লক্ষ্মীপুরে গত তিনদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। তলিয়ে গেছে নিচু এলাকা ও রাস্তাঘাট।
এদিকে লক্ষ্মীপুর শহরের ও আশপাশের এলাকায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা বেহাল এবং যত্রতত্র ভরাট হয়ে পড়ায় ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়েছে পৌরবাসী।
বুধবার (৯ জুলাই) দুপুরে সরেজমিনে বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার চিত্র দেখা গেছে।
উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় সৃষ্ট মৌসুমি লঘুচাপের কারণে গত সোমবার (৭ জুলাই) সকাল থেকে টানা বৃষ্টি শুরু হওয়া বৃষ্টিপাত এখনও অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নিচুস্থান ভরাট হয়ে পড়ায় পানি প্রবাহের রাস্তা বন্ধ হয়ে পড়েছে। এছাড়া নালা বা খাল দখল হয়ে পড়ায় ঠিকমতো বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না। তাই জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পৌর এলাকার দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা সোহাগ হোসেন বলেন, টানা বৃষ্টিতে বাড়ির রাস্তায় ডুবে গেছে। পানি ঠিকমতো নামতে পারছে না। ড্রেন বা নালাগুলো ভরাট হয়ে পড়ায় পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পানি প্রবাহে প্রতিবন্ধকতা দূর না হলে জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ বাড়বে।
একই ওয়ার্ডের বাসিন্দা আবু তাহের বলেন, পথেঘাটে এবং বসতবাড়ির আশেপাশে পানি উঠে পড়েছে। চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
পৌর এলাকার বাসিন্দা বাবুল হোসেন বলেন, বৃষ্টির পানিতে পুকুর ভেসে মাছ বেড়িয়ে গেছে। এতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
এদিকে জলাবদ্ধতার পাশাপাশি বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে। গেল বছর ভারী বৃষ্টিপাত এবং ফেনীর বন্যার পানির চাপে লক্ষ্মীপুরের ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। এবারও সে আশঙ্কা করছে লক্ষ্মীপুরবাসী।
সাংবাদিক হাসান মাহমুদ বলেন, জেলার বিভিন্ন স্থানে খাল দখল হয়ে আছে। দখলদাররা খাল দখল করে পানি প্রবাহের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে বৃষ্টির পানি ঠিকমতো নামতে পারছে না। গেল বছর খালের পানি প্রবাহ বন্ধ থাকায় দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কবলে পড়তে হয়েছে। তারপরেও খালের দখল উচ্ছেদ করে পানি প্রবাহের রাস্তা স্বাভাবিক করা হয়নি। তাই এবারও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, পৌরসভার ড্রেনগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে না। ফলে বৃষ্টির পানি নামতে না পারায় পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।
লক্ষ্মীপুর পৌর প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, জলাবদ্ধতার পেছনে মূলত নাগরিক সচেতনতার অভাব দায়ী। নাগরিকরা যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এছাড়া অবাধে খাল দখল, অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও পুকুর ভরাটের কারণেও পানি নিষ্কাশনে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার সচেতন করা হলেও তেমন সাড়া মিলছে না। বিভিন্ন স্থানে পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে আমরা খালের উচ্ছেদ অভিযান এবং খাল পরিষ্কার অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
জেলার রামগতি উপজেলায় অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক সোহরাব হোসেন বলেন, গত ৭ জুলাই রামগতিতে ১৬১ মিলিমিটার এবং ৮ জুলাই ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। তবে ভারী বৃষ্টিপাত কমে আসতে পারে।
এসআরএস