বৃহস্পতিবার (৯ মে) রাজধানীর সায়েন্সল্যাবরেটরির অদূরে মিরপুর রোড-গ্রিণ রোড সংযোগস্থলে নির্মিত সুদৃশ্য ‘অর্ঘ্য’র সামনে “বন্ধ কর অনবদ্য ‘অর্ঘ্য সড়কদ্বীপ’ বিধ্বংসী কার্যক্রম! রক্ষা কর এই সুন্দর সবুজ নান্দনিক স্থাপনা ও পরিবেশ!”- দাবিতে এ নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে হাসপাতাল, বাসা-বাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি বিজ্ঞান গবেষণাগার সংলগ্ন অধিক ট্রাফিক ও জনবহুল স্থানে বিদ্যমান তেল-গ্যাস পাম্প ভবনসহ জন-নিরাপত্তায় ঝূঁকিপূর্ণ সকল স্থাপনা অবিলম্বে অপসারণেরও দাবি জানানো হয়।
সমাবেশের আয়োজন করে- বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), গ্রিন ভয়েস, ডব্লিউবিবি ট্রাষ্ট, ব্লু প্ল্যানেট ইনিশিয়েটিভ, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ-স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ও ঢাকা ইয়ুথ ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল।
বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবীব এর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন- বাপা’র সহ-সভাপতি, বিশিষ্ট লেখক ও বুদ্ধিজীবি সৈয়দ আবুল মকসুদ, বিশিষ্ট শিল্পানুরাগী, নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশিদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস, প্রকৃতি ও নগর সৌন্দর্যবিদ রাফেয়া আবেদীন, বাপা’র যুগ্ম সম্পাদক মিহির বিশ্বাস, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন, নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের ইবনুল সাঈদ রানা, গ্রিন ভয়েসের টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শাখার সমন্বয়ক নাজনীন তিতলী প্রমুখ।
সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, এখানকার সবুজে ঘেরা পার্কটি একদিনে নয়, কয়েক বছর ধরে গড়ে উঠেছে। এর পেছনে অনেক শ্রম দেওয়া হয়েছে। সেই শ্রম ও কষ্টকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দুষ্ট বুদ্ধির লোকেরা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে দেশের পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে, যা দেশের জনগণের সঙ্গে তামাশার সামিল।
তিনি বলেন, এখন দেশে ভূমিদস্যু ও লুটেরারা তাদের স্বার্থে নদী, খাল ও মাঠ দখল করেই যাচ্ছে। তারা হাসপাতাল বানানোর নামে অত্যন্ত সু-কৌশলে এই সুদৃস্য সবুজে ঘেরা পার্কটি গ্রাস করার পাঁয়তারা করছে। তারা যদি এ অবস্থা থেকে পিছিয়ে না যায়, তাহলে অনশনসহ কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
সভাপতির বক্তব্যে স্থপতি ইকবাল হাবীব বলেন, ঠিক যেই মুহূর্তে বাংলাদেশের সকল দখলদারদের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন, সেই মুহূর্তেই সরকারি প্রতিষ্ঠানের নাকের ডগায় বসে তারা ঢাকার পরিবেশ ও প্রকৃতি ধ্বংসের লীলায় মত্ত।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি মেয়রের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, সেই প্রতিশ্রুতি পালন করেন। যানজট নিরসনের সভাপতি হিসেবে আপনার জানা উচিত কোনো সৌন্দর্যমণ্ডিত স্থাপনার ১০০ মিটারের মধ্যে কোনো ভবন নির্মাণ করা আইন পরিপন্থি। সিটি করপোরেশনের অসাদু কর্মকর্তাদের মদদেই এ কর্মকাণ্ড চলছে। আমরা দেখতে চাই আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আপনি দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে প্রমাণ করবেন যে আপনি জনগণের প্রকৃত নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং আপনার কাজ শুধুই জনকল্যাণমূলক। এর সমাধান ছাড়া আমরা আমাদের অবস্থান থেকে সরে আসবো না।
মামুনুর রশিদ বলেন, কারা যেন গোটা ঢাকা শহরকে একটা দোকান বানানোর চেষ্টায় সদা লিপ্ত। তারা ঢাকা শহরে মানুষ, পশু, পাখি ও কীট-পতঙ্গের উপস্থিতি সহ্য করতে পারেছেনা। সে জন্যে সিটি করপোরেশনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার মদদে তারা এই স্থান ধ্বংসের চক্রান্ত করছে। তাদের এই চক্রান্ত ধানমন্ডিবাসী সহ্য করবে না।
গোলাম কুদ্দুস বলেন, বর্তমানে ঢাকা সিটিকে একটা গুদামঘরে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। যে গুদামঘরে থাকবে শুধু মানুষ। এখানে বসবাস করা পশু, পাখি ও কীট-পতঙ্গগুলো কোথায় থাকবে সেই ভাবনা তাদের নেই। বাণিজ্যিক মনোভাবের ফলশ্রুতির এ জঘন্য কর্মকাণ্ড আমরা কোনোভাবেই সফল হতে দেবনা।
সমাবেশে বিভিন্ন সাহিত্যিক, নাট্যকার, অভিনেতা, স্থপতি, নগর পরিকল্পনাবিদ, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, সামাজিক আন্দোলনের নেতাকর্মীসহ স্থানীয় অধিবাসীরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৯ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৯
এইচএমএস/এসএ