ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ আষাঢ় ১৪৩২, ০৮ জুলাই ২০২৫, ১২ মহররম ১৪৪৭

জাতীয়

দিপুর কফিনের দিকে কেবল চেয়ে রইলেন মা...

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১:১৪, নভেম্বর ২৫, ২০১৮
দিপুর কফিনের দিকে কেবল চেয়ে রইলেন মা... ছেলের কফিনের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন মা ফেরদৌস আরা বিউটি। ছবি: বাংলানিউজ

ঈশ্বরদী (পাবনা): স্বামী চিরবিদায় নেওয়ার পর এই ছেলেই ছিল তার স্বপ্ন। তাকে ঘিরেই যেন ছিল সব আশা-ভরসা। প্রতিবার বাড়ি থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার সময় হয়তো অশ্রু মুছতেন, কিন্তু গর্বে বুকটা ভরে থাকতো তার। কিন্তু এবার ছেলেটা চলে যাচ্ছে, হাতও নাড়ছেন না তিনি, মুছছেন না অশ্রুও, কেবল চেয়ে রইলেন ছেলের নিথর দেহবাহী কফিনের দিকে।

উইং কমান্ডার আরিফ আহমেদ দিপুর পাবনার ঈশ্বরদীর গ্রামের বাড়িতে নামাজে জানাজা শেষে তার মরদেহ হেলিকপ্টারযোগে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার সময় মা ফেরদৌস আরা বিউটির (৫৮) এমন শোকাতুর চাহনি যেন পরিবেশকেই ভারী করে তুলেছিল।

শুক্রবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রসুলপুরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ফায়ারিং রেঞ্জে প্রশিক্ষণ প্লেন বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারান প্লেনটির পাইলট আরিফ আহমেদ দিপু।

শনিবার (২৪ নভেম্বর) তার গ্রামের বাড়িতে প্রথম নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়। পরে সেখানকার আলহাজ্ব মিলস উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ থেকে দিপুর মরদেহ নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হয় বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর এমআই -৭০ এমই ৪৬৫ নম্বর হেলিকপ্টার।

সংসারের চালিকাশক্তি সন্তানের সন্তানের এমন বিদায়ে ফেরদৌস আরা বিউটি যেন শোকে পাথর হয়ে থাকলেন। তার সন্তান শেষবারের মতো ‘এসে’ আবার চলে যাচ্ছে, এমন শোকের ভার নিতে হবে, যেন ভাবতেও পারছিলেন না তিনি।

এর আগে পাবনার প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দিপুর চাচাতো ভাই আব্দুল লতিফের কাছে তার মরদেহ হস্তান্তর করেন বিমানবাহিনীর এয়ার কমোডর মোহাম্মদ ইউসুফ আহম্মেদ ও উইং কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম। দিপুর কফিন নিয়ে হেলিকপ্টারটি বিদ্যালয় মাঠে পৌঁছালে স্বজনদের কান্নায় পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সম্পন্ন হয় জানাজা। এতে অংশ নেন দিপুর স্বজন, শুভানুধ্যায়ীসহ এলাকাবাসী।

দিপুর চাচাতো ভাই আব্দুল লতিফ বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্বামীকে হারানোর পর একমাত্র ছেলে, দুই মেয়ে ও নাতি-নাতনি নিয়েই চাচি বেঁচে ছিলেন। ছেলে হারিয়ে তিনি এখন শোকে স্তব্ধ গেছেন। দিপুর ইষিকা (১০) ও ইশাম (৮) নামের দু’টি সন্তান রয়েছে। ’

দিপুর স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন- পাবনা জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন, পাবনা পুলিশ সুপার (এসপি) শেখ রফিকুল ইসলাম, পাবনা র‌্যাব-১২  উইং কমান্ডার আব্দুল আহাদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মকলেছুর রহমান মিন্টু, পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আহম্মদ হোসেন ভূঁইয়া, সহযোদ্ধা বন্ধু উইং কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

বিধি অনুযায়ী বিমানবাহিনীর প্লেন দুর্ঘটনায় নিহত সদস্যদের নির্ধারিত স্থানে দাফন করা হয়। সেই অনুসারে নিজ গ্রামের বাড়িতে প্রথম নামাজে জানাজা শেষে ফের দুপুর পৌনে ১টায় হেলিকপ্টারটি তার মরদেহ নিয়ে ঢাকা সামরিক হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা দেয়। সেখান থেকে বিমানবাহিনীর সদর দফতরে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে বিকেলে দিপুকে দাফন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ২০১৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০১৮
জিপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।