ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২, ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১০ সফর ১৪৪৭

রাজনীতি

জুলাই গণঅভ্যুত্থান

খেলা শুরুর পর জনতার ভয়ে পলাতক শামীম ওসমান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:০৬, আগস্ট ৫, ২০২৫
খেলা শুরুর পর জনতার ভয়ে পলাতক শামীম ওসমান শামীম ওসমান (ফাইল ফটো)

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জে জুলাই আন্দোলনের মাধ্যমে পতন ঘটে ওসমান পরিবারের। দেড় দশকের জিম্মি দশা থেকে মুক্তি পায় নারায়ণগঞ্জবাসী।

বিভিন্ন সময় বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে ‘খেলা হবে’ বলে হুঙ্কার দিয়ে এলেও খেলা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পালিয়ে যান শামীম ওসমান।

নারায়ণগঞ্জে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সশস্ত্র হামলা চালান শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা। দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি হামলায় অংশ নেন শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমান, শ্যালক তানভীর আহমেদ টিটু, বেয়াই সালাউদ্দিন লাভলু ও অয়নের শ্যালক ভিকি।

শহরের রাইফেল ক্লাব থেকে লুট করে অত্যাধুনিক বিভিন্ন অস্ত্র নিয়ে সেদিন নারায়ণগঞ্জে আন্দোলনকারীদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন শামীম ওসমান। দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে ডিআইটি এলাকায় অস্ত্র নিয়ে গুলিবর্ষণ করেন এবং তাণ্ডব চালান শামীম ওসমান।

১৯ জুলাই শুক্রবার জুমার নামাজের পর শহরের চাষাঢ়া নূর মসজিদ, ডিআইটি মসজিদসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ছাত্র জনতার কর্মসূচি শুরু করার কথা ছিল। জুমার নামাজের আগেই বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের ভেতরে ও নির্মাণাধীন ভবনে অবস্থান নিতে থাকে আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডাররা। জুমার নামাজ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ আগে সেখানে উপস্থিত হন শামীম ওসমান ও তার পুত্র অয়ন ওসমান।

এদিকে ডিআইটি এলাকা থেকে জুমার নামাজ শেষে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ছাত্র জনতা। চাষাঢ়া নূর মসজিদ থেকেও একটি মিছিল বের হয়ে চাষাঢ়ার দিকে যেতে থাকে। এমন সময় হঠাৎ নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের ভেতর থেকে হামলা চালায় আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা। মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সামনে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এসময় শামীম ওসমান ও তার বেয়াই সালাউদ্দিন লাভলু, ভিকি, তানভীর আহমেদ টিটু, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কয়েকশ নেতাকর্মী নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের সামনে অবস্থান নেন। একসময় শামীম ওসমান ও তার অনুসারীরা পিস্তল, শর্টগান ও অটোমেটিক মেশিনগান দিয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে ডিআইটি এলাকার দিকে অগ্রসর হন।

এসময় চাষাঢ়া থেকে ডিআইটি এলাকা পর্যন্ত চলমান এই সংঘাত ও গোলাগুলিতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন শামীম ওসমান। এ সময় শহরের আলী আহমেদ চুনকা পাঠাগারের সামনে আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মী কোণঠাসা হয়ে পড়লে বাহিনী নিয়ে অগ্রসর হন শামীম ওসমান। এক পর্যায়ে শামীম ওসমানকেও অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে চুনকা পাঠাগারের সামনে মহড়া দিতে দেখা যায়।

দিনভর সংঘর্ষের পর সন্ধ্যায় পিছু হটে শামীম ওসমান ও তার সশস্ত্র ক্যাডাররা। এক পর্যায়ে ছাত্র জনতার প্রতিরোধের মুখে নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে পালিয়ে যান তারা।

পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগের পতনের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত শহরের প্রাণকেন্দ্র চাষাঢ়ায় অস্ত্রবাজি করতে দেখা গেছে শামীম ওসমানের অনুসারীদের। তবে দুপুরের পর পাল্টে যায় দৃশ্যপট। আওয়ামী লীগের পতনের খবরে বিজয় উল্লাস করতে থাকে জনতা। নারায়ণগঞ্জে ওসমান পরিবারের সদস্যদের অফিস, বাড়ি ও বিভিন্ন টর্চার সেলে হানা দেয় ছাত্র জনতা।

এদিকে শেখ হাসিনার পালানোর খবর পেয়েই আত্মগোপনে চলে যান শামীম ওসমান। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে পালিয়ে ভারতে অবস্থান নেন শামীম ওসমান। ২৫ সেপ্টেম্বর দিল্লির নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার দরবারে দেখা মেলে শামীম ওসমানের।

জানা যায়, ভারতে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে বেশ কয়েকবার দেখা করার চেষ্টা করেছিলেন শামীম ওসমান। তবে ভারত সরকার শেখ হাসিনার সাথে কাউকে দেখা করতে দেয়নি। পরবর্তী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দুবাই চলে যান তিনি। এক সময় পুরে শহর দাপিয়ে বেড়ানো হুঙ্কার দেওয়া ‘বাঘ’ বর্তমানে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

এমআরপি/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।