সাতক্ষীরা: সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি ইউনিয়নের তেঁতুলিয়ায় মরিচ্চাপ নদীর প্রায় দুইশ ফুট বেড়িবাঁধ বিলীন হয়ে গেছে।
এতে তেঁতুলিয়া হামিউচ্ছুন্নাহ কওমিয়া ও হাফিজিয়া এতিমখানা মাদরাসার একটি কক্ষ নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে।
ভাঙন অব্যাহত থাকায় স্থানীয় চর জামে মসজিদ ও তেঁতুলিয়া হামিউচ্ছুন্নাহ কওমিয়া ও হাফিজিয়া এতিমখানা মাদরাসাসহ অন্তত ১০টি স্থাপনা নদীগর্ভে চলে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। গোটা এলাকাজুড়ে বিরাজ করছে ভাঙন আতঙ্ক।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় তিন মাস আগে বেড়িবাঁধে ধস দেখা দিলে বিষয়টি পাউবো কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে সংশ্লিষ্ট অংশসহ পাশাপাশি আরও দুটি স্থানে ধস দেখা দেয়।
সরেজমিন দেখা যায়, তেঁতুলিয়ার প্রায় দুইশ ফুট বেড়িবাঁধ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া পৃথক তিনটি অংশে আরও প্রায় দেড়শ ফুটের মতো বাঁধে ধস লেগেছে। গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে মসজিদের পাশে ভাঙন রোধে ধসে যাওয়া অংশে বাঁশ পুঁতে এবং বাঁধের অবশিষ্ট অংশ জিও শিট দিয়ে ঢেকে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া বিলীন হওয়া বাঁধের পাশে অবস্থিত ভবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তেঁতুলিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম জানান, বুধবার দুপুরের জোয়ারে আকস্মিকভাবে মসজিদ ভবনের পাশ থেকে প্রায় ১০/১২ ফুট বাঁধ মরিচ্চাপ নদীতে বিলীন হয়ে যায়। পরে রাতের জোয়ারে অবশিষ্ট বাঁধের আরও প্রায় সাত/আট ফুট একইভাবে নদীতে বিলীন হয়ে ভাঙন মসজিদের একেবারে কাছে পৌঁছে যায়। আড়াআড়িভাবে প্রায় ১৮-২০ ফুট বাঁধ নদীতে বিলীন হলেও লম্বায় তা প্রায় দুইশ ফুটের বেশি।
একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম সরদার জানান, দুপুরের জোয়ারে আরও ভাঙনের শঙ্কা থেকে তারা শতাধিক বাঁশ কিনে আনেন। একপর্যায়ে পাউবোর কাউকে না পেয়ে স্থানীয় গ্রামবাসী স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বিলীন হওয়া অংশে বাঁশ পুঁতে ভাঙন ঠেকানোর কাজ শুরু করেছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, মসজিদ ও মাদরাসা কমিটির সদস্যসহ এলাকাবাসী প্রায় তিন মাস আগে পাউবোর কর্মকর্তাদের সেখানকার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কথা লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন। বাঁধের ভাঙন ঠেকানোর পাশাপাশি মসজিদ, মাদরাসা ও এতিমখানাসহ আশপাশের স্থাপনাগুলো রক্ষার আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু ‘দেখবেন’ বলে জানালেও পরে একটি বারের জন্যও পাউবোর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী খোঁজ-খবর নেননি।
ভাঙনের মুখে থাকা মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মিজানুর রহমান জানান, এক বছর আগে মরিচ্চাপ নদী পুনঃখনন করা হয়। কিন্তু তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা পাউবোর কর্মকর্তারা ঠিকাদারের সঙ্গে মিলে একটি ইটভাটার মালিকসহ কয়েকজন বিত্তবান ব্যক্তিকে সুবিধা দিতে গিয়ে ম্যাপ অনুসরণ করেননি। ইচ্ছাকৃতভাবে পুনঃখনন কাজ পশ্চিম দিকে সরিয়ে দেওয়া হয়। ফলে তারা একের পর এক ভাঙনের মুখে পড়ছেন। তাদের অভিযোগ আমলে নিয়ে তিন মাস আগে কাজ শুরু করলে এতগুলো স্থাপনা নদীতে বিলীনের ঝুঁকিতে পড়তো না।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পোল্ডারের দায়িত্বশীল উপ-সহকারী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানান, সরকারি জমির ওপর অবৈধভাবে স্থাপনাগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। তাই অবৈধভাবে নির্মিত কোনো স্থাপনা রক্ষার জন্য তাদের কোনো বরাদ্দ থাকে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কোনো বরাদ্দ না দেওয়ায় তিন মাস আগে অভিযোগ পেয়েও তারা কাজ করতে পারেননি।
এর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাশকিয়া জানান, ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাৎক্ষণিকভাবে ৫০টি জিও ব্যাগ স্থানীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বালুভর্তি করে জিও ব্যাগগুলো ধসে যাওয়া অংশে ফেলে মসজিদের ভাঙন রোধের চেষ্টা চালানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার থেকে কাজ শুরু করা হবে।
তবে তিন মাস আগে স্থানীয়দের লিখিত অভিযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, আমি দুই মাস আগে যোগদান করেছি।
শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় মিলন হোসেন জানান, কাজ এখনো শুরু হয়নি, পাউবো জিও ব্যাগ নিয়ে আসছে। কাজ শুরুর প্রক্রিয়া চলছে।
আশাশুনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায় জানান, বাঁধ বিলীন হওয়ার খবর পেয়ে তিনি বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানানোর পর তারা কার্যক্রম শুরু করেছেন বলে তাকে জানিয়েছেন।
এসআই