কুষ্টিয়া: বিলুপ্তপ্রায় শরিফা (নেওয়া) বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে লাভবান হয়েছেন কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কৃষক জালাল উদ্দিন। তারমতো জেলার আরো অনেক কৃষক শরিফা চাষে ভাগ্য বদলে সক্রিয় হয়েছেন।
কৃষকরা জানিয়েছেন, স্বল্প পরিশ্রম, রোগবালাই কম হওয়া এবং বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় তারা বাণিজ্যিকভাবে শরিফা চাষ করছেন।
কৃষক জালাল উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেছেন, কৃষি অফিসের পরামর্শ ও সহযোগিতায় এক বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে শরিফা ফল চাষ করেছেন তিনি। ইতিমধ্যে নিজের বাগান থেকে তিনি দুই লক্ষাধিক টাকার শরিফা ফল বিক্রি করেছেন।
তবে স্থানীয় বাজারে এ ফলের দাম কিছুটা কম পাচ্ছেন বলে জানান জালাল উদ্দিন।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার পাটিকাবাড়ী ইউনিয়নের হারুরিয়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, প্রচুর শরিফা ফল ধরেছে কৃষক জালাল উদ্দিনের বাগানে।
জালাল উদ্দিন বলেন, ‘আমি আড়াই বছর আগে কৃষি অফিসে একটা ট্রেনিং এ গিয়ে জানতে পারি যে এই শরিফা চাষ লাভজনক। তারপর তারা আমাকে চারা ও সার দেয়। আমি এক বিঘা জমিতে শরিফা চাষ করি। প্রথম বছরেই আমি ৭০ হাজার টাকার মতো শরিফা বিক্রি করি। পরের বছর ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করেছিলাম।
এ বছর মনে হচ্ছে এক লাখ টাকার বেশি বিক্রি করতে পারবো। ইতিমধ্যে ৬০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছি। আশা করছি ৩০-৪০ বছর ধরে ফল পাবো। ’
তিনি বলেন, ‘এই ফল চাষ করে আমি অর্থনৈতিকভাবে যেমন লাভবান হয়েছি, তেমনি এলাকায় বেশ সুনাম পেয়েছি। ’
জালাল উদ্দিন আরো বলেন, ‘আমি একা এই বাগান করেছি বিধায় ঢাকায় বিক্রি করতে পারি না। অল্প ফল নিয়ে যাওয়া সমস্যা। যদি আরো বেশি কৃষক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতো তাহলে বাজারজাতে সুবিধা হতো এবং দাম ভালো পাওয়া যেতো’।
কুষ্টিয়ার বাজারে সাধারণত শরিফা ফল প্রতি কেজি তিনশ’ টাকায় বিক্রি হয়। তবে ভালো মানের ফল চারশ’ ৫০ টাকা থেকে পাঁচশ’ টাকা কেজিতে বিক্রি করেন বলে জানান সফল কৃষক জালাল উদ্দিন।
জালাল উদ্দিনের স্ত্রী বলেন, ‘শরিফা বাগান করে আমাদের সংসারে স্বচ্ছলতা এসেছে। এখন আমরা খুব খুশি। এটি খুবই লাভজনক। ’
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘যশোর অঞ্চলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্প যখন আমাদের প্রদর্শনী দেয়, তখন এটা সম্প্রসারণ খুবই কষ্টকর ছিল। আমরা কৃষককে প্রশিক্ষণ দিয়ে এ চাষ শুরু করি। ’
তিনি আরো বলেন, ‘শরিফার চাষাবাদ একদমই সহজ। এর রোগবালাই নেই বললেই চলে। এছাড়া, এটির বাজারদর ভালো থাকে। তবে ফল সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণে কৃষকদের আরো সহযোগিতা করা হলে বেশি লাভবান হবেন। ’
কুষ্টিয়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুপালী খাতুন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরা শরিফা চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছি। কৃষক জালাল উদ্দিনের দেখাদেখি এখন শরিফা চাষে বেশ আগ্রহী হচ্ছেন অন্য কৃষক। ’
তিনি বলেন, ‘পুষ্টিগুণে ভরপুর শরিফার বাণিজ্যিক চাষাবাদ হলে একদিকে যেমন কৃষকরা লাভবান হবেন অন্যদিকে পুষ্টি নিশ্চয়তা বৃদ্ধি পাবে। ’
এসএইচ