ঢাকা, বুধবার, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২, ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১৮ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

বাবার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়: যতীন সরকারের ছেলে সুমন

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৩১, আগস্ট ১৩, ২০২৫
বাবার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়: যতীন সরকারের ছেলে সুমন অধ্যাপক যতীন সরকার। সংগৃহীত ছবি

ময়মনসিংহ: আগামী ১৮ আগস্ট ছিল বিশিষ্ট লেখক, প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক যতীন সরকারের (৯০) জন্মদিন। কিন্তু জন্মদিনের মাত্র পাঁচদিন আগেই চিরদিনের জন্য চলে গেলেন স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত এই শিক্ষাবিদ।

তার মৃত্যুতে পরিবার, স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের মধ্যে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বুধবার (১৩ আগস্ট) বিকেল পৌনে ৩টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (মমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।  

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার একমাত্র মেয়ে সুদীপ্তা সরকার, যিনি ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ হিসাবে কর্মরত।  

সুদীপ্তা সরকার বলেন, আগামী ১৮ আগস্ট ছিল বাবার ৯০তম জন্মদিন। কিন্তু জন্মদিনের মাত্র পাঁচদিন আগেই বাবা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। আপনারা তাকে প্রার্থনায় রাখবেন, আশীর্বাদ করবেন—এটাই আমাদের চাওয়া।  

তিনি আরও বলেন, বাবার মৃত্যু দেশ ও সাহিত্য অঙ্গনের অপূরণীয় ক্ষতি। তবুও তিনি স্বাভাবিক জীবন কাটিয়ে বিদায় নিয়েছেন। নব্বই বছরের জীবনে তার যাত্রা পরিপূর্ণ হয়েছে। তিনি যা দিতে পেরেছেন, তার কর্মেই বেঁচে থাকবেন।

শেষ ইচ্ছা প্রসঙ্গে সুদীপ্তা জানান, মারা যাবার আগে তিনি কোনো বিশেষ শেষ ইচ্ছা আমাদের বলেননি। পরিবারকেন্দ্রিক কোনো চাওয়া তার ছিল না; সবসময় দেশ ও মানুষের কথা ভেবেছেন। প্রাকৃতজনের মানুষ হিসেবেই নিজেকে ভাবতেন। আমরা পরিবার হিসেবে এতে কোনো আক্ষেপ বা অভিযোগ অনুভব করিনি।  

তার একমাত্র ছেলে সুমন সরকার (স্লোভাকিয়া প্রবাসী) বলেন, বাবার শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। আমার বাবার শূন্যতা বাংলাদেশ পূরণ করতে পারবে না।  বাবা সারাজীবন দেশ ও গণমানুষের কথা ভেবে গেছেন। তিনি ছিলেন প্রকৃত বাঙালি ও প্রাকৃতজনের মানুষ। সবাই তার জন্য প্রার্থনা ও আশীর্বাদ করবেন।  

মমেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ মাইন উদ্দিন খান জানান, গত ৮ আগস্ট তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সমস্যা, নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন এবং নিয়মিত ডায়ালাইসিস চলছিল। চিকিৎসার জন্য মেডিকেল বোর্ড গঠন করে সার্বক্ষণিক তদারকি করা হলেও টানা ছয়দিন আইসিইউতে থাকার পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।  

পারিবারিক সূত্র জানায়, মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী কারণ সরকার, এক ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালে ছুটে আসেন স্বজন ও অনুরাগীরা এবং কান্নায় ভেঙে পড়েন।  

জেলা সিপিবির সভাপতি অ্যাডভোকেট এমদাদুল হক মিল্লাত বলেন, অধ্যাপক যতীন সরকারের শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। বাংলা সাহিত্যে তার অসামান্য অবদান রয়েছে। তার মৃত্যুতে বাংলাদেশ একজন প্রাবন্ধিক ও দেশপ্রেমিক লড়াকু মানুষকে হারিয়েছে।

শেষকৃত্যের বিষয়ে তিনি জানান, বিকেল ৪টা থেকে ময়মনসিংহ উদীচী কার্যালয়ের সামনে তার লাশ রাখা হবে, যেখানে ভক্তরা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। এরপর লাশ নেত্রকোনা শহরের সাতপাই নিজ এলাকায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্থানীয় শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।

** যতীন সরকার মারা গেছেন

এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।