ঢাকা, শনিবার, ২৫ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৯ আগস্ট ২০২৫, ১৪ সফর ১৪৪৭

রাজনীতি

দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫:৫৬, আগস্ট ৯, ২০২৫
দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। ফাইল ছবি

পতিত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নেওয়া ও মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়া জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন দলটির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।  

শনিবার (৯ আগস্ট) রাজধানীর গুলশানের ইমানুয়েল পার্টি সেন্টারে জাতীয় পার্টির ১০তম কাউন্সিলে তিনি এ ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা দলীয়ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে কোনো বেআইনি কাজ করিনি। যদি নৈতিকভাবে কোনো ভুল হয়ে থাকে, কোনো ভ্রান্তি হয়ে থাকে তাহলে এই কাউন্সিলে দাঁড়িয়ে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে দেশবাসীর কাছে আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাই।

চুন্নু বলেন, আমরা রাজনীতি করতে গিয়ে অনেক সময় অনেক সিদ্ধান্তই দলীয়ভাবে সঠিক নেওয়া যায় না। আমরা বিগত অনেকগুলো নির্বাচন করেছি, অনেক সময় আমাদের অনেকে বিভিন্নভাবে কটূক্তি করে, বিভিন্ন দলের সহযোগী হিসেবে আমাদেরকে আখ্যায়িত করে।  

তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলকে বলব—জাতীয় পার্টি একটি শান্তিপূর্ণভাবে রাজনীতি করা দল। জাতীয় পার্টি একটি আধুনিক গণতান্ত্রিক দল বা মডার্ন ডেমোক্রেটিক পার্টি। সেই দলকে নিয়ে আমরা মানুষের সামনে এগিয়ে যেতে চাই, সব নিয়মকানুন ও আইন মেনে আমরা রাজনীতি করব। সেজন্য বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল ও সরকারসহ সবার সহযোগিতা চাই।

কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। স্বাগত বক্তব্য দেন কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। কাউন্সিলে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত রয়েছেন জাতীয় পার্টি-জেপির চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত আছেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ প্রমুখ।

জিএম কাদেরকে ছাড়াই সম্মেলন
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত ‍হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাই জিএম কাদেরকে ছাড়াই দলটির ১০তম কাউন্সিল চলছে।

নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব থেকে প্রয়াত এরশাদের ভাই দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের গত ৭ জুলাই সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলের ১০ নেতাকে অব্যাহতি দেন।

অব্যাহতিপ্রাপ্ত ওই নেতারা আদালতের দ্বারস্থ হলে ৩১ জুলাই জি এম কাদের ও যুগ্ম দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমের সাংগঠনিক কার্যক্রমের ওপর অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত।

এরপর জি এম কাদেরের অব্যাহতি দেওয়া দপ্তর সম্পাদক এম এ রাজ্জাক খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পার্টির কো-চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করার কথা বলা হয়।

গত শুক্রবার (৮ আগস্ট) সাংবাদিকদের ডেকে জাতীয় সম্মেলনের ঘোষণা দেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার ও মুজিবুল হক চুন্নু।

সেখানে বলা হয়, তারা আদালতের নির্দেশে দলের পদে বহাল হয়েছেন এবং তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়া জি এম কাদের দলীয় কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন।

চুন্নু তখন বলেন, দলকে সাংগঠনিক স্থবিরতা থেকে ‘মুক্ত করতে’ প্রেসিডিয়াম সভায় অতি দ্রুত সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়।

তিনি আরও বলেন, বিভক্তি শেষ করে দিয়ে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি করতে চাই।

এর আগে ২০১৯ সালের ২৮ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির সম্মেলন হয়েছিল।

স্বৈরাচার হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি বিভিন্ন সময়ে ভাঙনের শিকার হয়েছে। ২০১৯ সালে এরশাদের মৃত্যুর পর দলের কর্তৃত্ব নিয়ে তার ভাই জি এম কাদের ও স্ত্রী রওশন এরশাদের মধ্যে প্রকাশ্য বিরোধ হয়েছে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন পতিত ফ্যাসিবাদী সরকারের সঙ্গে উভয়পক্ষেরই সখ্য থাকার বিষয়টি ছিল প্রকাশ্য। এমনকি সংসদীয় বিরোধীদলের পাশাপাশি তাদের অনেকে হাসিনার সরকারের মন্ত্রিসভায়ও ছিলেন। আনিসুল-চুন্নুরাও হাসিনার মন্ত্রিসভায় থেকে নানা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছিলেন।  

এসএমএকে/এমইউএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।