ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২, ১৭ মে ২০২৫, ১৯ জিলকদ ১৪৪৬

রাজনীতি

নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্নেই জুলাই গণঅভ্যুত্থান: যুবশক্তির আহ্বায়ক

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯:৩৫, মে ১৬, ২০২৫
নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্নেই জুলাই গণঅভ্যুত্থান: যুবশক্তির আহ্বায়ক

ঢাকা: নতুন রাষ্ট্র ও রাজনীতির আকাঙ্ক্ষাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন সদ্য আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. তারিকুল ইসলাম।

শুক্রবার (১৬ মে) বিকেলে রাজধানীর গুলিস্তানে শহীদ আবরার ফাহাদ এভিনিউতে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুব সংগঠন ‘জাতীয় যুবশক্তি’ আত্মপ্রকাশ করে।

অনুষ্ঠানে ১৩১ সদস্য বিশিষ্ট জাতীয় যুবশক্তির আহ্বায়ক হিসেবে অ্যাডভোকেট মো. তারিকুল ইসলাম, সদস্য সচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম ও মুখ্য সংগঠক ইঞ্জিনিয়ার ফরহাদ সোহেলের নাম ঘোষণা করা হয়।
পরে সংগঠনের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. তারিকুল ইসলাম। ঘোষণাপত্রের শুরুতেই তিনি জুলাইয়ের সকল শহীদ ও আহতদের আত্মত্যাগকে স্মরণ করেন।

তিনি বলেন, জাতীয় যুবশক্তি বিশ্বাস করে, ইতিহাসের প্রতিটি মৌলিক পরিবর্তনের নেতৃত্ব দিয়েছে তরুণেরা। এখন সময় এসেছে একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও নতুন প্রজাতন্ত্র নির্মাণের। আমরা দাঁড়িয়ে আছি এক ধারাবাহিক লড়াইয়ের সন্ধিক্ষণে—যার সূচনা হয়েছিল ১৯৪৭ সালের উপনিবেশবিরোধী আজাদীর লড়াইয়ে। পরবর্তীতে তা রূপ নেয় ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে এবং এক নতুন দিশা ও প্রত্যয়ের জন্ম দেয় ২০২৪-এর ঐতিহাসিক ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে।

এই অভ্যুত্থান কেবল ক্ষোভের বিস্ফোরণ নয়—এটি ছিল একটি নতুন রাজনৈতিক কল্পনার জন্মমুহূর্ত, যেখানে তরুণেরা স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছে: বর্তমান ব্যবস্থা আর চলতে পারে না, প্রয়োজন এক নতুন রাষ্ট্রকল্প, এক নতুন পথ। নতুন রাষ্ট্র ও রাজনীতির আকাঙ্ক্ষাই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করেছিল। যুবশক্তি জুলাই গণঅভ্যুত্থানেরই ধারাবাহিকতা।
জাতীয় যুবশক্তি দায় ও দরদের রাজনীতি চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেখানে নেতৃত্ব মানে দায়িত্ব গ্রহণ, সহানুভূতি, সহনশীলতা এবং নাগরিক সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নেওয়া। দায়, সহানুভূতি ও মানবিকতা ছাড়া রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী গড়ে তোলা সম্ভব নয়। দায় ও দরদের রাজনীতিই অধিকার ও সংহতির ভিত্তি।

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই এমন এক বাংলাদেশ, যেখানে নাগরিক মর্যাদা থাকবে শুধু কাগজে নয়, বাস্তব জীবনে প্রতিফলিত হবে। যেখানে রাষ্ট্র সকল ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম ও জাতিসত্তার মর্যাদা দেবে। যেখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কেবল স্লোগান নয়, রাষ্ট্রীয় নীতির ভিত্তি হবে। যেকোনো ধর্মবিদ্বেষ ও উগ্রতাকে পরিহার করে বৃহত্তর জনগণের ধর্মবোধ ও সামাজিক-নৈতিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে আমরা সম্প্রীতি, ইনসাফ ও নাগরিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে চাই।

‘বাংলাদেশপন্থা’ আমাদের রাজনৈতিক চিন্তার স্বতন্ত্র মেরু উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের ইতিহাস, ভূগোল, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও মানুষের সংগ্রাম থেকে উৎসারিত একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রচিন্তা। এটি একাধারে ফ্যাসিবাদবিরোধী এবং আগ্রাসনবিরোধী। আমরা কোনো গ্লোবাল শক্তির ছায়ায় নয়, বাংলাদেশের নিজস্ব দিশা, আত্মমর্যাদা ও জাতীয় স্বার্থে বিশ্বাস করি।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশ কেবল একটি রাষ্ট্রীয় সীমানা নয়, এটি একটি বদ্বীপীয় সভ্যতা। যা বহু ভাষা ও সংস্কৃতিভিত্তিক, পাহাড় থেকে নদী পেরিয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। এই অঞ্চলে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক ও কৌশলগত শক্তি হিসেবে নেতৃত্ব নিতে হলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সভ্যতাগত রূপান্তর প্রয়োজন। আমরা বিশ্বাস করি, দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন পথ দেখাবে বাংলাদেশ।

জাতীয় অর্থনীতির প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা চাই একটি জাতীয় অর্থনীতি, যা কেবল প্রবৃদ্ধির হিসাব নয়, ইনসাফ ও সমতার ভিত্তিতে গড়ে উঠবে। যেখানে কাজ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রযুক্তি হবে সবার নাগালে। তরুণদের জন্য কর্মসংস্থান, উদ্ভাবন ও সৃজনশীলতার সুযোগ থাকবে। দুর্নীতিমুক্ত ও মেধাভিত্তিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ার জন্য কাজ করবে যুবশক্তি।

গণতন্ত্র ও সুশাসনের প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা চাই এমন এক কাঠামো, যা কেবল ভোটেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। প্রতিটি সিদ্ধান্ত, আইন ও নীতিতে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশন স্বাধীন হবে, বিচার বিভাগ হবে দলনিরপেক্ষ, স্থানীয় সরকার হবে ক্ষমতাসম্পন্ন এবং তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে সরকার হবে স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক।

সবকিছুর কেন্দ্রে রয়েছে আমাদের প্রধান দাবি-একটি নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ও নতুন প্রজাতন্ত্র। আমরা বিশ্বাস করি, সময় এসেছে নতুন সংবিধান ও নতুন রাজনৈতিক চুক্তির, যা বর্তমান প্রজন্মের মর্যাদা ও সুযোগ নিশ্চিত করবে। ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহি, ন্যায্যতা, পরিবেশ ও প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার মতো একটি ভবিষ্যতমুখী রাষ্ট্রব্যবস্থা গঠন করতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা সেই প্রজন্ম, যারা অতীত জানে, বর্তমান দেখে এবং ভবিষ্যৎ নির্মাণে ভয় পায় না। আমরা ৪৭-এর আজাদীর আত্মা বহন করি, ৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামের আত্মত্যাগে অনুপ্রাণিত, আর ২৪-এর অভ্যুত্থানের অঙ্গীকারে শপথবদ্ধ। আমরা কেবল উত্তরাধিকার নই-আমরাই আগামী। আগামীর সংসদ ও আগামীর বাংলাদেশ হবে তরুণদের, নতুনদের।  

এ সময় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়কারী নাসিরুদ্দীন পাটোয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়কারী হান্নান মাসাউদসহ অন্যান্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এসসি/এসআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।