ঢাকা, সোমবার, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২, ১৪ জুলাই ২০২৫, ১৮ মহররম ১৪৪৭

সারাদেশ

যশোরে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু হচ্ছে, শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত হবে ৫ আগস্টের আগে

সরোয়ার হোসেন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:১৩, জুলাই ১৩, ২০২৫
যশোরে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ শুরু হচ্ছে, শ্রদ্ধা জানাতে প্রস্তুত হবে ৫ আগস্টের আগে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের নকশা

যশোর: ফ্যাসিবাদবিরোধী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যশোরে নির্মিত হচ্ছে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’। সোমবার বেলা ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ কাজ শুরু হবে।

 

আগামী ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ পতনের দিনে সেখানে বীর শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে বলে আশা করেছেন জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম।  

ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির মাহেন্দ্রক্ষণে এমন একটি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন যশোরের জেলা প্রশাসক ও ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের নেতারা। তারা বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেনতাকে ধারণ করার জন্য এই স্মৃতিস্তম্ভ অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে।  

দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করা শহীদদের কালের সাক্ষী হিসেবে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব। স্মৃতিস্তম্ভ সেই কাজটি করে-বলেছেন তারা।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এই স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪ লাখ টাকা।  

জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, সরকার জুলাই শহীদদের স্মৃতি জাগরুক এবং ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সমুজ্জ্বল রাখতে সারাদেশে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। প্রতিটি স্মৃতিস্তম্ভ হবে একই মাপে, একই মানে এবং একই নকশায়।  

তিনি জানান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের স্থাপত্য বিভাগ স্মৃতিস্তম্ভের নকশা করেছে, যা উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদিত হয়েছে। এটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে আগামী ৫ আগস্ট জুলাই শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে এই স্মৃতিস্তম্ভে।

জেলা প্রশাসক আজাহারুল ইসলাম বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে চির জাগরুক রাখা দরকার। বাঙালির আড়াইশ’ বছরের ইতিহাসে এমন গণঅভ্যুত্থান আর কখনো হয়নি।

মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়েছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন হয়েছে বা ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান-সবই হয়েছে বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে। একটি স্বাধীন দেশে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে এমন স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন বাঙালির ইতিহাসে বিরল। এত মানুষের শহীদ হওয়া নজিরবিহীন।

এতবড় একটা ঘটনার স্মৃতি ধরে রাখার জন্য এই স্মৃতিস্তম্ভ খুব প্রয়োজন বলে মত প্রকাশ করেছেন তিনি।  

যশোর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, যশোরে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের উচ্চতা হবে ১৮ ফুট, প্রস্ত ছয় ফুট।  

তিনি বলেন, ২৪’র জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্রজনতা উচ্চারিত স্লোগানগুলো জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের বিভিন্ন অংশে খোদাই করে তুল ধরা হবে। এসব স্লোগান ছিল প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের ভাষা, উদ্দীপনার ভাষা। এগুলোই আগামী প্রজন্মের কাছে ঐতিহাসিক জুলাই শহীদদের স্মৃতিকে অম্লান করে রাখবে। এটি হবে যশোরবাসীর জন্যও এক ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক।

জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণকে গর্বের বলে অভিহিত করেছেন সে সময়ে যশোরের রাজপথের ছাত্র-গণআন্দোলনের নেতা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোর জেলা কমিটির সাবেক আহ্বায়ক শিল্পী রাশেদ খান।

তিনি বাংলানিউজকে বলেছেন, ’২৪ এর যোদ্ধাদের স্মরণে শহরের প্রাণকেন্দ্রে এটা নির্মিত হচ্ছে-এটা অনেক গর্বের। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে ততদিন এই স্মৃতি অম্লান থাকবে।  

রাশেদ খান বলেন, জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ হবে আমাদের পরিচয়। যখন আমরা ম্যুরালের কাছে যাবো, ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রতিবাদ-প্রতিরোধের স্মৃতি মনে পড়বে। সেই সময়ে যাঁরা আত্মত্যাগ করেছেন সেই শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হবে নতুন প্রজন্ম।  

একইসাথে দেশে যাতে ভবিষ্যতে আর কোন শাসক স্বৈরাচার বা ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে না পারে তারও একটা বার্তা দেবে জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ।  

জুলা শহীদদের জন্য সারাদেশে এ ধরনের আরও স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ জরুরি উল্লেখ করেছেন ’২৪ এর অভ্যূত্থানে যশোরের রাজপথের আরও একজন লড়াকু যোদ্ধা এমরান খান।  

যশোর জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই সংগঠক বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ শুধু না, বিশ্বের ইতিহাসে ২৪ এর গণঅভ্যুত্থান অবিস্মরণীয় একটি ঘটনা। অনেক দেশে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, কিন্তু একসাথে এত ছাত্রজনতা হত্যা ইতিহাসে বিরল।  

তিনি বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে যে গণহত্যা হয়েছে সেই শহীদদের নানাভাবে অপমান করার চেষ্টা করা হচ্ছে। অথচ, দুই সময়ে সংঘটিত মুক্তিযুদ্ধ ও গণঅভ্যুত্থান আমাদেরকে নতুন পথের সন্ধান দিয়েছে। সে কারণে দুই সময়ের শহীদদের প্রতিই আমাদেরকে সমানভাবে সম্মান প্রদর্শন করতে হবে।

নির্মাণ হতে যাওয়া জুলাই স্মৃতিস্তম্ভকে কালের সাক্ষী উল্লেখ করে এমরান খান বলেন, দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য যাঁরা জীবন দিয়েছেন তাদের আজীবন বাঁচিয়ে রাখা আমাদের দায়িত্ব। স্মৃতিস্তম্ভের মধ্য দিয়ে এসব বীর শহীদ আমাদের মাঝে বেঁচে থাকে।

এদিকে, যশোরের যে স্থানে জুলাই শহীদ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হচ্ছে সেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নির্মাণ হয়েছিল শেখ মুজিবুর রহমানের দেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় ম্যুরাল। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিক্ষুদ্ধ ছাত্র-জনতা ম্যুরালটি ভেঙে ফেলে। জুলাই শহীদ স্মৃতিসৌধ নির্মাণের জন্য কয়েকদিন ধরে যশোর পৌরসভার তত্বাবধানে সেই ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলা হয়েছে।  

যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল হোসেন বলেন, যে স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে সেই স্থানসহ শহরে যাতে কোনো যানজটের সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হয়েছে।  

তিনি জানান, স্মৃতিস্তম্ভ এলাকায় কোনো প্রাচির থাকবে না। তা সড়কের সাথে সমান্তরাল হবে। যাতে যানবাহন সহজে চলাচল করতে পারে।  

এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।