ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৫ ভাদ্র ১৪৩২, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

জাতীয়

বাংলাদেশের জন্যে কিছু একটা করতে পারলেই গর্বে বুক ভরে ওঠে

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:৩১, অক্টোবর ২৪, ২০১৬
বাংলাদেশের জন্যে কিছু একটা করতে পারলেই গর্বে বুক ভরে ওঠে

ঢাকা: ‘তথ্য প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ বহুদূর এগিয়ে গেছে। আরো উন্নত করবে।

এ দেশের উন্নতি দেখলেই গর্বে বুক ভরে ওঠে। কারণ বাংলাদেশ আমার জন্মভূমি। প্রিয় দেশ’।

কথাগুলো বলছিলেন যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ কাউন্টি কাউন্সিলের ডেপুটি লর্ড মেয়র কাউন্সিলার, কমিউনিটি লিডার ও লেবার পার্টির নেতা দেলোওয়ার আলী।

বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ২০ তম জাতীয় সম্মেলনে অতিথি হয়ে বাংলাদেশে আসেন তিনি।
সঙ্গী ছিলেন ওয়েলশের অ্যাসেম্বলি মেম্বার জেনি রাথবোন।

সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেন তারা। পরদিন ২৩ অক্টোবর জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান দেলোওয়ার আলী। সেখানেই বাংলানিউজের সঙ্গে একান্তে কথা বলেন তিনি।

মিস্টার আলী বাংলানিউজকে বলেন, মাত্র সাত বছর বয়সে আমি যুক্তরাজ্যে চলে যাই। সময়টা তখন ১৯৭৮ সাল। বাবা আলহাজ্ব রাশেদ আলী কাজ করতেন বৃটিশ নেভাল ফোর্সে। আমার জন্ম সিলেটের ওসমানীনগর তাজপুরে।

যে চারটি সাংবিধানিক রাষ্ট্র: ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ওয়েলস্‌ এবং উত্তর আয়ারল্যান্ড-এর সমন্বয়ে যুক্তরাজ্য গঠিত। তার একটি ওয়েলস্‌। যার রাজধানী কার্ডিফ।
ইংল্যান্ডের অধিবাসীদের যেমন ইংরেজ, স্কটল্যান্ডের অধিবাসীদের স্কটিশ। তেমনি ওয়েলসের অধিবাসীরা পরিচিত ওয়েলশ হিসেবে। আর ভাষাও আলাদা। ওয়েলশ। ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম এডওয়ার্ডের শাসন থেকে ইংরেজির প্রভাব ব্যাপক হতে থাকে সেখানে। ওয়েলসের প্রিন্স লিওয়েলেন দ্যা গ্রেটকে পরাজিত ও হত্যার পরিণতির মধ্য দিয়ে ওয়েলসে ইংরেজ শাসনের সূচনা।

সেই দেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নাগরিকের হিসেবে নিজ মাতৃভূমিতে ক্ষমতাসীন বৃহৎ ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলের আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ। যোগদান। কেমন ছিলো সেই অনুভূতি?

‘অসাধারণ। অসম্ভব গর্বের’। বাংলাদেশকে হৃদয়ে ধারণ করে উত্তর দিচ্ছিলেন দেলোওয়ার আলী।
নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন,‘আজকের এই অবস্থানে আসতে অনেক পরিশ্রম আর মেহনত করতে হয়েছে আমাকে। কারণ ওয়েলসে বাংলাদেশিদের সংখ্যাটা লন্ডনের তুলনায় অনেক কম।
সেখানে একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত বৃটিশ নাগরিকের এই অবস্থানে আসাটা কতটা কষ্ট আর গর্বের। যারা এসেছেন ঠিক তারাই বলতে পারবেন।

১৯৯২ সালে আমি রাজনীতিতে যোগ দিই। বর্তমানে কার্ডিফ কাউন্টি কাউন্সিলের কাউন্সিলর ছাড়াও লেবার পার্টির নির্বাচিত সদস্য ও সেখানকার গ্রুপ সেক্রেটারি। আমি বাংলাদেশকে হৃদয়ে লালন করি। এই দেশ আমার মাতৃভূমি। আমার বাবা মা এখনো এই দেশেই ঘুমিয়ে আছেন। তাদের শেষ শয্যাটাও এখানে। বলতে পারেন বাংলাদেশের সঙ্গে আমার নাড়ির টান। প্রতি বছরই এ দেশে আসি। তবে এবারের আসাটা ব্যতিক্রম। নিজ দেশেই এসেছি অতিথি হয়ে। বাংলাদেশের আওয়ামী লীগ তাদের সম্মেলনে আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। যোগ দিতে পেরে আমি গর্বিত।

আমি এখানে এসেছি ওয়েলস্‌ সরকারের প্রতিনিধি হয়ে। আমি অভিভূত। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আরো অগ্রযাত্রার পথে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আমার কথা বলার সুযোগ হয়েছে। তাকে জানিয়েছি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ওয়েলস্‌-এ যুক্তরাজ্যের সপ্তম শহীদ মিনারটি তৈরি করতে যাচ্ছি আমরা। শুনে তিনি খুব খুশি হয়েছেন।
তথ্য প্রযুক্তি খাতে উন্নতি করেছে দেশ। বাংলাদেশকে আরো উন্নত দেখতে চাই আমরা। আমাদের আলোচনায় উঠে আসে অর্থনৈতিক উন্নতি ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়। আসলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। দিন দিন ঢাকায় জনসংখ্যা বাড়ছে। সে অনুযায়ী বাড়ছে না গণ পরিবহন ব্যবস্থা। সেখানে মেট্রো রেলের মতো কর্মসূচি নিঃসন্দেহে দেশটির গণপরিবহন ব্যবস্থায় উন্নয়নের ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করবে’- জানান তিনি।

‘আমি সাউথ ওয়েল্‌স্‌ ফায়ার অথরিটির মেম্ব‍ার। বাংলাদেশে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সকে শক্তিশালী করার বিষয়ে আমার আগ্রহের কথা সরকারকে জানিয়েছি। বলেছি, দমকলের আধুনিক ইঞ্জিনসহ অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আমরা বিনামূল্যে দিতে চাই। বাংলাদেশকে কেবল নিয়ে আসার খরচটা দিলেই হবে।

ক্ষমতাসীন সরকার অনেক ভালো করছে। দেশটির উন্নয়নে প্রভূত ভূমিকা রাখছে। আমরা বাংলাদেশ সরকার ও ওয়েলস্ সরকার একসাথে কাজ করতে চাই। আমাদের লক্ষ্য একটাই। বাংলাদেশের উন্নয়ন। আর এ দেশটির জন্যে কিছু করতে পারা মানে জন্মভূমির ঋণ শোধ করার ক্ষুদ্র প্রয়াস। তবে আনন্দে আর গর্বে বুক ভরে ওঠে যখন দেশটির জন্যে, দেশের মানুষের জন্যে ভালো কিছু করতে পারি। কারণ বাংলাদেশ যে আমার প্রিয় জন্মভূমি’-অশ্রুভেজা আবেগেই কথাগুলো বলছিলেন দেলোওয়ার আলী।

বাংলাদেশ সময়: ০৯২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৬
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।