ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

লক্ষ্মীপুরে মাটির নিচে ‘২শ বছরের পুরনো জাহাজ’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪:২১, এপ্রিল ১৯, ২০১৮
লক্ষ্মীপুরে মাটির নিচে ‘২শ বছরের পুরনো জাহাজ’ পুকুর খনন করতে গিয়ে বেরিয়ে আসা এই অংশটিকে জাহাজের মাস্তুল বলছেন স্থানীয়রা। ছবি: বাংলানিউজ

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের মেঘনা উপকূলে মাটি চাপায় থাকা একটি ‘জাহাজের’ সন্ধান মিলেছে। স্থানীয় প্রত্নতত্ত্ব ও ইতিহাস বিষয়ের লেখকদের ধারণা, এটি দুইশ’ বছরের পুরনো ‘পর্তুগিজ জাহাজ’ হতে পারে। 

রামগতি উপজেলার চর রমিজ ইউনিয়নের চর আফজল গ্রামে পুকুর খনন করতে গিয়ে এ জাহাজের খোঁজ পান শ্রমিকরা। বিষয়টি জানিয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

 

সম্প্রতি নদী ভাঙা এক কৃষক পরিবার চর আফজল গ্রামে জমি কিনে বাড়ি করেন। নিজ পরিবারের ব্যবহারের জন্য জমির মালিক মাহফুজ বসতঘরের পাশে পুকুর খনন করছিলেন। খননের এক পর্যায়ে জাহাজের ‘মাস্তুলের’ দেখা মেলে। মুহূর্তে এ খবর ছড়িয়ে পড়ে গ্রাম থেকে গ্রামে।  

স্থানীয় সচেতন মহলের ধারণা, প্রায় দুইশ’ বছর আগে নদীতে ডুবে যায় এ জাহাজ। কেউ কেউ ধারণা করছেন, পর্তুগিজ বণিকদের ব্যবহৃত জাহাজ এটি। এতে ধনরত্ন ও অস্ত্রসস্ত্রসহ মূল্যবান সম্পদ থাকতে পারে। মাটি খুঁড়ে জাহাজ পাওয়ার খবর লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ আশপাশের জেলায় ছড়িয়ে পড়ায় কৌতূহলী লোকজন দেখতে ভিড় করছেন।  

কৌতূহলী লোকজন ভিড় করছেন জাহাজের ‘মাস্তুল' দেখতেজমির মালিক মাহফুজের ছেলে হেলাল বাংলানিউজকে জানান, পুকুর খননে ১০-১২ ফুট গভীরে গেলে জাহাজের মাস্তুল দেখতে পাওয়া যায়। যে কারণে পুকুর খনন শেষ করা সম্ভব হয়নি। এখন খনন কাজ বন্ধ রয়েছে।

তার সঙ্গে আলাপে জানা যায়, জাহাজ কি-না তা নিশ্চিত হতে এলাকার লোকজন টিউবওয়েল মিস্ত্রি দিয়ে ঘটনাস্থলে পাইপ বোরিং করায়। আশেপাশের দুই থেকে তিনশ’ ফুট এলাকাজুড়েই এ বোরিং করানো হয়। দেখা যায় ১২-১৪ ফুট গভীরে গেলে পাইপ আটকা পড়ে। একইভাবে বেশ কয়েকবার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে বোরিং করে এলাকার লোকজন ধারণা করেন, এটি বিশাল আকৃতির ‘জাহাজ’।  

বিষয়টি প্রশাসনকে জানানো হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজগর আলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, মাটি কাটতে না পারায় জমির মালিক পুকুর খননের কাজ বন্ধ রেখেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে জাহাজের মাস্তুল দেখতে লোকজন ভিড় করছেন। তুলছেন ছবিও।

ঘটনাস্থলে স্থানীয় বিবিকে পাইলট আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু তাহেরের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রায় দুই শ’ বছর আগে নদী থেকে জেগে উঠে চর রমিজ ইউনিয়ন। পরবর্তীতে ফসল আবাদি জমি ও বসতি গড়ে উঠে। তার আগে এই চরসহ রামগতি উপজেলার বিশাল অংশ ছিলো উত্তাল মেঘনারই অংশ। বঙ্গোপসাগর সংযুক্ত এ নদী ছিলো বিশাল। এ রুটে চলাচল করতো বড় বড় জাহাজ। পর্তুগিজদেরও এ পথে যাতায়াত ছিলো। সেসময় ডুবে যাওয়া জাহাজ হতে পারে এটি।  

প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা কোনো দুর্ঘটনায় জাহাজটি নদীতে ডুবে গেছে। পরবর্তীতে আর উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এ জাহাজে মূল্যবান সম্পদ থাকতে পারে বলেও ধারণা স্থানীয়দের।

নোয়াখালীর সুবর্ণ চর উপজেলা থেকে আসা কলেজপড়ুয়া শরিফ ও আকবর জানান, খবর পেয়ে তারা জাহাজ দেখতে এসেছেন। তারা মনে করেন বিষয়টি প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের নজরে আনা জরুরি। গবেষণায় জানা যাবে এটি কী এবং এর রহস্য ও ইতিহাস।

স্থানীয় শিক্ষক ও সাংবাদিক সানা উল্লাহ সানু লক্ষ্মীপুরের ইতিহাস-ঐতিহ্য, প্রত্নতত্ত্ব ও ঐতিহাসিক নানা বিষয় নিয়ে একটি বই লিখেছেন। তার ধারণা এটি পর্তুগিজ বণিক কিংবা আরাকান দস্যুদের জাহাজ হতে পারে। রামগতির চর রমিজ নদী গর্ভে থেকে জেগে উঠেছে প্রায় দেড় বছর আগে। জাহাজটি তারও আগে নদীতে ডুবে থাকতে পারে।

এ বিষয়ে রামগতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজগর আলী বাংলানিউজকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ বিষয়ে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগে চিঠি পাঠানো হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৮
এসআর/আরআইএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।