ঢাকা, রবিবার, ৯ ভাদ্র ১৪৩২, ২৪ আগস্ট ২০২৫, ০০ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

জিডিপির ২.০৫ শতাংশের সমান ক্ষতি পারিবারিক সহিংসতায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৫০, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
জিডিপির ২.০৫ শতাংশের সমান ক্ষতি পারিবারিক সহিংসতায় ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিপোর্ট-২০১৯ প্রকাশ অনুষ্ঠান

ঢাকা: দেশে ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ নারী তাদের জীবনসঙ্গীর দ্বারা কোনো না কোনো সহিংসতার শিকার হন। পারিবারিক সহিংসতায় ক্ষতির পরিমাণ যা দাঁড়ায়, তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশের সমান।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ওয়ার্ল্ড পপুলেশন রিপোর্ট-২০১৯ প্রকাশ অনুষ্ঠানে বুধবার (১৭ এপ্রিল) এমন সব তথ্য জানায় জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল ইউএনএফপিএ।

সংস্থাটির বাংলাদেশ প্রতিনিধি ড. আশা তর্কেলসন ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন পপুলেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-আইসিডিপি ইন বাংলাদেশ ওভারভিউ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন উপস্থাপন করে বলেন, কাজ করছেন এমন মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ শতাংশ।

কমেছে বাল্য বিয়ে। স্কুলগামীদের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮ শতাংশ। প্রাথমিকে মেয়ে শিশু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৮ শতাংশ। মাধ্যমিকেও কন্যা শিশুর অংশগ্রহণের হার বেড়েছে, তবে শিক্ষাক্রম শেষ করার হার এখনো খুব কম। আর তরুণদের মধ্যে কর্মহীনদের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১ শতাংশ।
 
তিনি বলেন, রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন বেড়েছে। সংসদে ২০ শতাংশ, স্থানীয় সরকার ২৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। তবে বাংলাদেশে নারীরা সমাজে নিম্ন মর্যাদার, পুরুষের ওপর নির্ভরশীল। মূলত এটাই ঘরে-কর্মক্ষেত্রে শারীরিক নির্যাতন, যৌন নির্যাতন, পাচার, এসিড নিক্ষেপ এবং বাল্য বিয়ের জন্য দায়ী। ৭২ দশমিক ৬ শতাংশ নারী তাদের জীবনসঙ্গীর দ্বারা কোনো না কোনো সহিংসতার শিকার হন। দেশে পারিবারিক সহিংসতায় ক্ষতির হার খুব বেশি। পারিবারিক সহিংসতায় ক্ষতির পরিমাণ যা দাঁড়ায়, তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ২ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশের সমান।

ড. আশা তর্কেলসন বলেন, শুধু করণীয় নির্ধারণ করলেই হবে না, পলিসি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে মেয়ে ও মহিলাদের সকল দিক থেকে সমান সুযোগ দিয়ে তাদের জীবনের সুরক্ষা দিতে হবে।
 
ইউএনএফপিএ তাদের রিপোর্টে জানায়, প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে ষাটের দশকে শুরু হওয়া বৈশ্বিক আন্দোলন নিজের ওপর নারীদের নিয়ন্ত্রণ এবং নিজের ভবিষ্যৎ নিজে গড়ার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বদলে দিয়েছিল শত লক্ষ নারীর জীবন। ইউএনএফপিএ, জাতিসংঘের যৌন এবং প্রজনন স্বাস্থ্য এজেন্সি প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিগত ৫০ বছরে সব অরজনের পরেও সকল মানুষের অধিকার এবং পছন্দ নিশ্চিত করতে পৃথিবীকে এখনও যেতে হবে অনেক দর।  

‘আনফিনিশড বিজনেস: দ্য পারস্যুট অফ রাইটস অ্যান্ড চয়েসেস ফল অল’ শিরোনামের এই রিপোর্টটি দু’টি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ্যকে সামনে রেখে বিশ্বজুড়ে প্রজনন স্বাস্থ্যের অগ্রগতি অনুসন্ধান করেছে।
 
রিপোর্টটি বলছে, ১৯৬৯ সালের পর থেকে অনেক অর্জন হয়েছে। নারী প্রতি জন্মহারের গত সংখ্যা ছিল ৪ দশমিক ৮। বর্তমানে এটি কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৫। গর্ভধারণ সম্পর্কিত কারণে মৃত্যুবরণ করে এমন নারীর সংখ্যা প্রতি লাখে ৩৬৯ জন থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ২১৬ জন। আর জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারী নারীর সংখ্যাও ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮ শতাংশ। তবে এখনো বিশ্বের ২০ কোটি নারী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি সেবা থেকে বঞ্চিত।
 
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান এমপি, জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো, ড. বারাকাত-ই-খুদা, ড. মুজাফফর আহমেদ, বরগুনা থেকে আগ এক স্কুল শিক্ষিকা সোহেলি পারভিন।
 
বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে মুরাদ হাসান বলেন, ১০ শতাংশ হাসপাতালে থার্মোমিটার আছে। এই খবর আমার জন্য খুব পেইনফুল। বিষয়টি আমি দেখবো। আশা করি সমস্যার সমাধান হবে। আর এক্সরে মেশিন অধিকাংশ হাসপাতালে নেই বা কাজ করছে না। এজন্য আগামী বাজেটেই অর্থের সংকুলান করে সমস্যার সমাধান করা হবে।
 
তিনি আরো বলেন, শিশু মৃত্যু হার ও মাতৃমৃত্যু হারের প্রতিবেদন দ্রুত প্রকাশ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
 
বক্তারা আরো বলেন, পৃথিবীর বর্তমান জনসংখ্যা ৭শ’ ৪০ কোটি। আর বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ১৭ লাখ। এর অর্ধেক নারী। নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ করতে কিংবা নারী প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত অধিকার নিশ্চিত করতে শিক্ষাঙ্গন, পরিবার ও রাষ্ট্র কাঠামোয় ব্যবস্থা নিতে হবে। নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০১৯
ইইউডি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।