ঢাকা, রবিবার, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ০৮ জুন ২০২৫, ১১ জিলহজ ১৪৪৬

সারাদেশ

যমুনার পাড় এখন ‘মিনি সমুদ্র সৈকত’

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬:৫৪, জুন ৭, ২০২৫
যমুনার পাড় এখন ‘মিনি সমুদ্র সৈকত’ যমুনার পাড়ে কক্সবাজারের আমেজ

সিরাজগঞ্জ: ঈদ মানেই বছরের কর্মব্যস্ততা শেষে এক টানা ছুটির আনন্দ। এই অবসরে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঘোরাঘুরির আনন্দ যেন দ্বিগুণ হয়ে ওঠে।

ঈদের ছুটিতে পরিবার, বন্ধু ও আত্মীয়দের সঙ্গে পোলাও-কোরমা, সেমাইয়ের ভোজ এবং দর্শনীয় স্থানগুলোতে ঘুরে বেড়ানো আমাদের চিরায়ত সাংস্কৃতিক চর্চার অংশ।

এবার উত্তরাঞ্চলের প্রবেশদ্বার সিরাজগঞ্জে ঈদের এই আনন্দ আরও বাড়িয়ে দেবে যমুনা নদীর কোল ঘেঁষে নির্মিত বাঁধগুলো। শহরের কাছাকাছি অবস্থিত এই নদী তীর সংরক্ষণ বাঁধ ও চারটি ক্রসবার বাঁধ ইতোমধ্যেই যমুনাপাড়বাসীর জন্য একটি জনপ্রিয় বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। শুধু সিরাজগঞ্জ নয়, আশপাশের জেলার মানুষরাও ঈদের ছুটিতে এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় করছেন যমুনার তীরে।

গত কয়েক দিনে যমুনায় পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী ফিরে পেয়েছে তার পূর্ণ যৌবন। উত্তাল ঢেউ খেলছে নদীর বুকে, আর প্রচণ্ড গরমে স্নিগ্ধ যমুনার বাতাস এনে দিচ্ছে প্রশান্তি। বিকেল হলেই বাঁধের পাড়ে মানুষের ঢল নামে। রুপালি যমুনা যেন ক্লান্ত শহরবাসীর মনে ছুঁয়ে দিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছে প্রাণের প্রশান্তি।

ঈদের ছুটির সপ্তাহজুড়ে যমুনাপাড়ে দেখা যায় বিনোদনপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। সাপ্তাহিক কিংবা সরকারি ছুটির দিনগুলোতেও কয়েকগুণ বেশি মানুষ ছুটে আসে এসব এলাকায়।

যেভাবে ‘আগ্রাসী যমুনা’ হয়ে উঠল ‘বিনোদনের তীর্থ’
যুগের পর যুগ ধরে যমুনার ভাঙনে সিরাজগঞ্জ জেলার মানুষ দুঃসহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে। নদীর করালগ্রাসে বিলীন হয়েছে বহু গ্রাম, ফসলের মাঠ ও বসতভিটা। কখনো যমুনাকে বলা হতো ‘আগ্রাসী’, ‘সর্বনাশী’, কখনোবা ‘রাক্ষসী’। সেই ভয়ংকর যমুনা এখন জেলার মানুষের কাছে এক স্বস্তির বিনোদনকেন্দ্রে রূপ নিয়েছে।

১৯৯৯ সালে শহরের মতি সাহেবের ঘাট থেকে কাজিপুর নৌকাঘাট পর্যন্ত ২ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়। বাঁধের উত্তরে যমুনার বাঁকে ‘হার্ডপয়েন্ট’ নামক শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়, যা সিরাজগঞ্জ শহরকে ভাঙনের হাত থেকে সুরক্ষা দেয়। বাঁধের উপরিভাগে নির্মিত হয় ২০ মিটার প্রশস্ত পাকা সড়ক, যার নিচে যমুনার তলদেশ পর্যন্ত সিসি ব্লক বসানো হয়। পরবর্তীতে এ বাঁধ পরিণত হয় এক আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে।

পরিপূর্ণ বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত বাঁধ এলাকা
বাঁধকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে বসার আসন, সৌন্দর্যবর্ধন ও শিশুদের জন্য শহীদ শেখ রাসেল স্মৃতি শিশু পার্ক নির্মাণ করা হয়। হার্ডপয়েন্টের উত্তরে নির্মিত হয় মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি ভাস্কর্য, যা দর্শনার্থীদের বাড়তি আকর্ষণ তৈরি করেছে।

২০১৭ সালে যমুনার গতিপথ পরিবর্তনের লক্ষ্যে নদীর বুকে নির্মাণ করা হয় চারটি ক্রসবার বাঁধ। প্রতিটি এক থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দীর্ঘ, যেগুলো মূল বাঁধ থেকে যমুনার মাঝখানে গিয়ে শেষ হয়েছে। এর মধ্যে শৈলবাড়ী ও খোকশাবাড়ী এলাকায় ১ ও ২ নম্বর, মালশাপাড়ায় ৩ নম্বর এবং পাইকপাড়ায় ৪ নম্বর ক্রসবার বাঁধ অবস্থিত। ক্রসবার ৩ ও ৪-এর মাঝখানে জেগে উঠেছে বিশাল চর, যা এখন নতুন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে।

বাঁধের দুইপাশে গাছ রোপণ, পথের সুবিধা এবং শহর থেকে মোটরসাইকেল বা রিকশাযোগে সহজে যাওয়া যায়—এসবই এই এলাকাকে একটি প্রিয় গন্তব্যে পরিণত করেছে।

কাওয়াকোলা ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরুল হুদা বলেন, ‘আমরা যমুনার আগ্রাসন দেখেছি, নদীভাঙন দেখেছি। সেই জায়গাগুলো আজ বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ’



স্থানীয় ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম, নাসিমুর রহমান ও কাবুল হোসেন বলেন, ‘ঈদের কয়েকটি দিন আমরা স্বজনদের নিয়ে যমুনার পাড়ে যাই। নদীর রূপ এখন আরও আকর্ষণীয়, আর মানুষের ভিড়ও অনেক বেশি। ’

সাবেক জনপ্রতিনিধি আবুল হাসেম বলেন, ‘যমুনাপাড় এখন মিনি সমুদ্র সৈকতের মতো। কক্সবাজারের আনন্দ আমরা এখানেই পাচ্ছি। ’

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নাজমুল হোসাইন বলেন, ‘১৯৯৯ সালে হার্ডপয়েন্ট নির্মাণের পর থেকেই এলাকাটি বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। চলতি বছরের মে মাসে ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুক্তিযুদ্ধ ভাস্কর্য এটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। এছাড়াও চারটি ক্রসবার বাঁধ এলাকাও বিনোদনের তীর্থে পরিণত হয়েছে। ’

এসআরএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।