কিন্তু না। ঠিকানা ভুল হয়নি পুলিশের।
ফুল আর মিষ্টির সঙ্গে এতো বড় বিস্ময়কর সুখবর! কল্পনারও বাইরে ছিলো সোনা মিয়ার পরিবারটির। বিস্ময়ের ঘোর কাটতেই পরিবারজুড়ে সবার চোখ ছলছলে। আনন্দের সেই অশ্রু যেন ছুয়ে যায় গোটা গ্রামকে।
ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে ছেলে শাকিল হোসেনের চাকরি হয়েছে। সেই খবরটি নিয়েই দিনমজুর সোনা মিয়ার জীর্ণ কুটিরে ফুল মিষ্টি নিয়ে পুলিশের উপস্থিতি- এ খবরে শোরগোল পড়ে যায় গ্রামে। আনন্দে তখনও অঝোরে কাঁদছেন সোনা মিয়ার স্ত্রী আলেয়া বেগম।
মাত্র ১০০ টাকায় (আবেদনপত্রের পে অর্ডার) যে সত্যি সত্যিই পুলিশে চাকরি হয়, তাও আবার কনস্টেবল পদে এবং সহকর্মীকে স্বাগত জানাতে পুলিশ কর্মকর্তারা মিষ্টি আর ফুল নিয়ে বাড়িতে হাজির হবেন- তা যেন অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছিলো আলেয়া বেগমের কাছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) এমনই দৃশ্যের সাক্ষী হয়ে রইলো ঢাকার ধামরাইয়ের আমরাইল যাদবপুর গ্রাম। এ খবরে সোনা মিয়ার বাড়িতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে গ্রামের মানুষ। সোনা মিয়া যেন গর্বিত বাবা। ছেলে শাকিলও যেন মুহূর্তে বনে যাওয়া পাড়ার তারকা। তাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস গ্রামজুড়ে রূপ নেয় আনন্দের উৎসবে।
কেবল শাকিল নয়, এমন খণ্ড খণ্ড গল্প কশুরা হরিদাসপুরের বর্গাচাষী সাদেক আলীর ছেলে সাইদুল ইসলাম, বৈন্যা গ্রামে নানার বাড়িতে বড় হওয়া এতিম মুক্তা আক্তার, সাকরাইন গ্রামের কাঠমিস্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের মেয়ে সুর্বণা মজুমদার আর টোপেরবাড়ি গ্রামের দুঃস্থ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফের ছেলে সজীব হোসেনের ক্ষেত্রেও রচিত হয়েছে।
পুলিশ বিভাগে শুধু কনস্টেবল নিয়োগে যে অর্থের লেনদেনের অভিযোগ ওঠে, কম-বেশি তা সবারই জানা। কিন্তু এই অভিযোগের জায়গা থেকে সরে আসতেই স্বচ্ছতা আর মেধাকে গুরুত্ব দিয়ে নিয়োগে শুদ্ধাচারের সূচনা করেন পুলিশের ২০তম ব্যাচের কর্মকর্তা ঢাকা জেলার এসপি শাহ মিজান শাফিউর রহমান।
যার কারণে প্রভাবের উর্ধ্বে এবার ঢাকা জেলাতেই ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পদে চাকরি পেয়েছেন ১২৪ নারীসহ ৮৩৫ জন।
বর্গাচাষী সাদেক আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরকারি চাকরি পাইতে ৮-১০ লাখ টাকা ঘুষ দেওন লাগে। এইডাই জানতাম। সামর্থ্য নাই বইল্যা বড় পোলা মেট্রিক পাশ কইরাও আবেদন করে নাই। নিয়োগের আগে মাইকিং করা হইলো। শুনলাম টাকা ছাড়া চাকরি। পোলাডা টিক্যা গেলো। পুলিশ ফুল আর মিষ্টি নিয়া বাড়িত আইছে। কী কমু, কল্পনারেও ছাড়ায়া গেছে। ’
কাঠমিস্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘চাকরি হইলে আগে বাইতে (বাড়িতে) পুলিশ আইতো। তদন্ত (ভেরিভিকেশন) করতো। তহনো ট্যাকা দেওন লাগতো। এবার দেহি উল্টা ফুল আর মিষ্টি নিয়া পুলিশ সু-সংবাদ নিয়া বাইতে হাজির। দিনকাল কি সব বদলাইয়া গেলো!’
ঢাকা জেলা পুলিশের জেলা গোয়েন্দা কর্মকর্তা (ডিআইও-ওয়ান) পরিদর্শক দীপক চন্দ্র সাহা বাংলানিউজকে বলেন, ‘এসপি স্যারের নির্দেশেই পুলিশে যোগ দিতে যাওয়া পরিবারের প্রতি আমাদের এই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা। এই যে শুরুটা হলো, এই সদস্যদের সেবার ধরনটাই হবে ভিন্ন। কারণ তারা তিক্ত অভিজ্ঞতা নয়, চমৎকার এক পরিবেশে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ পেয়েছেন। সুতরাং এর সুফল পাবে দেশবাসী। ’
এসপি শাহ মিজান শাফিউর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘কেবল মুখে দিন বদলের কথা বললে তো হবে না। কাজে কর্মে তা দেখাতে হবে। আমাদের প্রয়াস সেটাই। প্রধানমন্ত্রী যে সোনার বাংলা গড়তে চান, আমরা নিজেদের অবস্থান থেকে সেই চেষ্টাটাই করে যাচ্ছি মাত্র। যারা এই স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্যে পুলিশ বাহিনীতে প্রবেশ করছেন, তারা নিজেরাও স্বচ্ছতা বজায় রাখবেন। জনবান্ধব পুলিশ বাহিনীর অংশীদার হবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৬ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৮
এইচএ/