প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে ইঙ্গিত করে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেছেন, দেশ ও জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলে জনগণ আপনাকে ছাড়বে না।
মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) মহাখালীতে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে গণমিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াত নেতা ডা. তাহের বলেন, জনগণের রক্তের ওপর দিয়েই জুলাই বিপ্লব সাধিত হয়েছে। তাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়েই আপনি এখন ক্ষমতায়। আপনি বা আপনার পরিবারের কোনো সদস্য আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত হননি। তাই নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করার রাষ্ট্রের প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে।
তিনি বলেন, সংস্কার ছাড়া নির্বাচন ঘোষণা করলে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতার শামিল হবে। আর দেশ ও জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলে তারা আপনাকে ছাড়বে না। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় থাকতে শুভবুদ্ধির পরিচয় দিতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির বলেন, গতানুগতিক পদ্ধতির নির্বাচন দেশ ও জাতির জন্য কোনো সুফল বয়ে আনবে না। স্বাধীনতার ৫৪ বছরে প্রায় সব নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের নির্বাচনসহ শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচনই নির্বাচন ছিল না। এসব নির্বাচনে ব্যাপক রিগিং, গণহারে সিল মারা, কেন্দ্র দখল, ডামি নির্বাচন, ব্যালট ছিনতাই, দিনের ভোট রাতে করাসহ ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব ছিল ভুয়া ও নির্বাচনের নামে প্রহসন।
ডা. তাহের বলেন, দেশে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হলে সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি তথা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চালু করতে হবে। এ পদ্ধতি চালু হলে নির্বাচনী অপরাধ থাকবে না, ভোট চুরি ও কেন্দ্র দখল হবে না, টাকার খেলা থাকবে না।
পিআর পদ্ধতির বিরোধীরা মাস্তানি ও অর্থের বিনিময়ে নির্বাচনে জয়ী হতে চায় মন্তব্য করে জামায়াতে এ নেতা বলেন, মূলত, যাদের প্রয়োজনীয় জনসমর্থন নেই, তারাই এ পদ্ধতির বিরোধিতা করছেন। তারা মাস্তানি ও অর্থের বিনিময়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে চান। কিন্তু জনগণ তাদেরকে সে সুযোগ দেবে না। পিআর পদ্ধতি ছাড়া অন্যকোনো পদ্ধতি তারা মেনে নেবে না।
নতুন স্বৈরাচারদেরও জনগণ মেনে নেবে না মন্তব্য করে ডা. তাহের বলেন, বিগত ১৫ বছর আওয়ামী-বাকশালীরা দেশে অপশাসন-দুঃশাসন চালিয়েছে। কিন্তু ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদেরকে লজ্জাজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছে। তারা আবার দৃশ্যপটে ফিরে আসার জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু বীর জনতা তাদের সে ষড়যন্ত্র কোনোভাবেই সফল হতে দেবেনা। যারা নতুন করে স্বৈরাচার হওয়ার চেষ্টা করছেন তাদেরকেও জনগণ কোন ভাবেই মেনে নেবে না।
তিনি বলেন, জামায়াত সত্য, ন্যায় ও ইসনাফ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে জামায়াত কারো সাথে আপোষ করবে না বরং দেশে টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও তা রক্ষার জন্য সবকিছু করবে।
জামায়াতে সরকারে আসলে দেশ বদলে যাবে মন্তব্য করে ডা. তাহের বলেন, আমরা বিএনপি- আওয়ামী লীগের শাসনামল দেখেছি। কিন্তু মানুষের মুক্তি মেলেনি। জনগণ তাদের অধিকারের নিশ্চয়তা পায়নি। আপনারা যদি আমাদেরকে এক বার সুযোগ দেন এবং আমাদের ওপর আস্থা রাখেন, তাহলে আমরা ৫৪ বছরের ইতিহাসই বদলে দেবো। দুর্নীতিবাজদের হয় দুর্নীতি ছাড়বে হবে, নয়তো জেলে যেতে হবে। আমাদের মন্ত্রী-এমপিরা শুল্কমুক্ত গাড়ি কিনবেন না বা সরকারি প্লট গ্রহণ করবেন না।
গণঅভ্যুত্থানের সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, দেশের কিছু মানুষ ও চিহ্নিত রাজনৈতিক দল ছাড়া সবাই জুলাই মুক্তিযোদ্ধা; তাই এ বিষয়ে কোনো বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ নেই।
ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড. মুহাম্মদ রেজাউল করিমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সহকারী সেক্রেটারি মাহফুজুর রহমান, নাজিম উদ্দীন মোল্লা, ডা. ফখরুদ্দীন মানিক ও ইয়াছিন আরাফাত, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য জিয়াউল হাসান, জামাল উদ্দিন, ঢাকা মহানগরী উত্তরের প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক মো. আতাউর রহমান সরকার এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের কর্মপরিষদ সদস্য নাসির উদ্দীন প্রমুখ।
টিএ/এমইউএম