বৈরী আবহাওয়া, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও ভ্যাকসিনেশনসহ নানাবিধ কারণে উত্তরের জেলাগুলোতে ভয়াবহভাবে বাড়ছে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ (LSD)।
ভাইরাসজনিত এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে গরু ও মহিষ।
এছাড়া জেলাজুড়ে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছে ৩৫১টি গবাদি পশু। তার মধ্যে মারা গিয়েছে ২৯টি।
সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল থেকে এসব তথ্য পাওয়া গিয়েছে।
প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, লাম্পি স্কিন রোগ মানুষের জন্য ক্ষতিকর না হলেও গবাদিপশুর জন্য এটি মারাত্মক সংক্রামক একটি রোগ। এটি ছোঁয়াছে, খুব দ্রুত এক পশু থেকে অন্য পশুতে ছড়িয়ে পড়ে। জেলায় প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্ত পশুর সংখ্যা। প্রাথমিকভাবে আক্রান্ত গরুদের জ্বর হয়, শরীর ফুলে ওঠে, ত্বকে গুটি দেখা দেয়, মুখ দিয়ে লালা ঝরে এবং ধীরে ধীরে পশুটি দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে একপর্যায়ে মৃত্যু ঘটে। আক্রান্ত পশুর পাশে সুস্থ পশু থাকলে তার মধ্যেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ। তাই আক্রান্ত পশুকে দ্রুত আলাদা স্থানে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়।
এ পরিস্থিতিতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়মিত ক্যাম্পেইন পরিচালনা করছেন। তারা রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা সংক্রান্ত সচেতনতামূলক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। চিকিৎসাপত্র নিয়েও তেমন কোনো সুফল মিলছে না বলেও খামারিদের অভিযোগ। এছাড়া এ রোগের চিকিৎসাও অনেকটা খরচ সাপেক্ষ হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ক্ষুদ্র খামারি ও কৃষকরা।
বিদেশি প্রজাতির দুই মাস বয়সি বাছুর নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে এসেছেন জেলার উলিপুর উপজেলার বাসিন্দা আরুফ উদ্দিন। সম্প্রতি জন্ম নেওয়া বাছুরটি লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে ১০ দিন আগে। গ্রাম্য ডাক্তার চিকিৎসা করেছে কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। তাই তিনি নিয়ে এসেছেন শহরে। তিনি বলেন, বাছুরটার অবস্থা ভালো না। জ্বর আর কাঁপুনি কখন জানি কী হয়, সেই জন্যে এটে (এখানে) আনছি। দেহি ডাক্তার কী কয়। ’
আট মাসের গাভীন গরু নিয়ে কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলা থেকে ভেটেরিনারি হাসপাতালে এসেছেন আসাদুল ইসলাম নামে এক খামারি। তিনি বলেন, ‘গরুটার পেটত বাচ্ছা, সাতদিন থাকি জ্বর আর শরীর কাঁপে। খুব বিপদত আছি। আল্লাহ জানে কপালত কী আছে। হামার এলাকাত ৫-৬টা বাছুর মরছে এ পর্যন্ত।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. কামরুল ইসলাম বলেন, গত এক মাসে আমাদের এখানে লাম্পি স্কিনে আক্রান্ত ৬০টি গরু নিয়ে আসেন কৃষক ও খামারিরা। তার মধ্যে তিনটি গরু মারাও গিয়েছে। আসলে এ রোগের ভ্যাকসিন এখনও আসেনি। আশা করছি আগস্ট মাসে ভ্যাকসিন আসবে তখন রোগের প্রকোপটা কমে যাবে। ’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘আমরা খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছি গরুর ঘর পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি রোগাক্রান্ত গরুকে মশারির ভেতরে রাখার। ’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, জেলায় এখন পর্যন্ত ৩৫১টি গবাদি পশু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তার মধ্যে মারা গিয়েছে ২৯টি। তবে দিনে দিনে এই রোগে আক্রান্ত গরুর সংখ্যা কমছে।
আরএ