ঢাকা, সোমবার, ২০ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৯ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি শহীদ মানিকের পরিবারের

মুহাম্মদ মাসুদ আলম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:১২, আগস্ট ৪, ২০২৫
সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি শহীদ মানিকের পরিবারের আবদুল কাদির মানিক

চাঁদপুর: গেল বছরের ৫ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানার সামনে একটি বিজয় মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন বিক্রয়কর্মী আবদুল কাদির মানিক (৪৩)। তিনি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার বালিথুবা পূর্ব ইউনিয়নের পূর্ব মানিকরাজ গ্রামের বাইনের বাড়ির মৃত নুর মোহাম্মদের ছেলে।

গুলিতে তার মাথার একাংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি জানিয়েছে শহীদ মানিকের পরিবার।

ফরিদগঞ্জ-চান্দ্রা সড়কের পাশে শহীদ মানিকের গ্রাম। ইটের রাস্তা পেরিয়ে তার বাড়ি, আর পাশেই পারিবারিক কবরস্থান—সেখানেই তাকে দাফন করা হয়েছে। বাড়িতে রয়েছেন মানিকের মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান। তিন শতক পৈতৃক জমির ওপর তার বসতঘর; এর বাইরে কোনো স্থাবর সম্পত্তি নেই।

পেশায় বিক্রয়কর্মী মানিক রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় কাজ করেছেন। সর্বশেষ উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকার ‘শাহী স্টিল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। মানিক প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন মানিকরাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এবং অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন স্থানীয় চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে। আর্থিক অনটনের কারণে লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়।

মানিকের পরিবারে পাঁচ ভাই ও তিন বোন। তিনি ভাইবোনদের মধ্যে তৃতীয়। বড় ভাই মিজানুর রহমান হাজীগঞ্জে বসবাস করেন। ছোট ভাই ইয়াছিন আলম, খোরশেদ আলম ও জাকির হোসেন কৃষিকাজে নিয়োজিত। বোনদের বিয়ে হয়ে গেছে; তারা স্বামীর বাড়িতে থাকেন। মানিকের মা ফাতেমা বেগম থাকেন বড় ছেলের ঘরে, আর স্ত্রী রাহিমা আক্তার বসবাস করেন স্বামীর তৈরি করা একটি টিনের ঘরে।

২০০৫ সালে মানিকের বিয়ে হয় পাশের রাজাপুর গ্রামের খলিফা বাড়ির রাহিমা আক্তারের সঙ্গে। তাদের তিন সন্তান—জোহরা আক্তার (১১) পঞ্চম শ্রেণিতে, জান্নাতুল মাওয়া (৭) প্রথম শ্রেণিতে ও সর্বকনিষ্ঠ মোস্তাকিম হোসেনের বয়স ৫ বছর।

মানিকের মা ফাতেমা বেগম বলেন, গুলিতে আমার ছেলের মাথার একাংশ উড়ে গেছে। ভদ্র আর শান্ত ছেলে আমার আন্দোলনে গিয়ে প্রাণ হারালো। ঈদের ছুটিতে ১২ দিন বাড়িতে ছিল, এরপর কর্মস্থলে ফিরে যায়। ৫ আগস্ট দুপুরে আমার সঙ্গে ফোনকলে শেষবারের মতো কথা হয়। বারবার বলছিল, ‘মা, আমার ছেলেটারে দেখে রেখো’। এরপর আর কথা হয়নি।

মানিকের স্ত্রী রাহিমা জানান, ঘটনার দিন সকাল ৭টা ও ১০টায় তার সঙ্গে দুই দফা ফোনে কথা হয়। স্বামী বলেছিলেন, বিকাশে ২ হাজার টাকা পাঠিয়েছেন, যেন বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করেন। বিকেল ৩টার দিকে খবর পান, উত্তরা পূর্ব থানার সামনে বিজয় মিছিলে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি নিহত হয়েছেন। পরদিন ভোরে এলাকাবাসী লাশ বাড়িতে নিয়ে আসে এবং দুপুর ১২টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

রাহিমা বলেন, পরে কর্মস্থলের এলাকা থেকে লোকজন এসে জানাজায় অংশ নেন এবং জামায়াতের পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা সহায়তা দেওয়া হয়। স্থানীয় ব্যক্তি এসএম জাহাঙ্গীরের সহায়তায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির এম এ হান্নান ৫০ হাজার, সাবেক এমপি লায়ন হারুনুর রশিদ ২০ হাজার এবং দলের একজন নেতা ১০ হাজার টাকা সহযোগিতা করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে কিছু নগদ অর্থ ও ফলমূল দেওয়া হয়। পরে জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে ৫ লাখ, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২ লাখ এবং সর্বশেষ ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়।

মানিকের ছোট ভাই আলম জানান, গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশ ও কয়েকজন ছাত্র প্রতিনিধি তাদের বাড়িতে আসে এবং পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকেও লোকজন খোঁজখবর নিতে আসে।

শহীদ মানিকের মা ফাতেমা বেগম, স্ত্রী রাহিমা আক্তারসহ পরিবারের সদস্যরা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।

আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।