নাটোরের লালপুরে থানা থেকে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. রায়হান কবীর সুইটসহ ছাত্রদল ও যুবদলের ১৭ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
রোববার (১৩ জুলাই) দুপুর সোয়া ২টার সময় এজাহারভুক্ত ২৩ আসামি নাটোরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিনের আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন।
নাটোরের কোর্ট ইন্সপেক্টর (পরিদর্শক) মো. মোস্তফা কামাল বাংলানিউজকে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আদালতের নির্দেশ মোতাবেক যথাযথ প্রক্রিয়ায় তাদের বিকেলের দিকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে নাটোর পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের গত ৮ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে লালপুর থানা থেকে গ্রেপ্তার হওয়া জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রুবেল উদ্দিনকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে দিনগত রাতে পুলিশ বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
পরে অভিযান চালিয়ে নিজ বাড়ি থেকে ওই ছাত্রদল নেতা রুবেল উদ্দিন ও তার দুই বোন রুপা খাতুন (২৫), ফারজানা ইয়াসমিন বৃষ্টি (২০) এবং এক যুবদল নেতা একই উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়নের বাসিন্দা ও যুবদল নেতা মো. মাসুদ রানাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে যৌথবাহিনী।
পরের দিন বিকেলে তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারকৃত রুবেল উদ্দিন, রুপা খাতুন, ফারজানা ইয়াসমিন বৃষ্টি ও লালপুর উপজেলার গৌরিপুর গ্রামের আবুল হোসেনের ছেলে মাসুদ রানা একই উপজেলার কদিমচিলান ইউনিয়নের বাসিন্দা।
সূত্র আরও জানায়, গত ২০২৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাগাতিপাড়া উপজেলায় এক বিএনপি নেতার বাড়িতে গুলিবর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ছাত্রদল নেতা রুবেল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে লালপুর থানায় রাখা হয়। পরে খবর পেয়ে ওই ছাত্রদল নেতার পরিবারের লোকজনসহ লালপুরের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের শতাধিক নেতাকর্মী থানা ভবনের ভেতরে ঢুকে স্লোগান দিয়ে হট্টগোল শুরু করেন।
তারা বিএনপির এক নেতার সমর্থনে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা জোড় করে রুবেল উদ্দিনকে ছিনিয়ে নিয়ে থানা ভবন থেকে বের করে বাহিরে এনে তাকে নিয়ে লালপুর-বাঘা সড়কে মিছিল করেন। পরে তাকে ছিনিয়ে নিয়ে চলে যান।
খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৫) সদস্যরা লালপুর থানায় গিয়ে অবস্থান নেয়। সন্ধ্যার পর ওই ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারে সাড়াশি অভিযান শুরু হয়। একই সঙ্গে দিনগত রাতে এ ঘটনায় বাগাতিপাড়া থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মানিক কুমার চৌধুরী বাদী হয়ে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে লালপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় ৩৮ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫৮ জনকে আসামি করা হয়।
এছাড়া রাত থেকে সকাল পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে যৌথবাহিনী রুবেল উদ্দিনের চামটিয়ার বাড়ি থেকে তার দুই বোন রুপা খাতুন ও ফারজানা ইয়াসমিন ও কদিমচিলান ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সভাপতি মাসুদ রানাকে গ্রেপ্তার করে নাটোর সদর থানা হেফাজতে রাখে।
অন্যদিকে দুপুরের দিকে পাবনার ঈশ্বরদী থেকে সেই ছাত্রদল নেতা রুবেল উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে যৌথবাহিনী। বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। থানায় সংঘটিত এ ঘটনার জন্য লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হক ও দায়িত্বরত একজন উপ-পরিদর্শক (এসআই) এবং দুইজন কনস্টেবলকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।
নাটোরের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ আমজাদ হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, যারা সরকারি কাজে বাধা দিয়ে আসামি ছিনতাই করেছিলেন তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। একই সঙ্গে দায়িত্ব অবহেলার কারণে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আর এ ঘটনায় পুলিশ মামলা দায়ের করলে অভিযুক্তরা উচ্চ আদালত থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন নেয়। আজ ওই মামলায় এজাহারভুক্ত ২৩ জন আসামি নাটোরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিনের আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে বিচারক ছয়জনের জামিন মঞ্জুর করেন আর ১৭ জনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আরএ