নোয়াখালী: জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মাহেন্দ্রক্ষণ তখন। স্বৈরাচার শেখ হাসিনার সরকারের পতন ঘটেছে।
বছর ঘুরে ফিরে এসেছে জুলাই। কিন্তু রায়হানের পরিবারে তার শূন্যতা। নোয়াখালী সদর উপজেলার নোয়ান্নই ইউনিয়নের পূর্ব দুর্গানগর গ্রামের আমজাদ হাজী বাড়ির মো. মোজাম্মেল হোসেন ও আমেনা বেগম দম্পতির এই ছেলেকে হারানোর শোক এখনো যেন ঘিরে আছে এলাকায়।
সংসারের একমাত্র স্বপ্ন-প্রত্যাশার অবলম্বন রায়হানকে হারিয়ে তার বাবা, মা ও একমাত্র ছোট বোন উর্মি আক্তারসহ সবার দিন যেন কাটছে অসহায়ত্বে। রায়হানের কথা ভাবতেই তার মায়ের দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসে। দুর্দিনে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি শহীদ রায়হানের স্মৃতি সংরক্ষণে দাবি আত্মীয়-স্বজন ও এলাকাবাসীর।
জানা যায়, মোজাম্মেল-আমেনা দম্পতির অভাবের সংসারে স্বপ্ন ছিল মেধাবী রায়হানকে ঘিরে। তিনিও এসএসসি পাস করার পর পরিবারের অভাব ও দুঃখ দূর করতে স্বপ্নপূরণে নোয়াখালী থেকে রাজধানীতে গিয়ে গুলশান কমার্স কলেজে ভর্তি হন। তার বাবা মোজাম্মেল রাজধানীর বাড্ডায় একটা বাড়িতে কেয়ারটেকারের চাকরি করতেন। রায়হান পাশেই একটি মেসে থাকতেন।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে এইচএসসি পরীক্ষার্থী রায়হান পরিবারের অগোচরে প্রতিদিনই আন্দোলনে যেতে থাকেন। সহপাঠী, বন্ধুদের বারণ করতেন আন্দোলনের যাওয়ার বিষয়টি কাউকে না বলতে।
পুরো জুলাইয়ে রায়হান নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারলেও বাঁচতে পারলেন না বিজয়ের দিন ৫ আগস্ট। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার খবরের পরও উন্মত্ত পুলিশ সদস্যরা আন্দোলনকারীদের বিজয় মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে প্রাণ হারান রায়হান। এরপর ৬ আগস্ট রায়হানের লাশ নোয়াখালীতে নিয়ে জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
শহীদ রায়হানের মা আমেনা বেগম বলেন, ‘এক বছর রায়হান নেই, ঘরটা অন্ধকার হয়ে আছে। কীভাবে চলি। ছেলে নাই, থাকলে তো মা ডাকতো। ছেলের কথা মনে পড়লে দুনিয়াদারি আঁধার হয়ে আসে। ’
আমেনা তার ছেলেসহ আন্দোলনে সব শহীদ হত্যার বিচার চান।
বন্ধু-স্বজনরা জানান, শান্ত, ভদ্র, বিনয়ী ও মিশুক স্বভাবের রায়হানের কথা তাদের সবার মনে গেঁথে আছে। এখনো রায়হানের স্মৃতি জ্বলজ্বল করছে সহপাঠী, বন্ধু, আত্মীয়-স্বজন সবার মাঝে।
সবার দাবি, সরকার যেন শহীদ রায়হানের স্মৃতি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। তার নামে নামকরণকৃত এলাকার সড়কটি যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে পাকাকরণ করা হয়।
রায়হানের বাড়িতে এক শতাংশ জায়গায় ছোট্ট একটি ঘর। এর মধ্যে সরকার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে কিছু সহায়তা পেয়েছে তার পরিবার। তবে তা অসহায় পরিবারটির প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। সরকার এই শহীদ পরিবারটির পাশে আরও বড় পরিসরে দাঁড়াবে এমনটাই প্রত্যাশা সবার।
গুলশান কমার্স কলেজ সূত্র জানায়, শহীদ মো. রায়হান রাজধানীর গুলশান কমার্স কলেজ থেকে ২০২৪ সালের এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরে একই বছরের অক্টোবর মাসে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, রায়হান সাফল্যের সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন।
এইচএ/