জামালপুর: গারো পাহাড়ে বন্য হাতি ও মানুষের দ্বন্দ্ব নতুন নয়। বন ধ্বংস, অবকাঠামো উন্নয়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে হাতির আবাসস্থল সংকুচিত হচ্ছে।
জামালপুরের বকশীগঞ্জে গত দুই সপ্তাহ ধরে অবস্থান করছে অর্ধশতাধিক বন্য হাতির দুটি দল। সদ্য রোপণ করা ধানক্ষেত, সবজি ও ফসল নষ্ট করছে তারা। ফলে স্থানীয়দের রাত কাটছে আতঙ্কে ও নির্ঘুম।
ধানুয়া কামালপুরের সাতানি পাড়া, সোমনাত পাড়া, দিঘলা কোনাসহ কয়েকটি পাহাড়ি গ্রামে প্রতিদিন বিকেল থেকে ভোর পর্যন্ত খাবারের খোঁজে হাতির দল সমতলে নেমে আসে। স্থানীয়রা ঝুঁকি নিয়ে আগুন জ্বালিয়ে ও সাইরেন বাজিয়ে তাড়ানোর চেষ্টা করলেও খুব একটা ফল হচ্ছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা মাসুদ মিয়া বলেন, বিকেল হলেই হাতি পাহাড় থেকে নামে। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে এমন অবস্থা। ধান লাগানোর পরই হাতিরা এসে খেয়ে ফেলে, তারপর বাড়ির ভেতর ঢুকে পড়ে।
সাতানিপাড়ার ইয়াকুব আলী জানান, বন বিভাগের সহায়তায় ১০ জনের একটি ‘এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিম’ গঠন করা হয়েছে। তিনি বলেন, রাত-দিন আমরা হাতির গতিবিধি নজরে রাখি। তবু ফসল রক্ষা করা যাচ্ছে না, আর আশপাশের দশ গ্রামের মানুষ আতঙ্কে আছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, স্থায়ী সমাধান না হলে বড় ধরনের সংঘাত ঘটতে পারে। ধানুয়া-কামালপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোলাপ জামাল বলেন, ২৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই সমস্যা চলছে। আমরা চাই সরকার দ্রুত স্থায়ী ব্যবস্থা নিক।
জামালপুর বন বিভাগের ডুমুরতলা বিট কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, চারটি এলিফ্যান্ট রেসপন্স টিমের তৎপরতায় ঘরবাড়ির বড় ক্ষতি হয়নি, তবে পাহাড়ঘেঁষা ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। গ্রামবাসীকে হাতির ক্ষতি না করতে সতর্ক করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুদ রানা বলেন, ক্ষতির সঠিক পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা যায়নি। ক্ষতিগ্রস্তদের আবেদন নেওয়া হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও হাতি গবেষক মো. আব্দুল আজিজ বলেন, আশির দশক থেকেই ভারতের মেঘালয় থেকে হাতি বাংলাদেশে আসছে। দুই দেশেই খাবারের সংকট থাকায় হাতিরা লোকালয়ে ঢুকছে। সরকারি জমি হাতিদের জন্য উন্মুক্ত করা ও বনায়ন বাড়ানোই দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।
আরএইচ