ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ ভাদ্র ১৪৩২, ২৮ আগস্ট ২০২৫, ০৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

রাস্তার মাঝখানে যাত্রী ওঠানো-নামানোয় বেপরোয়া বাস

সাব্বির আহমেদ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩:০০, এপ্রিল ৮, ২০১৮
রাস্তার মাঝখানে যাত্রী ওঠানো-নামানোয় বেপরোয়া বাস বেপরোয়া গতির বাসের এ অসুস্থ প্রতিযোগিতা

ঢাকা: বাস স্টপ আছে। কিন্তু কোনো বাসই নির্ধারিত জায়গায় থামছে না। ঠিক যেখানে শ্যামলী মোড় সেখানেই যেমন খুশি, যত্রতত্র থামছে। পেছনে বেপরোয়া গতিতে আসা অন্য বাস সামনের বাসকে তখন ইচ্ছাকৃতভাবে ধাক্কা দিচ্ছে।

শনিবার (৭ এপ্রিল) রাজধানীর মিরপুরের শ্যামলী মোড়ের এমন চিত্র। এটি শুধু একদিন বা এক ঘণ্টার নয় হরহামেশা এভাবেই চলছে।

মোড়ে ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হতে গিয়ে অনেকেই এসব বেপরোয়া গতির বাসের এ অসুস্থ প্রতিযোগিতার শিকার হচ্ছেন, দুর্ঘটনায় পড়ছেন।
 
শ্যামলী মোড় পার হয়ে যায় গাবতলী, সাভার, নবীননগর ও মানিকগঞ্জ থেকে আসা বাস। এছাড়া মোহম্মদপুর থেকে ছেড়ে এসে রামপুরা ও আব্দুল্লাহপুরের দিকেও যায় বাস। সবগুলো বাস এ মোড় অতিক্রম করে যায়।
 
দেখা গেছে, গুলিস্তান ধামরাই বাস, দিশারী, গাবতলী মিনিবাস মালিক সমিতি, পরিস্থান, নিউ ভিশন, ভুঁইয়া পরিবহন, মৌমিতা, তেঁতুলিয়া, ঠিকানা, সাভার পরিবহন, নূরজাহান মানিকগঞ্জ, ফুলবাড়িয়া, প্রজাপতি, লাব্বাইক, আশির্বাদ পরিবহন এই মোড়ে এসে দাঁড়ায়। বেপরোয়া গতির বাসের  প্রতিযোগিতা
 শ্যামলী মোড়ের পাশেই বাসা এবং অফিস রিমন খন্দকারের। উন্নত বিশ্বের সড়কপথ দেখারও সুযোগ হয়েছে তার।

জানালেন, পৃথিবীর আর কোথাও কোনো মোড়ে এসে বাস থামে এটা তিনি দেখেননি। একটি পুলিশের জিপ দেখিয়ে বলেন, এটি যেভাবে মোড়ের পাশে পার্ক করা তা কিন্তু ঠিক নয়। মোড় মানে গাড়ি বাঁক নিয়ে চলে যাবে। এখানে যদি বাধা পেয়ে দাঁড়ায় তাহলে যানজট বাঁধবে। পেছনে আরেক বাস এসে তখন ধাক্কা দেবে। এটাই চল হয়ে গেছে।
 
মোড়ের চায়ের দোকানি আব্দুল আজিজ বলেন, এ মোড়ে বাসের ধাক্কায় অনেককে আহত হতে দেখেছেন তিনি। গতকালও  চলতি অবস্থায় বাসের সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়ে একজন আহত হয়েছেন।

সরেজমিনে কয়েক ঘন্টা অবস্থান করে দেখা গেল, বাসগুলো মূল সড়কের মাঝখানে থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করছে। এতে দ্রুত যাত্রী নামানোর একটি তাড়া থাকে। এসময় অনেকে ঝুঁকি নিয়ে নামতে বা দৌড়ে বাসে উঠতে গিয়ে আহত হচ্ছেন। এ চিত্র রাজধানীর সব সড়কেরই। বেপরোয়া গতির বাসের এ অসুস্থ প্রতিযোগিতাবাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক তালুকদার বলেছেন, বাংলাদেশেই কেবল দরজা-জানালা খোলা রেখে বাস চলে। আর কোথাও এমন চিত্র নেই।

দরজা খোলা রেখে চলতে গিয়ে পথে যাত্রী নামিয়ে দিয়ে বাস আবার গতির ঝড় তোলে। যেমনটা দিশারী পরিবহনে দেখো গেল। চলতি অবস্থায়ই একজনকে টেনে তুলে নিচ্ছে। প্রথম দফায় যাত্রী ব্যর্থ হলেও প্যাসেঞ্জারের বাড়ানো হাত ধরে পরে উঠলেন। তবে সেটা তিনি করলেন জীবন হারানোর ঝুঁকি নিয়ে।

বাসমালিকদের একটি সূত্র জানায়, রাজধানীর মিরপুর সড়কে সবচেয়ে বেশি বাস চলে সরকারি অফিসের কর্মদিবসে। শুক্র ও শনিবার রাস্তা ফাঁকা থাকায় অনেক বাসকে দেখা গেল অন্যদিনের চেয়ে আরও বেশি বেপরোয়া গতিতে ছুটতে। এসব বাসের অধিকাংশেরই ফিটনেস বলে কিছু নেই। হাতে গোনা কয়েকটি বাস নির্ধারিত কাউন্টারের পাশে থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করে। আলাদা বাস বেশি না থাকায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে যায়। চালকদের এ নিয়ে কোনো প্রশিক্ষণ নেই। কাণ্ডজ্ঞানও নেই।

তবে ভিআইপি সড়ক বনানী বিমানবন্দরে এজন্য আলাদা করে নির্দিষ্ট কিছু স্থানে বে (স্টপেজের বাইরে অন্যত্র বাস দাঁড়ানোর স্থান) নির্মাণের কাজ চলছে। ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপ ১২টি যাত্রী ছাউনির সঙ্গে ১২টি বাস বে তৈরি করছে। সড়কের পাশে না থেমে নিধারিত বাস বে-তে এসে সব বাসকে থামতে হবে। এমন পরিকল্পনাই হাতে নিচ্ছেন তারা।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘন্টা, এপ্রিল ৮, ২০১৮
এসএ/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।