ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

যাত্রী ধরার প্রতিযোগিতায় বেপরোয়া সব বাস!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩:১২, এপ্রিল ৮, ২০১৮
যাত্রী ধরার প্রতিযোগিতায় বেপরোয়া সব বাস! এলোপাতাড়ি দাঁড়িয়ে থাকা বাস অন্য বাস দেখলেই বেপরোয়া হয়ে উঠে। ছবি: বাংলানিউজ

ঢাকা: পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্ক মোড়। সরকারি বা সিটি করপোরেশনের হিসেবে যেখানে কোনো বাস স্টপেজই নেই, সেখানে দিনে অন্তত ১০০-১৫০টি বা তারও বেশি বাসের চলাচল। মূলত ঢাকার এই অংশে একত্রে বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকায় মানুষের চাপটা সবসময়ই লেগে থাকে।

আর যাত্রীর এই চাপ সামলাতে কিংবা কখনো অধিক যাত্রীকে যাত্রী হিসেবে নিজ বাহনে পেতে এই মোড়েই শুরু হয় ‘যাত্রী ধরার’ এক অসম প্রতিযোগিতা।

সদরঘাটকেন্দ্রিক এই পথ থাকলেও বেশ ক’টি কোর্ট-কাচারি, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও দেশের গুরুত্বপূর্ণ পাইকারি কাপড়ের বাজার ইসলামপুর ও মুদ্রণ শিল্পের জন্য বিখ্যাত বাংলাবাজার এ অংশে থাকায় যাত্রী বা পরিবহন দুইয়ের চাপই থাকে এখানে।

ফলে সবসময় এক রকম যানজট লেগেই থাকে। যাত্রীর সংখ্যা বেশি থাকা সত্ত্বেও বেশ কিছু বাস অতিরিক্ত বা আগে যাত্রী পাওয়ার লোভে বেপরোয়াভাবে বাস টার্ন করান এই মোড়ে। ফলে প্রায়শই বিভিন্ন দুর্ঘটনা ও বাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে এই এলাকায়।

শনিবার (৭ এপ্রিল) সরেজমিনে দেখা যায়, এই রোডে চলাচলকারী বিভিন্ন রুটের প্রতিটি বাস নয়াবাজার, রায় সাহেব বাজার হয়ে সদরঘাটমুখী মোড় নেয়। এ মোড় নেওয়ার আগে রায় সাহেব বাজারে ছোটখাট একটা যানজট দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু এই জট উপেক্ষা করতে একটু ফাঁকা পেলেই চালক ও এর সহযোগীরা হ্যাঁচকা টানে পার হতে চান এই মোড়। ফলে এখানে প্রায়ই বিভিন্ন যানবাহনের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ বাঁধে।

রায়সাহেব বাজার মোড় পার হলেই প্রায় প্রতিটি বাসই যেন তার হারানো শক্তি খুঁজে পায়, যার ফলশ্রুতিতে আবারো স্টিয়ারিং মেরে দুরন্ত গতিতে গাড়ি ছুটাতে শুরু করেন চালকরা। এই পথে যাতায়াতকারী সব যাত্রী নামানো হয় ভিক্টোরিয়া পার্কের শুরুতে এবং যাত্রী উঠানো শুরু হয় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মূল ফটকের সামনে থেকে। যা চলে শাঁখারীবাজার মোড় পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে দ্রুত যাত্রী তোলার জন্য বা বেশি যাত্রী পাওয়ার জন্য চালকরা বেপরোয়াভাবে যান চালান। আর সঙ্গে যাত্রীদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য উচ্চমাত্রায় হাইড্রোলিক হর্ন বাজতে থাকেন।      

এ চিত্র শুধু বাসের ক্ষেত্রেই নয়, রাজধানীর সড়কে হুটহাট ছুটে চলা লেগুনার কাণ্ড আরো ভয়াবহ। অনেক চালক জানেনও না আসলে তারা কোনো রুটের নির্ধারিত কি-না। এর মধ্যে একটি হলো ‘দোয়েল পরিবহন’ নামের শতাধিক লেগুনা। যার অধিকাংশের চালকের বয়স ১৬-১৭ বছরের মধ্যে। রুট পারমিট না পাওয়া এসব যান ‘কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ’ করেই চলছে।

ভিক্টোরিয়া পার্ক মোড়ে দায়িত্বরত একজন পুলিশ সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, যাত্রী চাপ বেশি থাকায় কার আগে কে যেতে পারেন তার একটা প্রতিযোগিতা চালকদের মধ্যে সবসময় থাকে। বিভিন্ন সময় এখানে উন্মাতাল গাড়ি ড্রাইভিং করে হতাহতের উদাহরণ আছে। তবে এমন বিষয় চোখে পড়লে আমরা ব্যবস্থা নেই।

বেপরোয়াভাবে বাস চালানোর কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে সুপ্রভাত বাসের চালক মোহাম্মদ হামিদ নিজের দোষ অস্বীকার করে অন্যের উপর চাপিয়ে দেন।

সদরঘাট থেকে সাভার রুটে চলাচলকারী স্বজন পরিবহনের কাউন্টার ইনচার্জ গিয়াস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, যেহেতু এটা ব্যবসার জন্য, তাই কম বেশি সবাই দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছাতে চায়। এসময় রাস্তা খালি থাকলে হয়ত একটু গতিতে চালায় ড্রাইভার। তবে এসময় চারপাশ দেখেই চালানো হয় বলে দাবি তার।  

শাঁখারীবাজারের বাসিন্দা রুপম রায় বাংলানিউজকে বলেন, এই এলাকাটা অনেক ঘনবসতিপূর্ণ, অনেক মানুষের যাতায়াত এ জায়গায়। সীমাহীন যানজট, তীব্র হর্ন ও সুযোগ পেলেই বাসের দ্রুত ছোটার প্রবণতার কারণে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন দুর্ঘটনা ঘটে।

এ প্রসঙ্গে জবি শিক্ষার্থী নিলয় রহমান বাংলানিউজকে বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঠিক মূল ফটকের সামনে দিয়ে বাস টার্ন করার উদাহরণ কোথাও নেই। এখানে হঠাৎ করে তীব্র বেগে বাসের মোড় ঘুরানোর ফলে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে এতে মেয়েদের চলাচলে বেশি অসুবিধা হয়। তাই আমরা মনে করি রায় সাহেব বাজারের পর আর বাস ঢুকতে দেওয়া উচিত নয়। সেখানে বাস স্টপেজ করা উচিত।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৮
কেডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।