রোববার (০১ এপ্রিল) দুপুরে খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশ খারপাড়ার ‘মিতালী ১৫/জে’ নম্বর বাসা থেকে মরদেহ দুটি উদ্ধার করে।
নিহতরা হলেন- সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর কলকলি গ্রামের হেলাল মিয়ার স্ত্রী মা রোকেয়া বেগম (৪৫) ও ছেলে রবিউল ইসলাম রোকন (১৬)।
স্থানীয় সূত্র জানায়, তাদের সাথে বাসায় একটি কাজের মেয়েও থাকত। নিহতের স্বামী গত রমজান মাসে স্ট্রোক করার পর থেকে বারুতখানায় উত্তরণ ৫০ নং বাসায় দ্বিতীয় স্ত্রী পান্না বেগম নিয়ে থাকেন।
নিহত রোকেয়ার ভগ্নিপতি ফারুক মিয়ারসঙ্গে সবশেষ শুক্রবার (৩০ মার্চ) সন্ধ্যায় কথা হয় রোকেয়ার। ধারণা করা হচ্ছে, ওইদিনই সন্ধ্যার পর তাদের হত্যা করা হয়েছে। এজন্য মরদেহে কিছুটা পচন ধরেছে, জানায় পুলিশ।
রোকেয়ার ভাই নগরীর শুকরিয়া মার্কেটের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, চার ভাই ও ২ বোনের মধ্যে রোকেয়া ছিলেন তৃতীয়। গত শুক্রবার থেকে তার বোনের মোবাইল বন্ধ পেয়ে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজারের বাসিন্দা তার আরেক বোন ফোনে তাকে বাসায় খোজ নিতে বলেন। শনিবার দোকানে ব্যস্ততার কারণে আসতে না পারায় রোববার (০১ এপ্রিল) সকালে দোকানে যাবার আগে বাসায় খোজ নিতে এসে দরজার কলিং বেলে চাপ দিতে ভেতরে শুধু ভাগ্নি রাইসার কান্না জড়িত কন্ঠ শুনতে পান। রাইসা বলে, মামা, আম্মু-ভাইয়ারে মেরে ফেলেছে।
তিনি বলেন, রাইসা ভেতের থেকে দরজা খুলতে না পারায় বাসার মালিকের ছেলেকে ডেকে এনে জানালা দিয়ে গিয়ে তার ভাগ্নির শরীরে জখমের দাগ দেখতে পান। পরে স্থানীয় কাউন্সিলরের মাধ্যমে পুলিশকে জানানো হয়। তার বোনের সঙ্গে কারো বিরোধ ছিল কিনা, এ বিষয়ে কিছুই জানেন না জাকির। তবে ১০/১৫দিন আগে বাসায় নাকি ‘ডাকাতির’ ঘটনা ঘটে।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ওই বাসার মালিক সালমান হোসেন জানান, তারা বছরখানেক আগে এই বাসায় ভাড়াটিয়া হিসেবে উঠেছিলেন। ওই নারী একটি বিউটি পার্লারের ব্যবসা খুলেছেন। তার ছেলে মীরাবাজারের জামেয়া মাদরাসা থেকে মাধ্যমিক পরিক্ষা দিয়েছে। ছেলেটি খুব শান্তশিষ্ট ছিল। হত্যার ঘটনা বাসার নীচ তলায় প্রতিবেশী এবং ২য় তলা, ৩য় তলার অন্য ভাড়াটিয়ারা এ ঘটনার কিছুই টের পাননি-বলেন সালমান হোসেন।
তবে সকালে রোকেয়ার ভগ্নিপতি ভাই জাকির হোসেন হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি স্থানীয় কাউন্সিলরের মাধ্যমে পুলিশকে জানিয়েছেন। এরপর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। দু্ই রুমে দু'জনের মরদেহ পাওয়া যায়। এদিকে, ঘটনার পর থেকে ওই বাসার গৃহকর্মী তানিয়াকে (১৬) খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ জানান, রোকেয়া ও তার দুই ছেলে মেয়েকেই মারতে চেয়েছিল ঘাতকরা। উদ্ধার করা শিশুটিকেও শ্বাসরোধ করা হয়েছিল, পরে তার জ্ঞান ফিরেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গৌছুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শুক্রবার রাতেই মা-ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। বিকেলে মরদেহ দু’টি উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
কোতোয়ালি মডেল থানার সহকারি কমিশনার (এসি) গোলাম দস্তগীর বাংলানিউজকে বলেন, মূল ঘটনা তদন্তের পরেই নিশ্চিত হওয়া যাবে। মৃত রোকেয়ার বাসা থেকে তার ব্যবহৃত কম্পিউটারটি জব্দ করা হয়েছে। জীবিত উদ্ধার করা রাইসাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, নগরীর বারুতখানা উত্তরণ ৫০ বাসায় গেলে নিহত রুকেয়ার স্বামী অসুস্থ হেলাল মিয়া সঙ্গে দেখা হয়। তিনি কথা বলতে না পারায় তার দ্বিতীয় স্ত্রী পান্না বেগম বলেন, তাদের বিয়ের ১১ বছর হয়েছে। ৯ বছরের একটি পুত্র সন্তান আছে তাদের। তার স্বামীর ওই পরিবার সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। স্বামী অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ওই বাসায় ভাইদের উপর ভর করে স্বামী সংসার নিয়ে আছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৮/আপডেটেড ১৪২৪ ঘণ্টা
এনইউ/এসএইচ