নির্বাচন যত দেরি হবে, দেশ তত পিছিয়ে যাবে মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশ পিছিয়ে গেলে বিনিয়োগ আসবে না, নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে, নারীরা নিরাপত্তা হারাবে, জুডিশিয়াল ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে, আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়বে। সেজন্য দরকার একটা নির্বাচিত সরকার।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিন। মানুষের কাছে যান। মানুষ যাতে বুঝতে পারে বিএনপি ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই।
সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে সিলেট নগরের পাঠানটুলায় সানরাইজ কমিউনিটি সেন্টারে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিকের আমন্ত্রণে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি ও তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু কামনায় দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, হাসিনা গণতন্ত্র, ভোট, পত্রিকা বন্ধ করেছিল। মানুষের মৌলিক অধিকার হরণ করেছিল। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র এনে নতুন সুযোগ তৈরি করে দিয়েছিলেন। আমরা সেই দল যে দল স্বাধীনতা ঘোষণা করেছে। আমরা একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ চাই, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে চাই এবং বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্র করতে চাই। সেজন্য বিএনপি ৩১ দফা দিয়েছে। আর এই ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
মির্জা ফখরুল বলেন, এমনি এমনি হঠাৎ করে হাসিনা পালায়নি। বহু মানুষের সংগ্রাম, রক্ত, ত্যাগ মিলিয়ে আমরা ফ্যাসিবাদ মুক্ত হলাম। আমরা তো লড়াই করেছি গণতন্ত্রের জন্য। আমরা একটা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যেখানে মানুষ কথা বলতে পারবে, বাকস্বাধীনতা থাকবে, নারীরা নিরাপত্তা পাবে, তরুণরা কাজের সুযোগ পাবে, মানুষ চিকিৎসার সুযোগ পাবে এমন একটা দেশ আমরা চাই। সেই দেশ তৈরির জন্য নতুন করে লড়াই শুরু করেছি। আর আমাদের এই সংগ্রামের নেতা হচ্ছেন তারেক রহমান। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এখনও অসুস্থ অবস্থায় আমাদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
বিএনপির মহাসচিব অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তিনি লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করে ২৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের সময় ঠিক করেছেন, এজন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই।
নেতাকর্মীদের সতর্ক করে মির্জা ফখরুল বলেন, কেউ যাতে আঙুল তুলে কথা না বলতে পারে আমরা জমি দখল করেছি, চাঁদাবাজি করেছি, জায়গা দখল করেছি। জয় আমাদের সুনিশ্চিত, ইনশাআল্লাহ।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা যখন সুযোগ পাই সিলেট আসি। কারণ হচ্ছে, শত শত বছর আগে এখানে ইসলামের আলো ছড়িয়েছে। সত্য, সুন্দর ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন সেই শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) দরগায় আমরা আসি। আমি নয়, আমরা নয়, সারা দেশ-বিদেশের হাজার হাজার মানুষ এখানে আসেন। কারণ তারা এই মহান পুরুষরা যারা অন্ধকারকে আলোকিত করার জন্য মানুষকে আলোকপাত করেছিলেন, সেই মানুষগুলোকে শ্রদ্ধা জানাতে চান।
তিনি আরও বলেন, এটা আমাদের পুণ্যভূমি। সিলেট আমাদের কাছে আরো প্রিয় আরেকটা কারণ আছে তাহলো আমাদের নেতা তারেক রহমানের শ্বশুর বাড়ি। সেজন্য আমরা এখানে আসতে আনন্দ পাই, শান্তি পাই।
বক্তব্যের শুরুতে মির্জা ফখরুল সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, এম ইলিয়াস আলীসহ সব গুম হওয়া নেতাদের কথা স্মরণ করেন।
যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা যৌথভাবে সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমদাত হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ইশতিয়াক আহমদ।
দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ড. এনামুল হক চৌধুরী, খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির, মাহিদুর রহমান, আরিফুল হক চৌধুরী, ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন, বিএনপির কেন্দ্রীয় সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গৌছ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এ সালাম, বিএনপির কেন্দ্রীয়সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, মিফতা সিদ্দিকী, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ক্ষুদ্র ঋণবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল রাজ্জাক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, আবুল কাহের শামীম, মিজানুর রহমান মিজান, হাদিয়া চৌধুরী মুন্নি, সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী প্রমুখ।
পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠান দোয়া মাহফিলের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।
এনইউ/আরবি