোসেন পৃথকভাবে দুটি ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
রমনা লোকাল ট্রেনের পরিচালক রিয়াজুল ইসলাম বলেন, পার্বতীপুর থেকে চিলমারীর রমনা স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে আসা রমনা লোকাল ট্রেনটি দুপুর ১২টার দিকে বালাবাড়ি রেল স্টেশনে পৌঁছার আগ মুহূর্তে রসূলপুর নামক স্থানে লাইনচ্যুত হয়। গার্ড ব্রেকের বগিটির চারটি চাকা লাইনচ্যুত হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে খবর দেওয়া হয়েছে। ট্রেনটি উদ্ধারের জন্য টুলস ভ্যান ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছে। ’ ট্রেনটি দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে রমনা স্টেশন থেকে রংপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল বলে জানান তিনি।
ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার কারণ প্রশ্নে পরিচালক বলেন, উলিপুরের পাঁচপীর স্টেশন থেকে চিলমারীর রমনা স্টেশন পর্যন্ত রেল লাইনে পাথর নেই। ট্রেন অনেক কম গতিতে চলে। আজ ঘণ্টায় মাত্র ১২ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চালানো হয়েছে। তারপরও লাইনচ্যুত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন।
এদিকে লাইনচ্যুত রমনা লোকাল ট্রেনটি উদ্ধারে লালমনিরহাট থেকে ছেড়ে আসা রিলিফ ট্রেনটি ঘটনাস্থলে পৌঁছার আগেই পাঁচপীর রেল স্টেশন পার হয়ে লাইনচ্যুত হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৪টায় উদ্ধারকারী ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়।
উদ্ধারকারী ট্রেনের পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, সাতটি বগি নিয়ে উদ্ধারকারী ট্রেনটি রমনা লোকাল ট্রেন উদ্ধারের উদ্দেশে যাওয়ার পথে পাঁচপীর ও উলিপুর রেলস্টেশনের মাঝামাঝি স্থানে লাইনচ্যুত হয়েছে। এটি উদ্ধারে কাজ শুরু হয়েছে। রিলিফ ট্রেনটি উদ্ধার হলে রমনা লোকাল ট্রেন উদ্ধারের উদ্দেশে যাব। যে স্থানে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়েছে সেখানে রেল লাইনে কোনো পাথর নেই বলে জানান এই পরিচালক।
দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘ রেলপথের লাইনে কোনো পাথর নেই। বেশিরভাগ স্থানে লাইনের স্লিপার মাটির নিচে দেবে আছে। লাইনের নিচে পাথরের পরিবর্তে মাটি। দুই লাইনের মধ্যবর্তী স্থানে মাটি আর ঘাস। পুরো রেলপথ মাটির ওপর দিয়ে বিছানো।
রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাঁচগাছী রেল স্টেশন থেকে রমনা স্টেশন পর্যন্ত রেলপথে পাথর নেই। পুরো রেলপথটি ঝুঁকিপূর্ণ। ঝুঁকি বিবেচনায় এই রেলপথে ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই গতি নিয়েও ট্রেন চলতে পারে না। ট্রেন চলার সময় দুই দিকে দোলে।
লালমনিরহাট রেল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পাঁচপীর রেল স্টেশন থেকে রমনা রেল স্টেশন পর্যন্ত রেলপথের সংস্কারের জন্য এক বছরেরও বেশি সময় আগে দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। বিশ্বাস কনস্ট্রাকশন নামক একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময় পার হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শুধু মাটি ভরাট আর কয়েকটি রেল সেতু মেরামত কাজ হলেও রেল লাইন, স্লিপার পরিবর্তন কিংবা পাথর ফেলার কাজ হয়নি। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজ বন্ধ রয়েছে। ফলে রেলপথটি ঝুঁকিপূর্ণ রয়ে গেছে।
তিস্তা থেকে চিলমারী পর্যন্ত রেলপথের দায়িত্বে থাকা লালমনিরহাট রেল বিভাগের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পিডব্লিউআই) বজলুর রহমান বলেন, এক বছর আগে প্রায় ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে রেলপথ সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছিল। রেলপথটির ওয়ার্ক পর্সনের (মাটি ভরাট ও ব্রিজের) কাজ হলেও ওয়ে পর্সনের (লাইন, পাথর ও স্লিপার) কাজ হয়নি। রেলপথটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এই পথে ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপরও আজ ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে কারণ জানা যাবে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই রেলপথের এক রেল কর্মচারী বলেন, এই রেলপথটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। শুধু আবেগে এই পথে ট্রেন চালানো হচ্ছে। জরুরি সংস্কার ছাড়া এভাবে ট্রেন চলতে থাকলে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ’
সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক আবু হেনা মোস্তফা আলমকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
আরএ