বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বোমা হামলার শিকার হওয়ার এ দুঃসহ স্মৃতিচারণ করছিলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি স্মৃতিচারণ করছিলেন তার বাবা মোহাম্মদ হানিফের যন্ত্রণাভোগের কথাও, যিনি ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর এবং অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র।
রোববার (১ এপ্রিল) দুপুরে ডিএসসিসির নগর ভবনের ব্যাংক ফ্লোরে মোহাম্মদ হানিফের ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে কথা বলছিলেন সাঈদ খোকন। ডিএসসিসি আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলালসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও কাউন্সিলররা। এর আগে সকালে আজিমপুর গোরস্থানে হানিফের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন মেয়র সাঈদ খোকনসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
সাঈদ খোকন বলছিলেন, ‘সেই দিনের স্মৃতি আজও নাড়া দেয়। নেত্রীর প্রতি আনুগত্য ও ভালবাসা সেদিন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দেখিয়েছিলেন। আমার বাবার আনুগত্য ও ভালবাসা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক রাজনীতিতে বিরল। ’
‘গ্রেনেড হামলায় আমাদের ২৪ নেতাকর্মী মারা গেলেন। আমি সেদিন সেখানে ছিলাম। আমি নেত্রীর এক হাত বাঁয়ের একটি ট্রাকে ছিলাম। আমার বাবা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন নেত্রীকে অনেকটাই কাভার (আগলে রাখা) করে। অনেকেরই আশঙ্ক ছিল কিছু একটা হতে পারে। সেসময়টা এমনই ছিল, কিছুদিন বেশ কিছু গুজব উঠেছিল, জননেত্রী শেখ হাসিনার ওপর আক্রমণ হতে পারে, যে কোনো সময় একটা ঘটনা ঘটতে পারে। আওয়ামী লীগের প্রতিটি নেতা-কর্মীর মুখে মুখে ছিল। সবাই আশঙ্কা-আতঙ্কের মধ্যে দিয়ে চলছিল। তারপর যা হওয়ার হলো। আমার বাবা সেদিন রক্তাক্ত হয়ে পড়লো। ’
মোহাম্মদ হানিফসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মানবঢাল রচনা করে প্রধানমন্ত্রীকে বাঁচিয়েছিল উল্লেখ করে সাঈদ খোকন বলেন, ‘একের পর এক স্প্লিন্টারের আঘাতে রক্ত ঝরছিল। আমি পার্টি অফিসে বাবার কাছে যাই। বাবা প্রায়ই পড়ে যাচ্ছিলেন, আমি তাকে জড়িয়ে ধরি। আমার শরীরেও রক্ত, দুই পায়ে স্প্লিন্টার ছিল, আমি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছিলাম। নিজে আহত থাকার কারণে তাকে ধরে রাখতে পারছিলাম না। এরপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাকে ও বাবাকে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি করেন। ’
সাঈদ খোকন বলেন, ‘নেত্রীর প্রতি আনুগত্য এবং ভালবাসার এই দৃষ্টান্ত আমাদের অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। এই দৃষ্টান্ত সাংগঠনিক রাজনীতিতে বিরল। বিরল একটা দৃষ্টান্ত অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। আজকে বাবার জন্মবার্ষিকীতে তার রেখে যাওয়া দৃষ্টান্ত হোক আমাদের সবার অনুকরণীয়। এই দিনে আমরা শপথ নিতে পারি, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে রক্ষা করার জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করতে হলে আমরা করবো। বঙ্গবন্ধু কন্যার যে কোনো প্রয়োজনে আমরা সর্বোচ্চ ত্যাগে প্রস্তুত। ’
বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের বর্ণনা করে সাঈদ খোকন বলেন, ‘সেসময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা, আমরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক ছিলাম। আমরা বাসায় থাকতে পারতাম না। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর আমরা বাসায় থাকতে পারিনি। আমরা হুলিয়া নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি। সেই দুঃসময়ের স্মৃতি আমাদের আজও নাড়া দেয়। আমরা সেই কঠিন সময় পার করেছি। আজকে অনেকে অনেক কথা বলেন, অনেকে সরকারের সমালোচনা করেন, কিন্তু আমরাও তো সেই দুঃসময় পার করে এসেছি। কী অত্যাচার, কী নির্যাতন গেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর দিয়ে। সেটা তো আমরা ভুলিনি, আজও মনে করি। সেই দুঃসময়ে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এই শহরের মানুষকে সংগঠিত করেছিলেন।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করা মেয়র হানিফ বোমা হামলার ক্ষত বয়ে বেড়ান দুই বছরেরও বেশি সময়। ২০০৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তাঙ্গনে এক সমাবেশে বক্তৃতাকালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। বোমা হামলার ক্ষতের কারণে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তীব্র যন্ত্রণা ভুগে ওই বছরের ২৮ নভেম্বর ৬২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন মোহাম্মদ হানিফ।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৮
এসএম/এইচএ/