ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ২৯ জুলাই ২০২৫, ০৩ সফর ১৪৪৭

সারাদেশ

এতিম-দিনমজুর লতিফের বুকেও গুলি চালায় আ.লীগের ক্যাডাররা

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮:১৫, জুলাই ২৯, ২০২৫
এতিম-দিনমজুর লতিফের বুকেও গুলি চালায় আ.লীগের ক্যাডাররা আব্দুল লতিফ

সিরাজগঞ্জ: মাতৃগর্ভেই পিতৃহারা হয়েছিলেন আব্দুল লতিফ। জন্মের তিন মাসের মাথায় মারা যান মা বেদানা খাতুনও।

এরপর আশ্রয় হয় হতদরিদ্র খালার কুঁড়েঘরে। খালার মৃত্যুর পর লতিফ বেড়ে ওঠেন চার খালাতো বোনের সংসারে। জীবনভর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে কাটিয়েছেন এই এতিম যুবক। কিন্তু সেই লতিফকেও রক্ষা করেনি ঘাতকের বুলেট। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মিছিলে অংশ নিয়ে শহীদ হন তিনি।

২০২৪ সালের ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার চূড়ান্ত আন্দোলনের সময় সিরাজগঞ্জ শহরে মিছিলে অংশ নেন দিনমজুর আব্দুল লতিফ। ওইদিন বেলা ১১টার দিকে ইলিয়ট ব্রিজ এলাকায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত হন তিনি।

লতিফের খালাতো বোন সালেহা বেগম বলেন, লতিফ কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী ছিল না। সে একজন সাধারণ দিনমজুর। তবে বিএনপির মিছিল হলে প্রায়ই যেত। সেদিনও মিছিলে গিয়েছিল। কিছুক্ষণ পর খবর পেলাম ওর বুকে গুলি লেগেছে। হাসপাতালে গিয়ে দেখি, লতিফ আর নেই।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ইদ্রিস আলী সরকার বলেন, ৪ আগস্ট সকালে ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগ চাই’- এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতার মিছিল শুরু হয়। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন। মিছিলটি এসএস রোড থেকে ইলিয়ট ব্রিজে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা গুলি চালায়। একটি গুলি লতিফের বুকের নিচে লাগে। সঙ্গে সঙ্গে সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
দুদিন পর ৬ আগস্ট সকালে মালশাপাড়া কবরস্থানে জানাজা শেষে দাফন করা হয় তাকে।

আব্দুল লতিফ ১৯৭৮ সালের ১২ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জের গয়লা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আসু মুন্সী ও মা বেদানা খাতুন—দুজনেই প্রয়াত। সৎ ভাইবোন থাকলেও লতিফ বড় হন খালাতো বোনদের ঘরে। চার খালাতো বোন সালেহা, নাসিমা, শেফালী ও জ্যোৎস্না—সবাই বয়সে বড়, অন্যের বাড়িতে কাজ করে জীবিকা চালাতেন। তাদের হাতেই বড় হন লতিফ। দারিদ্র্যের কারণে পড়াশোনা করতে পারেননি। ছোটবেলা থেকেই দিনমজুরি, চায়ের দোকানসহ বিভিন্ন খেটে খাওয়া পেশায় যুক্ত ছিলেন।

সালেহা বেগম বলেন, লতিফ খুব ভালো মনের মানুষ ছিল। কারো সঙ্গে ঝামেলা করতো না। সে একজন সহজ-সরল মানুষ ছিল। আমাদের আদরের ভাইটি স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে জীবন দিল। সৎ ভাইয়েরা ৪৭ বছর কোনো খোঁজ নেয়নি, এখন সরকারি সহায়তার জন্য তারা ছুটছে। অথচ তার মৃত্যুর সময় পাশে ছিলাম আমরা।

অপর বোন শেফালী ও নাসিমা বলেন, আমাদের ভাইটাকে যারা গুলি করে মারলো, তাদের বিচার চাই। এমন ভালো মানুষকে কেন মারলো তারা?

এই ঘটনায় খালাতো বোন সালেহা বেগম বাদী হয়ে সিরাজগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেছেন। এতে সাবেক দুই সংসদ সদস্য হাবিবে মিল্লাত মুন্না ও জান্নাত আরা হেনরীসহ জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের ১৪৪ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।