শনিবারও (৭ এপ্রিল) সকালও শুরু হয় কর্মব্যস্ততা দিয়ে। মোড়ে মোড়ে বাসযাত্রীদের চাপের পাশাপাশি পথচারীদের অসচেতনতা থেকে অসতর্কতামূলক চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে রাজপথ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, বারডেম হাসপাতাল, ইব্রাহীম কার্ডিয়াক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেন্দ্র করে সকাল থেকেই ব্যস্ততা বেড়ে যায় শাহবাগ মোড়ে। টঙ্গী-উত্তরা, সাভার-গাবতলী, নিউ মার্কেট, যাত্রাবাড়ী-গুলিস্তান এলাকার হাজার হাজার মানুষ বাস থেকে নেমে পড়েন শাহবাগ। আর সেখান থেকে যান নিজ নিজ গন্তব্যেও।

গন্তব্যে যাওয়ার অপেক্ষায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোকে টার্গেট করে এগোয় বাস। কোন বাস বেশি যাত্রী তুলতে পারে- সেটা নিয়ে চলে অশান্ত প্রতিযোগিতা। কখনও কখনও দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের উপর বাস তুলে দেওয়ারও উপক্রম হয়। আর কলেজছাত্র রাজীবের হাত হারানোর কথা প্রায় সবারই জানা।
রাজপথে বেপরোয়া বাসের গতি কেড়ে নিয়েছিল তার ডান হাত। দুই বাসের মাঝে পড়ে হাত হারিয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন রাজিব। এক রাজিবের হাত বিচ্ছিন্ন হলেও প্রতিনিয়ত এমন হিংস্র পরিস্থিতি তৈরি হয় রাজপথে। বাসচালকদের অতি লোভের পাশপাশি পথচারীদের অসচেতনতাও এজন্য দায়ী।
সকালে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে বেরিয়ে কয়েকজন অপেক্ষা করছিলেন বাসের জন্য। শিকড় পরিবহনের একটি বাস যাত্রী তুললেও মতিঝিলগামী আরেকটি বাস দ্রুতগতিতে এগিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। ট্রাফিক পুলিশের ইশরায় বাসগুলো নিয়ন্ত্রণে এলেও ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি হয় যাত্রীর।
বারডেম হাসপাতালের সামনেই যাত্রীরা বাস থেকে নেমে হেঁটে মোড় পেরিয়ে যান অসচেতনভাবেই। পথচারী নিজেই হাত তুলে যানবাহন দাঁড় করিয়ে যেন ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করেন।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে এক হাতে ওয়াকিটকি আর অন্য হাতের ইশারায় বারডেমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহনগুলোকে পার করছিলেন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা আহসান। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে এক নিঃশ্বাসেই তুলে ধরেন শাহবাগ মোড়ের ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি।
‘যাত্রী ওঠানামায় কোনো নিয়ম মানেন না চালকেরা, কখনও কখনও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। দুর্ঘটনাও ঘটে যায়। এদের পিছনে সব সময়ই লেগে থাকতে হয়। ’
কথা বলে একটু সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাত্রাবাড়ীগামী দু’টি বাস পীড়াপীড়ি করছিল সেখানে। একটি বাস ধাক্কা মারে আরেকটিকে। দুই বাসের একটির হেলপার ডাকছিলেন যাত্রী। পীড়াপীড়ির কারণ জানতে চাইলে বলেন, ‘প্যাসেঞ্জার তো তুলতে হইবো’।
বাসগুলোর এমন পীড়াপীড়ির মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিলেন অনেকেই। চারদিক থেকেই এলামেলোভাবে যাত্রীরা হাঁটছিলেন গন্তব্যে। ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তা আহসান বলেন, একজন টিআই ছাড়াও দু’জন সার্জেন্ট এবং ৪/৫ জন কনস্টেবল ডিউটি করি। এলোমেলো যানবাহনের পাশাপাশি পথচারীরাও নিয়ম মানেন না।
মামলা ছাড়া চালকরা ভয় পায় না জানিয়ে তিনি বলেন, মামলা দিলে এক সঙ্গে দু’চারটি অভিযোগে দিতে হয়। নইলে অল্প টাকা গায়ে বাঁধে না!
ইব্রাহীম মেডিকেল কলেজের সামনের ফুটপাতে ফলের দোকানদার সিরাজুল ইসলাম বলেন, বাসের পীড়াপীড়িতে প্রায় সময়ই এখানে দুর্ঘটনা ঘটে। একটি বাস আরেকটিকে ধাক্কা দেয়, লুকিং গ্লাস ভেঙে ফেলে, তা নিয়ে হুলুস্থূল কাণ্ড ঘটে।
এ কারণে যানজটও লেগে থাকে প্রায়ই। যাত্রী জুটুক আর না জুটুক এমন অসাধু প্রতিযোগিতা নিয়ে মোড়ে মোড়ে বাস থামার চিত্র দেখা যায় পল্টন মোড়েও। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে পল্টন মোড়ে উত্তরা-আব্দুল্লাহপুরগামী কয়েকটি বাসের মধ্যে দেখা যায় প্রতিযোগিতা।
আজমেরি, সুপ্রভাত ও নিউ মক্কা পরিবহনের তিনটি বাস একে অপরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে যাত্রী টানছিল। সামনে এগিয়ে জটলা তৈরি করে যানজটে পড়া সুপ্রভাত বাসের চালকের সঙ্গে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে কথা বললে যেন শুনছিলেন না চালক। ওই বাসের হেলপার বলেন, একটু একটু তো টানতে হইবোই।
পল্টন মোড়ে দায়িত্বপালনকারী ট্রাফিক পুলিশ সদস্য সাজেদুর রহমান বাসচালকদের বেপরোয়া চালনা এবং পথচারীদের নিয়ম না মেনে চলা প্রসঙ্গে বলেন, গরু-ছাগল চরানো যায়, মানুষ চরানো কঠিন কাজ। সব সময় লেগে থাকতে হয়। ’
বাংলাদেশ সময়: ০৯১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৮
এমআইএইচ/এএ