পঞ্চগড় ঘুরে: পাথর জাদুঘর! শুনেই হয়তো বেখাপ্পা মনে হতে পারে। পাথরের আবার জাদুঘর হয় নাকি! আসলেই সেটি তাই! আবার এসব পাথরই মনে করিয়ে দেয়, কয়েক হাজার বছর আগেকার কথা!
পুরনো-নতুন নানা পাথরের সমাহার নিয়ে হিমালয় কন্যা পঞ্চগড়ে স্থাপন করা হয়েছে পাথর জাদুঘর।
পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের একটি কক্ষে ১৯৯৭ সালের ১ মার্চ মিউজিয়ামটি স্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির তৎকালীন অধ্যক্ষ ড. নাজমুল হক।
তার গড়া ‘রকস মিউজিয়ামে’ রয়েছে হাজার বছরের পাথরও। এসবের গায়ে লেখা রয়েছে কোথা থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে তারও বর্ণনা।
রয়েছে আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা, নুড়ি পাথর, সিলিকা নুড়ি ও সিলিকা বালি, হলুদ ও গাঢ় হলুদ বালি, কাঁচবালি, খনিজবালি, লাইমস্টোন, পলি ও কুমোর মাটি এবং কঠিন শিলাসহ আরও অনেক পাথর।
মিউজিয়ামে রয়েছে বিশাল আকৃতির বেলে পাথর, গ্রানাইট পাথর, কোয়ার্জাহিট, ব্যাসল্ট, শেল, মার্বেল, নকশা করা খিলান ও স্ল্যাব পাথর, বিভিন্ন রেখা, লেখা ও চিত্রাঙ্কিত শিলা এবং ধূসর পাথরও।
কোনোটি গোল, কোনোটি লম্বা! একেকটি আবার চেপ্টা কিংবা লম্বাটে। এসব পাথরের গায়ে আঁকা রয়েছে বিভিন্ন ধরনের সাংকেতিক চিহ্নও। সংগ্রহে আছে আবহমান বাংলার চিরাচরিত বাহন বিশাল আকৃতির নৌকাও।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভূখণ্ডের বয়স নির্ণয়, ভূ-বৈশিষ্ট্য অনুসন্ধান, প্রাগৈতিহাসিক কালের নমুনা সংগ্রহ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং নৃ-তাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক এ মিউজিয়াম স্থাপন করা হয়েছে।
সম্প্রতি ঘুরে দেখা যায়, জাদুঘরটির সামনের গোল চত্বরে বেশ কয়েকটি পাথর বসানো আছে। এসব পাথরের বয়স কমপক্ষে ২০ বছর। যার বর্ণনা পাশের ছোট্ট ফলকে দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ রয়েছে প্রত্যেকটি পাথরের নাম ও সংগ্রহ পদ্ধতিও।
মিউজিয়ামের গ্যালারি সবার জন্যে উন্মুক্ত। কলেজ চলাকালে যেকোনো দর্শনার্থী এসব পাথর দেখতে পারেন।
পাশেই একটি সংগ্রহশালাও রয়েছে। এতে মহানন্দা, ডাহুক বিধৌত উত্তরের জনপদ পঞ্চগড়ের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, তাদের ব্যবহার্য জিনিসপত্র এবং নদীর নিচে ও ভূগর্ভে পাওয়া কাঠ, ৩০০ থেকে ২ হাজার বছরের পুরনো ইট-পাথরের মূর্তি ও পোড়ামাটির নকশা রয়েছে। যা দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর কানাই কুণ্ডু জানান, হিমালয়ের কোল ঘেঁষা এ জেলার ভূগর্ভের অল্প গভীরে প্রচুর নুড়ি পাথর রয়েছে। গভীরে রয়েছে প্রাচীন যুগের শিলাস্তরও। এ শিলাস্তরের কালানুক্রমিক নমুনা নিয়েই এখানে মিউজিয়ামটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন তৎকালীন অধ্যক্ষ।
সংগ্রহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এখানে ২৫ ফুটের বেশি আয়তনের একটি নৌকা আছে। যার বয়স প্রায় এক হাজার বছর। আর কয়েকটি পাথর জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়’।
‘যেগুলোতে স্থানীয় লোকজন বিভিন্ন সময় পূজা-অর্চনা করতেন। কয়েকটি পাথর সম্পর্কে মিথও প্রচলিত রয়েছে। কোনো কোনো পাথরে অনেক বছর আগের কারুকাজ রয়েছে’।
যেভাবে যাবেন:
বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকে বাসে কিংবা ট্রেনে পঞ্চগড়ে আসা যায়। ধাক্কামারা বাসস্ট্যান্ডে নেমে রিকশা বা অটোরিকশা করে সরকারি মহিলা কলেজে গেলেই দেখা মিলবে ‘রকস মিউজিয়ামে’র।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৬
এমএ/এএসআর