ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৩ জুন ২০২৫, ১৬ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

ঢাবিশিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

‘ছেলে তো আর নাই, আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম’

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৩৯, জুন ১১, ২০২৫
‘ছেলে তো আর নাই, আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম’ শাকিল আহমেদের মা করিমন বেগম। ছবি: বাংলানিউজ

মানিকগঞ্জ: ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী শাকিল আহমেদের আত্মহত্যার জন্য কিছু লোকের মানসিক চাপকে দুষছেন তার মা-বাবা। শাকিলের মা করিমন বেগম বলেছেন, ‘আমার ছেলেরে আত্মহত্যা করার জন্য যারা চাপ দিয়েছে তাদের বিচার যেন আল্লাহতায়ালা করেন।

’ তার বাবা নাছির উদ্দিনের কণ্ঠেও শোনা গেছে একই ধরনের আকুতি।

বুধবার (১১ জুন) বিকেলে মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার দক্ষিণ জামশা গ্রামের বাড়িতে শাকিলের মা-বাবার সঙ্গে কথা বলে বাংলানিউজ। এর আগে সোমবার (৯ জুন) রাতে ফেসবুকে একাধিক স্ট্যাটাস দিয়ে শাকিল গলায় ফাঁস দেন। পরে মঙ্গলবার (১০ জুন) সকালে ঘর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয়দের ভাষ্য, ফেসবুকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)–কে নিয়ে এক ব্যক্তির পোস্টে শাকিলের ফেসবুক আইডি থেকে একটি কটূক্তিমূলক মন্তব্য করা হয়। এ নিয়ে কতিপয় লোক তাকে হুমকি দেয়। বাড়িতে গিয়েও কেউ কেউ তাকে ও তার পরিবারকে ভয়ভীতি দেখায়। এ পরিস্থিতিতে তিনি আত্মহত্যা করেন।

নাছির-করিমন দম্পতি জানান, শাকিল তাদের তিন সন্তানের মধ্যে সবার ছোট। অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি ছবি আঁকার দিকে তার ঝোঁক ছিল, সেজন্য চিত্রকলায় ভর্তি হন।

করিমন বেগম বলেন, আমারে বলছিল ওর কোনো এক বন্ধু মোবাইল নিয়ে কোথায় যেন কী লিখেছে, যার জন্য ও মাফও চেয়েছিল। গত কয়েক দিন আগে সন্ধ্যার পরপরই আমাদের বাড়ির উঠানে অনেক লোকজন জড়ো হয় এবং ওকে গালাগালসহ ধমকও দেয়। এক প্রতিবেশী সবাইকে বুঝিয়ে বাড়ির উঠান থেকে নিয়ে গেলেও সকালে দেখি আমার ছেলে আত্মহত্যা করেছে।

শাকিলের মেঝো ভাবি রিনা বেগম বলেন, আমার বিয়ের পর থেকেই দেখে আসছি শাকিল নিরহংকার মানুষ। লেখাপড়ায় ভালো এবং সে ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকায় মনোযোগী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তি হয়। সে কারও সঙ্গে কোনো সময় খারাপ আচরণ তো দূরের কথা, উচ্চস্বরে কথাই বলেনি। সাত-আট মাস আগে কোনো এক পেজে মহানবীকে নিয়ে কটূক্তি করেছে, এমন অভিযোগের ভিত্তিতে অনেকেই চাপ প্রয়োগ করে তাকেসহ পুরো পরিবারকে। আমরা তাকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করি কেন শাকিল এই ধরনের কমেন্টস করেছে, এর উত্তরে সে বলে, ‘আমি করিনি। তবে আমার হলের এক বন্ধু আমাকে দেখতে পারে না, সে কোনো একটি পেইজে মহানবীকে নিয়ে আমার আইডি থেকে কমেন্ট করেছে। ’ পরবর্তীতে বিষয়টি বুঝতে পেরে ক্ষমাও চায় শাকিল।  

শাকিলের বাবা নাছির উদ্দিন বলেন, ছেলে-তো আর নাই, আল্লাহর কাছে বিচার দিলাম, তিনিই উত্তম বিচার করবেন। আমাকে অনেকেই মামলা করার কথা বলেছে, মামলা করলে কি ছেলে ফেরত পাবো?

সিংগাইর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌফিক আজম বলেন, শাকিলের মরদেহটি উদ্ধার করে মানিকগঞ্জ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত তার (শাকিল) পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করেনি, তবে এ বিষয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। ময়নাদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যু কীভাবে হয়েছে তার কারণ জানা যাবে।

এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।