ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২, ৩০ জুন ২০২৫, ০৪ মহররম ১৪৪৭

রাজনীতি

ঐকমত্যের জন্য আলোচনা, নাকি ১০০ শতাংশ সম্মতি আদায় প্রশ্ন সালাহউদ্দিনের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১:৫০, জুন ২৯, ২০২৫
ঐকমত্যের জন্য আলোচনা, নাকি ১০০ শতাংশ সম্মতি আদায় প্রশ্ন সালাহউদ্দিনের জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। ছবি: শাকিল আহমেদ

ঢাকা: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সব প্রস্তাবে ১০০ শতাংশ সম্মতি আদায়ের বাধ্যবাধকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।  

তিনি বলেন, যদি সব বিষয়েই একমত হতে হয়, তাহলে আলোচনার জন্য ডাকার যৌক্তিকতা কী?

রোববার (২৯ জুন) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ঐকমত্য কমিশনে আমাদের একটা শর্ত ছিল যে, এনসিসির মতো বা সাংবিধানিক নিয়োগ কমিটির মতো কোনো বিষয় এখানে থাকলে আমরা সেই বিবেচনাটা আগের প্রস্তাব অনুসারে যেতে হবে আমাদের। সেই বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। রাষ্ট্রপতির নির্বাচন ক্ষেত্রে আমরা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে এমপিরা ভোট দিতে পারবে সেই বিষয়ে একমত হয়েছি। তো ঐকমত্য তো পোষণ হচ্ছে। এখন যদি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সব প্রস্তাবে যদি আমাদের ১০০ শতাংশ একমত হতে বলে তাহলে আলোচনার জন্য ডাকা হলো কেন? 

তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য পোষণ হলে যে সব বিষয়গুলোতে দলগুলো একমত হবে, সেই বিষয়গুলো একত্রিত করে জুলাই সনদ বা জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার কথা। তো এখন এখানে যদি আমাদের বাধ্য করা হয় যে এ সব বিষয়ে একমত হতেই হবে, সেটা তো সঠিক হলো না।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আজকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে আলোচনার জন্য দুইটা বিষয় নির্ধারিত ছিল। প্রথম বিষয় সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ কমিটি। দ্বিতীয় বিষয় দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট। তার মধ্যে নিম্ন কক্ষ আছে। এ দুইটা বিষয়ের প্রথম ভাগের আলোচনায় সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান নিয়োগ কমিটি যেটা গত আগের দিনের আলোচনাতেও ছিল এর আগেও ছিল, এনসিসি নামে। তারপরে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান নিয়োগ কমিটি এ নামে ছিল তারপরের দিন। আজকেও একইভাবে এসেছে। এখানে সংস্কার কমিশনের জাতীয় ঐক্য কমিশনের পক্ষ থেকে কয়েকটি বিষয়ে সংযোজন সংশোধন করে আজকে উপস্থাপন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমাদের বক্তব্য আগের মতোই। আমরা সাংবিধানিক বিভিন্ন সংস্থা কমিশন এবং সংবিধিবদ্ধ সংস্থা কয়েকটি। এর নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের মতামত আগে। যেভাবে ছিল এখনো আছে আমরা চাই সমস্ত সংস্থাগুলোরসহ আইন যেগুলো আছে তার মধ্যে আমরা সংশোধন আনি এবং সেই আইনগুলোকে সংস্কার করে আরও স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা আমরা নিশ্চয়তা বিধান করি এবং সেই গঠন প্রক্রিয়াটা আরও শক্তিশালী, তার মধ্য দিয়ে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো আমরা আরও জন আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিলিয়ে, ভবিষ্যতে আমরা সেই প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্মাণ করতে পারব।

বিএনপির এ নেতা বলেন, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও একই বিদ্যমান আইন যেমন দুর্নীতি দমন কমিশনের বিষয়টি এখানে আসছে। বিদ্যমান আইনে অনেক সংস্কার প্রয়োজন। আমরা প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারের মধ্য দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের নিজস্ব, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা নিশ্চয়তা বিধান করতে চাই। এবং একই সঙ্গে একটি শক্তিশালী দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যকর দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন এ কথাগুলো আমরা বলেছি এবং আরও অন্যান্য কমিশন এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত আরও যদি সংস্থা থাকে সব বিষয়েই ঐকমত্যের ভিত্তিতে আমরা আইন প্রণয়নের মধ্য দিয়ে সেই নিয়োগ বিধিটাসহ আইনে, কারণ আমরা রাষ্ট্রের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ এবং আইনসভা সবগুলো একটা ভারসাম্যমূলক কর্মকাণ্ড বা ভারসাম্যমূলক একটা রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চাই এবং সব বিভাগের যার যার আওতাধীন স্বাধীনভাবে আইন কর্মকাণ্ড যাতে পরিচালনা করতে পারে সেই ব্যবস্থাটা আমরা প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এ বিষয়ে এখানেই আমার বক্তব্য শেষ আর দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের ক্ষেত্রে আমাদের দলীয় প্রস্তাব যেটা আমাদের ৩১ দফা ছিল সেই প্রস্তাবেই আমরা আবার দিয়েছি, আমরা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে ১০০ সদস্য বিশিষ্ট উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা করতে চাই এবং সেই ১০০ সদস্য পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে অর্থাৎ জাতীয় সংসদে প্রাপ্ত আসনের ভিত্তিতে সেটা নির্বাচিত হবে এবং তার পাওয়ার ফাংশনের মধ্যে আমরা যে সমস্ত বিষয় এখানে আলোচনা হয়েছে, সেটা একটু পরে বলবো। তার আগে গঠন প্রক্রিয়ার মধ্যে আমরা এখনো একমত হতে পারিনি। কারণ এখানে বিভিন্ন রকম প্রস্তাব এসেছে। পপুলার ভোটের সংখ্যানুপাতে নেওয়ার প্রস্তাব এসেছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ পপুলার ভোটে আর ৫০ শতাংশ নির্ধারিত বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে। যেমন এখানে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানী, মানবাধিকার কর্মী, নারী এবং সমাজের পিছিয়ে পড়া অংশ থেকে বিভিন্ন শ্রেণি, বিভিন্ন পেশায় মানুষের পক্ষ থেকে নেওয়ার বিষয়ে একটা আলোচনা এসেছে। তো এগুলো এখনো পর্যন্ত আলোচনা নিষ্পত্তি হয়নি। সুতরাং এখানেই সেটা অনিষ্পন্ন রয়ে গেল। আমরা দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট প্রতিষ্ঠার জন্য একমত। ১০০ সদস্য বিশিষ্ট পার্লামেন্ট সেই উচ্চপক্ষ প্রতিষ্ঠা হোক সে বিষয়ে একমত। তবে নির্বাচন প্রক্রিয়া কীভাবে হবে? সেই বিষয়ে যদি কোনো আরও সুন্দর প্রস্তাব আসে, গ্রহণযোগ্য প্রস্তাব আসে দেশের স্বার্থে জনগণের সঙ্গে আমরা সেটা বিবেচনা করব। কিন্তু সেরকম কোনো প্রস্তাব এখনো পর্যন্ত উঠে আসেনি।

তিনি বলেন, নিম্নকক্ষের বিষয়ে অর্থাৎ বিদ্যমান যেটা আমরা জাতীয় সংসদ হিসেবে জানি। সেখানে বর্তমান পদ্ধতি যেভাবে নির্বাচিত হয় সরাসরি নির্বাচনের ক্ষেত্রে সংসদীয় আসন। সেই এ জাতীয় কমিশনের পক্ষ থেকে লিখিত প্রস্তাবে সেটাই বলা হয়েছে। আমরা সেটাতে একমত। হয়তো দুই একটি দল আলাদা কোনো মতামত থাকতে পারে। এখন এ দুইটি বিষয়েই আজকে অনিষ্পন্ন রয়ে গেল।

‘আজ জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে কিছু হতাশায় প্রকাশ করা হয়েছে এসব রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে আসতে পারছে না এবং এর কারণে তারা যে জুলাই সনদ দিতে চাচ্ছিল বা জাতীয় সনদ যেটা বলছে সেটাও তারা দিতে পারছে না।  

বিএনপির অবস্থানটা কি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত জুলাই সনদ বলি বা জাতীয় সনদ বলি। এ বিষয়ে স্বাক্ষরিত হওয়ার জন্য সবচাইতে বেশি আন্তরিকতা আমরা প্রদর্শন করেছি। আমরা জাতীয় মূলনীতির ক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান জানিয়েছি। আমরা কি বিষয়ে একমত? আমরা ৭০ অনুচ্ছেদের ব্যাপারে আমাদের পজিশন জানিয়ে আমরা সেখানে একমত হয়েছি এবং সেটা জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত হবে। সবাই সেটায় একমত হয়েছি এবং এরপরে পার্লামেন্টের স্থায়ী কমিটিগুলোতে সভাপতিত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে বিরোধী দলের কাছে সভাপতিত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা তখন একমত হয়েছি, চারটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটিসহ আর আসনের সংখ্যার অনুপাতে যা পাবে বিরোধী দল, সেখানে হয়তো এক তৃতীয়াংশ আসতে পারে সেগুলোর বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের ক্ষেত্রে যেটা জীবদশায় বা সারাজীবনে কোনো ব্যক্তি ১০ বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী আসনে বহাল থাকবেন না, সে বিষয়ে আমরা একমত হয়েছি। রাষ্ট্রপতির নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা গোপন ব্যালটের মাধ্যমে স্বাধীনভাবে এমপিরা ভোট দিতে পারবে সেই বিষয়ে একমত হয়েছি।

ইএসএস/আরআইএস
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

রাজনীতি এর সর্বশেষ