দুইপাশেই গাড়ির চাপে পার্ক না করতে পারায় মাঝ রাস্তাতেই চলন্ত অবস্থায় কয়েক যাত্রীকে নামিয়ে দিলেন। যাত্রীরা ব্যস্ত রাস্তায় দুই বাসের মাঝ দিয়ে গিয়ে কোনোমতে ফুটপাতে উঠলেন।
আবার শুরু হলো প্রতিযোগিতা। কিছুদূর গিয়ে ড্রাইভার ধাক্কা লাগিয়ে পাশের গাড়ির লুকিং গ্লাস ভেঙে দিলেন। ব্যস! ব্যস্ত রাস্তায় গাড়ি রেখে জ্যাম বাঁধিয়ে লেগে গেলো দুই ড্রাইভারের ধুন্ধুমার কাণ্ড।
আমরা যারা রাজধানীতে পেটের টানে বা অন্য জরুরি কাজে বের হয় তাদের কাছে এ দৃশ্য প্রতিদিনের। আর এই ওভারটেকিং-এর জন্য প্রাণ হারানোর খবরও নতুন নয়। গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় এমনই দুই বাসের ওভারটেকিংয়ের সময় চাপায় সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজিব হোসেনের ডান হাত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। যার প্রথম ও প্রধান কারণ রাজধানীতে চলাচলরত পাবলিক বাসগুলোর বেপারোয়া গতি।
শনিবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুর-১০, আগারগাঁও, ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে বেপরোয়া বাস চলাচলের এমনই কিছু দৃশ্য।
রাজধানীর মিরপুরে মেট্রোরেলের কাজের জন্য দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা সংকুচিত হয়ে আছে। রাস্তায় জায়গা কম থাকার কারণে প্রায়ই দীর্ঘ জ্যামের সৃষ্টি হচ্ছে। আর এ সময় পুষিয়ে নিতে ড্রাইভাররা প্রায়ই ওভারটেকিংয়ের খেলায় মেতে উঠছেন। বিজয় সরণি এলাকা থেকে ফার্মগেট হয়ে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত প্রায় পুরো অংশ জুড়ে দিনের বেশিরভাগ সময় যানজট থাকে। সিগন্যাল ছাড়লেই চলে কে আগে যেতে পারে তার খেলা। এই খেলায় বাসের হুটহাট গতি বাড়ানো ও এদিক-ওদিক করে পুরো রাস্তা জুড়ে চলাচলের কারণে বিপত্তির সম্মুখীন হন সবাই।
ওভারটেকিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে হিমাচল পরিবহনের ড্রাইভার সাদিক জানান, ঢাকায় যানজট আগের থেকে অনেক বেড়ে গেছে। আগে দুইটা ট্রিপ দিতে যে সময় লাগতো তা এখন একটা ট্রিপে লাগে। কিন্তু মালিক তো টাকা নেওয়া কমায়নি। বরং আগের থেকে বাড়ায় দিছে। এখন আমাদের দ্রুত গিয়ে ট্রিপ বেশি দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। এ কারণেই দুর্ঘটনা ঘটে যায় মাঝে মধ্যে। আবার সিটিং সার্ভিসগুলো দ্রুত না গেলে যাত্রীরাও ক্ষেপে।
এদিকে রাজধানীর বেশিরভাগ পাবলিক পরিবহনই এখন সিটিং সার্ভিস। নিজেদের দোষ শিকার করে আয়াত পরিবহনে চলাচলকারী বেসরকারি কোম্পানিতে কর্মরত ফয়সাল রহমান বাংলানিউজকে জানান, আমাদের মানসিকতা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, সিটিং সার্ভিস দ্রুত যাবেই। না গেলে সেটা সিটিং না লোকাল। মানুষ ভাড়া দেওয়ার সময় তখন কম দেওয়ার চেষ্টা করে। আবার যানজটে বসে থেকে সময় নষ্ট হওয়ার কারণে আগে যাওয়ার প্রবণতাও রয়েছে।
এদিকে পাবলিক পরিবহনে অনভিজ্ঞ ও লাইসেন্সবিহীন ড্রাইভারের অভিযোগ রয়েছে অনেকদিন ধরেই। আর এই অনভিজ্ঞ ড্রাইভারদের কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটে বলে জানিয়েছেন বাসের ড্রাইভারসহ যাত্রীরা।
তবে কোনো কোনো ড্রাইভার দুর্ঘটনার জন্য পথচারীদের অসর্তকতা ও অসচেতনাকেও দায়ী করেছেন। এয়াপোর্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউ পরিহনের ড্রাইভার মালেক মিয়া জানান, পথচারীরা ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে ব্যস্ত রাস্তা পার হন। কখনও কখনও দুই গাড়ির মাঝে এসে পড়েন। আর এতে দুর্ঘটনা ঘটে।
রাজধানীর মিরপুর ও ফার্মগেট এয়াকার লেগুনা এবং এই রাস্তায় চলাচলরত লোকাল মিনিবাসগুলোর ড্রাইভারদের মধ্যে বেশিরভাগরই ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই হেলপার থেকে বাসের ড্রাইভার হয়েছেন অনেকে। মিরপুর থেকে সদরঘাট রুটে চলাচলকারী ইটিসি পরিবহনের ড্রাইভার রুবেল বলেন, আমি আগে হেলপারি করতাম। এরপর বাস স্ট্যান্ডে রাখতে রাখতে ওস্তাদের (ড্রাইভার) কাছ থেকে ড্রাইভারি শিখছি। লাইসেন্স নেই আমার। রাস্তায় ম্যাজিস্ট্রেট আইলে আগে থেকা খবর পাই। তখন ওই রাস্তায় যাই না বা অনেকক্ষণ না চালায়া বইসা থাকি। আবার মাঝে মধ্যে সার্জেন্টে আটকায়। তখন মামলা দেয় নাইলে টাকা দিয়া ছাড়ায়া নেই।
এ বিষয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মীর রেজাউল আলম বাংলানিউজকে জানান, আমাদের চেকিং সব সময় চলছে। রাস্তায় লাইসেন্স ছাড়া কোনো গাড়ির ড্রাইভার নেই।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৮
এমএএম/আরআর