গত বুধবার (২৮ মার্চ) রাত ৮টায় হবিগঞ্জের মাধবপুর থেকে তাকে আটক করে সিলেট মহানগর পুলিশ।
শুক্রবার (৩০ মার্চ) এ বিষয়ে সিলেট মহানগর পুলিশ সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলন করেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার পরিতোষ ঘোষ।
সংবাদ সম্মলনে তিনি বলেন, হবিগঞ্জের গোছাপাড়ার মৃত মীর হোসেনের ছেলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক ফারুক মিয়াকে প্রতারণার খপ্পরে ফেলে আন্তর্জাতিক একটি প্রতারক চক্র।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারির আগে ওই শিক্ষক ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন সেক্সোয়ালি ট্রান্সমিটেড ডিজিজ অ্যান্ড ইনফেকশন (আইসিএসটিডিআই) সম্পর্কে একটি ই-মেইল পান। গুগলের মাধ্যমে মূল কনফারেন্স পেইজে প্রবেশ করে বিস্তারিত জানতে পারেন তিনি। পরে কনফারেন্সে অংশ নিতে বিভিন্নভাবে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও বিদেশি অ্যাকাউন্টে ডলার মারফত প্রায় ৫ লাখ টাকা দেন।
গত ১ মার্চ তিনি পুনরায় ই-মেইল পান যাতে বলা হয়, ১০-২১ মার্চের মধ্যে ভিসা পাবেন যা ইউএস ইমিগ্রেশন সার্ভিস নিশ্চিত করেছে। এরজন্য পাসপোর্টের ফটোকপি, ভিসা ফি বাবদ ১৬০ ডলার, ৯৫ ডলার ইন্সুরেন্স ফি এবং ১ হাজার ৩৯৯ ডলার ফেরতযোগ্য যা কনফারেন্সের পরে ওয়াশিংটন বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাবেন। প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে শিক্ষক ফারুক আহমদ বেলজিয়াম থেকে তার বন্ধুর মারফতে দুইবারে ১ হাজার ৬৫৪ ডলার করে ৩ হাজার ৩০৮ ডলার ওয়াশিংটনে সানট্রাস্ট ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে পাঠান।
এছাড়া ডকুমেন্টগুলো হাতে দেওয়ার জন্য ১ হাজার ৮ শ’ ডলার হ্যান্ডিং চার্জ দিতে বলা হয়। গত ২১ মার্চ তিনি ঢাকায় গিয়ে ২৫ মার্চ এই টাকা বাংলাদেশের একটি অ্যাকাউন্টে জমা দেন ফারুক। এরপর মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) দুপুর ১টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এপিবিএন পেট্টোল পাম্পের পাশে প্যাকেজ স্বরূপ ৩২ কেজি ওজনের একটি লাগেজে ডিজিটাল লক লাগানো একটি মেশিন উপহার দেওয়া হয়। এই বক্সে ডকুমেন্ট সব আছে বলে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলা হয় ফারুককে।
শিক্ষক ফারুক সেটি বিমানে সিলেটে নিয়ে আসেন। ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এক বন্ধু পুলিশ কর্মকর্তার সুবাদে মেশিনটি ছাড়িয়ে আনেন।
গত ২৮ মার্চ বেলা পৌনে ৩টায় আইসিএসটিডিআই কথিত ইউএস প্রতিনিধি তাকে ফোন দিয়ে লাগেজ নিয়ে সিলেট রোজভিউ হোটেলের পাশে যেতে বলেন। ওখানে মেশিন ওপেন করে সব কিছু বুঝিয়ে দেওয়া হবে। সেখানে উপশহরের একটি বিদ্যালয় মাঠে ডিজিটাল লক খুলে ভেতরে কেমিক্যালে কাগজ চুবিয়ে ডলার তৈরির প্রশিক্ষণ দেয় ওই নাইজেরিয়ান নাগরিক। এরপর মেশিনসহ তাকে গাড়িতে রেখে দুই মিনিটের জন্য আসছি বলে মোবাইল বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে যান এমেকা। বিষয়টি তিনি পুলিশকে অবহিত করেন-দাবি শিক্ষক ফারুক মিয়ার। এ ব্যাপারে তিনি বাদী হয়ে মহানগরীর শাহপরান থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত কমিশনার পরিতোষ ঘোষ, উপস্থিত ছিলেন, এসএমপির উপ পুলিশ কমিশনার (সদর) রেজাউল করিম, উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) ফয়ছল মাহমুদ, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) মুহম্মদ আব্দুল ওয়াহাব ও গোপাল চক্রবর্তী।
সংবাদ সম্মেলন শেষে ছবি তুলতে গেলে নাইজেরিয়ান নাগরিক ওই লাগেজ তথা গিফট বক্স তার নয় বলে দাবি করেন। বিকেলে গ্রেফতারকৃত এই বিদেশি নাগরিককে আদালতে হাজির করে রিমান্ড আবেদন করা হবে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
এদিকে, শাবি শিক্ষক ফারুক মিয়ার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৪২ ঘণ্টা, মার্চ ৩০, ২০১৮
এনইউ/আরআইএস/