ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

গাজীপুরে বাদলের বাগানে ফলছে সৌদির খেজুর

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩:৪৪, এপ্রিল ১৯, ২০১৮
গাজীপুরে বাদলের বাগানে ফলছে সৌদির খেজুর বাংলাদেশের মাটিতেও চাষ করা সম্ভব সৌদি আরবের খেজুর। ছবি: বাংলানিউজ

গাজীপুর: সৌদি আরবের খেজুর বাংলাদেশের মাটিতেও চাষ করা সম্ভব। এটা জেনে গাজীপুরের যুবক মো. নজরুল ইসলাম বাদল (৩৮) স্বপ্ন দেখা শুরু করেন, একদিন তার বাগানে সৌদি আরবের খেজুর ফলবে। স্বপ্ন পূরণ করতে তিনি তার বাড়ির পাশে গড়ে তোলেন সৌদি আরবের আদলে খেজুর বাগান। বর্তমানে তার বাগানে ১৩টি গাছে খেজুর ধরেছে।

মো. নজরুল ইসলাম বাদল গাজীপুর সদর উপজেলার পিরুজালী ইউনিয়নের আলিমপাড়া এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুর রহমানের ছেলে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, ২০১৪ সালে সৌদি আরব, দুবাই, কুয়েত, ভারত ও ওমানসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ১৮টি বিভিন্ন জাতের খেজুর গাছের চারা সংগ্রহ করেন নজরুল ইসলাম বাদল।

পরে বাড়ির পাশে একটু পতিত জমিতে ওই চারা রোপন করে ছোট একটি খেজুর বাগান গড়ে তোলেন। বাগানের নাম রাখেন ‘সৌদি ডেট পাম ট্রিস ইন বাংলাদেশ’। তার ওই খেজুরগাছ থেকে সাকার চারা (কলম চারা) হলে সেখান থেকেও সেই চারা বাগানে রোপন করেন তিনি। এভাবেই তার বাগান বড় হতে থাকে। বর্তমানে তার বাগানে ১০০টির বেশি খেজুর গাছ আছে। এছাড়া বিভিন্ন বয়সের খেজুরচারা আছে প্রায় ৫ হাজার। এবছর তার খেজুর বাগানে ১৩টি গাছে সৌদি খেজুর ধরেছে। এ খেজুরের বয়স ২ মাস। ৩মাস পর এ খেজুর পাকতে শুরু করবে। যেসব গাছে খেজুর ধরেছে সে সকল গাছের যত্ন নেয়া হচ্ছে বেশি। খেজুরের বাদি গাছের সাথে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। যাতে মাটিতে ঝুলে পড়ে না যায়। তার বাগানে রয়েছে আজোয়া, মরিয়ম, সুকারী, আমবার, বারহী, ম্যাটজুল ও রোথানসহ প্রায় ১৬টি জাতের খেজুরগাছ।  
 বাংলাদেশের মাটিতে সৌদি আরবের খেজুর
মো. নজরুল ইসলাম বাদল খেজুর বাগানের পাশাপাশি খেজুর চারার নার্সারিও করেছেন। এখান থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় খেজুরচারা বিক্রি করেন তিনি। গতবছর (২০১৭ সালে) এ বাগান থেকে প্রায় ৬২ লাখ টাকার সৌদি খেজুরচারা বিক্রি করা হয়েছে। চলতি বছরেও তিনি (৪ মাসে)  প্রায় ৫ লাখ টাকার খেজুর চারা বিক্রি করেছেন। এবছর তার বাগান থেকে ২০০ কলম চারা সংগ্রহ করেছেন। এছাড়াও বাগানে আরো প্রায় ৩০০ চারা আছে। দুই থেকে আড়াই বছর বয়সের একটি খেজুরচারা বিক্রি করা হয় ৫হাজার টাকায়। ৪ বছর বয়সের একটি চারা বিক্রি করা হয় ১০ হাজার টাকায়। এছাড়া একজোড়া (স্ত্রী-পুরুষ) কলম চারা বিক্রি করা হয় দেড় লাখ টাকায়। খেজুর বাগানে গিয়ে দেখা যায় মো. নজরুল ইসলাম বাদল বাগানের বড় গাছ থেকে কলম চারা সংগ্রহ করছে বিক্রির জন্য। সেই চারাগুলো যত্ন করে রাখা হচ্ছে সারিবদ্ধভাবে।  

খেজুরচারা রোপণ করার নিয়ম
৩ফুট দীর্ঘ, ৩ফুট প্রস্ত এবং ৩ ফুট গভীর করে গর্ত করতে হবে। ওই গর্তের অর্ধেক মাটির সাথে অর্ধেক ভিটি বালু এবং ৩০ কেজি শুকনা গোবর মিশিয়ে ওই গত ভরাট করতে হবে। এরপর পানি দিতে হবে। পরে মাটি (দেবে) বসে যাওয়ার পর খেজুর চারা সঠিকভাবে রোপন করতে হবে। রোপনের ৩ মাস পরপর বছরে ৪বার রাসায়নিক সার ও মাল্টিমিক্স (ঔষধ) প্রয়োগ করতে হবে। বর্ষার আগে ও পরে জৈব সার দিতে হবে। যে কোনো মাটিতে খেজুর বাগান করা সম্ভব। তবে বৃষ্টির পানি যাতে না জমে এমন স্থানে চারা লাগাতে হবে। তবে রোদ থাকতে হবে। প্রতিবছর বাগানে একটি চারার পেছনে প্রায় ২ হাজার টাকা খরচ হয়।  
খেজুরচারা রোপণে ব্যস্ত নজরুল ইসলাম বাদল
মো. নজরুল ইসলাম বাদলের খেজুরবাগানে যাওয়ার পথে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক হয়ে হোতাপাড়া যেতে হবে। সেখান থেকে লেগুনা অথবা অটোরিকশায় ৫ থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে পিরুজালী এলাকা। এ এলাকায় যে কাউকে বললেই হবে। আলিমপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুর রহমানের বাড়ি অথবা বাদলের খেজুরবাগান যাবো বলতে হবে।  

খেজুরবাগান মালিক নজরুল ইসলাম বাদল জানান, সৌদি আরবের খেজুর বাংলাদেশে চাষ করা সম্ভব জেনে অনেক স্বপ্ন নিয়ে খেজুরবাগান করেছি। একদিন আমার বাগানে মধ্যপ্রাচ্যের সুস্বাদু খেজুর থাকবে। বর্তমানে ১৩টি গাছে খেজুর এসেছে। ফলের বয়স ২ মাস। খেজুর পাকতে সময় লাগে ৫/৬ মাস।  
বাদলের খেজুর বাগান
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মাটিতে সৌদি আরবের খেজুর ছড়িয়ে দিতে চাই। প্রমাণ করতে চাই এ দেশের মাটিতেও সৌদি আরবের বা মধ্যপ্রাচ্যের সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খেজুর ফলানো সম্ভব। এজন্য সরকারের সহযোগিতাও প্রয়োজন। খেজুর চাষ করা নিয়ে এখানে একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র করারও ইচ্ছা আছে।  

বাংলাদেশ সময়: ০৯৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৯, ২০১৮
আরএস/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।