ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১২ জুন ২০২৫, ১৫ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

ভেসাল দিয়ে যেভাবে মাছ ধরেন কমল মাঝিরা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:১৮, জুন ১১, ২০২৫
ভেসাল দিয়ে যেভাবে মাছ ধরেন কমল মাঝিরা ভেসাল দিয়ে মাছ ধরছেন কেশবপুর উপজেলার কমল মাঝি।

গ্রামবাংলার নদী-নালা ও খাল-বিলে ভেসাল জাল দিয়ে মাঝিদের দেশি মাছ ধরার দৃশ্যটি বেশ চিরচেনা। কালের বিবর্তনে দেশি মাছের প্রজনন কমে যাওয়ায় তা এখন বিলুপ্তপ্রায়।

গ্রামের হাওর-বাঁওড়, বিল ও প্রাকৃতিক জলাশয়ে অনেকে ভেসাল দিয়েও মাছ শিকার করেন। এসব মাঝিদের অনেকেই দিনের পর দিন নদীতে ভেসে সংগ্রাম করছেন। ভোরে কিংবা দুপুরে মাঝিরা নৌকা নিয়ে মাছ শিকার যান।

অনেকটা ‘পদ্মানদীর কুবের মাঝি’র মতো, এই মাঝিরাও বিশ্বাস করেন, একদিন হয়তো জালে ধরা পড়বে সে ‘সোনার মাছ’ —যা বদলে দেবে তাদের ভাগ্য।

যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার বুক চিরে প্রবাহিত কপোতাক্ষ নদ। এ নদে এখনও টিকে আছে বাংলার ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার পদ্ধতি—ভেসাল জাল। গ্রামটির প্রবীণ ও নবীন জেলেরা এ পদ্ধতির মাধ্যমে প্রতিদিনই নদ ও খালে নেমে পড়েন মাছ ধরতে। তাদের মধ্যে অন্যতম কমল মাঝি, যিনি ছোটবেলা থেকেই এ পেশার সঙ্গে যুক্ত।

ভেসাল জাল মূলত পানির ওপর ভেসে থাকা এক ধরনের বড় জাল, যেটি একটি নির্দিষ্ট এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এরপর ধীরে ধীরে জালটিকে হাত দিয়ে টেনে তোলা হয়, আর তাতেই উঠে আসে বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ। এ পদ্ধতিতে ভেসালের জালে পাওয়া যায় পুটি, ট্যাংরা, শোল, কৈ, বোয়াল ও চিংড়ির মতো মাছ।

কমল মাঝি বলেন, আগে সাগরে গিয়ে মাছ ধরতাম। এখন কপোতাক্ষ নদে ভেসাল দিয়ে মাছ ধরেই সংসার চালাই। অনেকেই এখন আধুনিক পদ্ধতির দিকে গেলেও আমরা এখনও এ পুরোনো রীতিটা ধরে রেখেছি।

স্থানীয়রা মাঝিরা জানান, ভেসাল এমন একটি মাছ ধরার পদ্ধতি যা পানির একটি নির্দিষ্ট গভীরতা পর্যন্ত ডুবিয়ে দেওয়া হয়। তারপর জালে মাছ প্রবেশ করলে জালটি আস্তে আস্তে উত্তোলন করে মাছ ধরা হয়। বর্ষাকালে বিশেষ করে ভেসাল জাল দিয়ে প্রচুর মাছ ধরা পড়ে, আর তখনই বেশি লাভ হয়। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানির পরিমাণ কমে গেলে মাছও তুলনামূলক কম পাওয়া যায়। ভেসালে মাছ ধরার পর সেই মাছ স্থানীয় হাটে ও বাজারে বিক্রি করেন তারা। এতে পরিবার চালানোর মতো আয় হয়, যদিও দিন দিন মাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় তাদের আয়ও কিছুটা কমেছে। এখন নদী-নালা, খাল-বিলে আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। আগে উন্মুক্ত জলাশয়ে পুটি, ট্যাংরা, শোল, কৈ, মাগুর, সরপুঁটি বোয়াল ও চিংড়িসহ নানা প্রকার মাছ পাওয়া যেত। এ ছাড়া নদী-খাল-পুকুরে বড় মাছের মধ্যে রুই-কাতল-মৃগেল, কালিবাউশ, আইড়, শোল, বোয়াল পাওয়া যেত।

মির্জানগরের এসব জেলেরা শুধু মাছই ধরছেন না, তারা ধরে রেখেছেন একটি প্রাচীন সংস্কৃতি ও জীবনধারাও।

স্থানীয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে তাদের দাবি, এ ঐতিহ্যবাহী পেশাকে রক্ষা করতে ও টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করা হোক।

আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।