বুধবার (২৮ মার্চ) মিরপুরের পশ্চিম শেওরাপাড়া থেকে পীরেরবাগ হয়ে কাফরুল, আগারগাঁও থেকে কল্যাণপুর এবং মিরপুর-১১, বাউনিয়াবাঁধ, মাজার রোড ও কালশী এলাকার খালগুলো সরেজমিন দেখা যায়, ময়লা আবর্জনা দিয়ে একেবারে পরিপূর্ণ হয়ে পড়েছে খালগুলো।
ময়লার পুরু স্তর থাকার কারণে উপর দিয়ে কুকুর, বিড়াল, মুরগীসহ বিভিন্ন প্রাণী অনায়াসে হেঁটে বেড়াচ্ছে।
খালগুলোতে পানির প্রবাহের কোনো চিত্র লক্ষ্য করা যায়নি। বদ্ধ পরিবেশে দিনের বেলাতেই মশার উৎপাতে টেকা দায় হয়ে পড়েছে। ঘন জনবসতিপূর্ণ মিরপুর এলাকার বেশিরভাগ খালের পাড়েই গড়ে উঠেছে বস্তিসহ আবাসিক এলাকা। এসব এলাকার ফ্ল্যাটগুলোতে বেশিরভাগ সময়ে দরজা-জানালা বন্ধ রাখতে হয় মশা ও দুর্গন্ধের কারণে।
খালগুলোর বেহাল দশার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, খাল পুনঃখননের পর থেকে রক্ষণাবেক্ষণ বা পরিদর্শনে কোনো প্রতিষ্ঠানকে দেখা যায়নি। বর্ষাকালে এসব খালের নোংরা পানিই উপচে এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে।
জলাবদ্ধতার কারণে শুকনো মৌসুমেও রোগজীবাণু উড়ে বাতাসে মিশে শিশুদের স্বাস্থ্যের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে বলে জানিয়েছেন বারডেম জেনারেল হাসপাতালের প্রিন্সিপাল নিউট্রিশন অফিসার খালেদা খাতুন। তিনি জানান, এ রকম পরিবেশে শিশুদের স্বাস্থ্যের অবস্থা দিন দিন খারাপই হচ্ছে। বড়দের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি থাকায় তারা হয়ত অনেক সময় রোগ থেকে টিকে যাচ্ছেন। কিন্তু শিশু ও গর্ভধারিনী মায়েদের জন্য তা হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। শিশুদের পেটের প্লীহা, ক্রিমি, ডায়রিয়াসহ ঘন ঘন জ্বরে পড়তে দেখা যায়। এছাড়া যে কোনো রোগের জীবাণুর ক্ষেত্রে খুব দ্রুত আক্রমণ করাটাও অনেক সহজ হয়ে পড়ে।
মিরপুরের শেওড়াপাড়ার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান জানান, খালগুলো নষ্ট হবার পেছেনে এলাকাবাসীর দায়ই বেশি। ময়লা আবর্জনা নির্বিঘ্নে সবাই এই খালে ফেলে। আবার সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাদের এই খাল পরিদর্শনেও আসতে দেখি নাই। এখন আমাদের বাচ্চাদের বিভিন্ন রোগ হওয়াসহ ব্যাপক পরিমাণ মশার উপদ্রবে আমরা ভোগান্তিতে আছি। শীত হবার সঙ্গে সঙ্গেই এবার যে পরিমাণ মশা বেড়েছে তাতে চিকুনগুনিয়াসহ ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া মহামারী আকারে দেখা যেতে পারে।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সোবহান বাংলানিউজকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন সম্প্রতি জানিয়েছে তারা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে যারা এই খালে ময়লা আবর্জনা ফেলে তাদের বিরুদ্ধে। সিটি কর্পোরেশনকে বলতে চাই, আপনাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট কে পরিচালনা করবে? আপনারা তো কখনও একবার উঁকি মেরেও দেখেন না। এখানে মানুষের সচেতনতারও অনেক প্রয়োজন আছে। কিন্তু এভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার আগে খালগুলো পুনরুদ্ধারের ব্যবস্থাও করতে হবে। তারা মশা নিধনের অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। কিন্তু সেগুলো জীবিত মশাগুলো বা উড়ে বেড়ানো মশার ক্ষেত্রে। কিন্তু মশার বংশবিস্তারের স্থানটি কেউ নজরে আনেননি। ফলে এ সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশন ও ওয়াসা উভয়ের।
জলাবদ্ধতা ছাড়াও খাল দখল করে দোকানপাট বা বাড়িঘর বানিয়ে থাকতেও দেখা গেছে। যে কারণে পানির প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে, আবার অল্প পরিমাণ পানি গিয়ে নদীতে পড়ায় নদীর পানিও দূষিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এম এ রাজ্জাক বাংলানিউজকে জানান, খাল পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব সম্পূর্ণরূপে ওয়াসার। এমনকি এই খাল পুনঃখননের কাজটাও তারা করেছে। খালের দুই পাড়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ দূরত্ব পর্যন্ত তাদের জমি। এর বাইরে যত ময়লা আবর্জনা আছে তা আমরা প্রতিদিন পরিষ্কার করি।
তবে একই বিষয়ে ওয়াসার বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে ওয়াসার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বাংলাদেশ সময়: ০৮১১ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৮
এমএএম/এমজেএফ