হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। আগুন লাগার পর সময়মতো নির্বাপণ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা।
রোববার (১৯ অক্টোবর) কার্গো পার্কিং ইনচার্জ ও অহনা কুরিয়ার সার্ভিসের সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার মমিন মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, দেড় ঘণ্টা ধরে আগুন জ্বলতে থাকা সত্ত্বেও সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হলে আগুন এত দ্রুত ছড়াতো না। তার কথায় ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের দায়িত্বহীনতার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
মমিনের অভিযোগ, প্রাথমিকভাবে দুটি বড় ফায়ার সার্ভিস ইউনিট ঘটনাস্থলে এলেও ‘পারমিশন’ বা ‘শান্তশিবির’র কারণে সব জায়গায় আগুন নিয়ন্ত্রণে যেতে পারেনি। তার দাবি, ওই ইউনিটগুলোর গাড়িতে থাকা পানি দিয়েই আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব ছিল।
আগুনে মমিন মজুমদারের ব্যক্তিগত প্রকল্প, ব্যবসা ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার ব্যবসার মধ্যে কেমিক্যাল, পার্কিং, কুরিয়ার সার্ভিস, কম্পিউটার যন্ত্রাংশ (স্ক্যানি ব্র্যান্ড), হোটেল ও রেস্টুরেন্ট অন্তর্ভুক্ত ছিল। তিনি প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতির কথা উল্লেখ করেছেন।
তিনি আরও বলেন, কেমিক্যাল গুদামে আগুন লাগায় তা নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে এবং বিকাল পর্যন্ত জ্বলছিল। বর্তমানে কেউ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করতে পারছে না। ২০১৩ সালের অগ্নিকাণ্ডের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী তখন আমরা নিজেরা পানি দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছি, এবার সেটা সম্ভব হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী বিমানবন্দরের বেল অর্ডার অপারেটর ওয়ালিদ জানান, শনিবার বিকেল ২টার দিকে স্কাই লাউঞ্জে ধোঁয়া দেখা যায়। ভেতরে থাকা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে, পরে নৌবাহিনীর একটি ইউনিট যোগ দেয়। তবে মুহূর্তের মধ্যে আগুন পুরো কার্গো এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
কুরিয়ার মাস্টার ইয়ার কোম্পানির সিএনএফ এজেন্ট মো. রোকন মিয়া বলেন, প্রতিদিন টন টন মাল কার্গো হয়ে আসে। এই ঘটনায় ব্যবসায়ীরা বিশাল ক্ষতির মুখে পড়েছেন। স্কাই ক্যাপিটেলের অফিসে কেমিক্যাল, ফেব্রিক, মেশিনারিজসহ নানা ধরনের মালামাল রাখা থাকে।
ইমপোর্ট সেকশনের কর্মী সোহেল মিয়া বলেন, আগুন ‘ডেঞ্জারাস গুডস’ গুদাম থেকে শুরু হয়েছে, যেখানে বিস্ফোরক দ্রব্য রাখা ছিল। এসব দ্রব্য বিকট শব্দে ফেটে যাওয়ায় আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে। তিনি জানান, এই ধরনের আগুনে পানি দিলেও নিভবে না।
কুরিয়ার কোম্পানি তামিম এক্সপ্রেস লিমিটেডের পরিচালক সুলতান আহমেদ বলেন, শনিবার হাফ শিফট কার্যক্রম চলছিল। সকাল ৯টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত খোলা ছিল কার্গো কমপ্লেক্স। আমাদের আড়াই টন মাল পুড়ে গেছে।
তিনি আরও জানান, আগুনে গার্মেন্টস আইটেম, জিপার, ফেব্রিকস, লেবেলসহ সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) দুপুর আনুমানিক ২টা ১৫ মিনিটে বিমানবন্দরের কার্গো এলাকায় আকস্মিকভাবে আগুন লাগে। খবর পেয়ে বিমানবন্দর ফায়ার সেকশন, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফায়ার ইউনিটসহ ১৩টি স্টেশনের ৩৭টি ইউনিট সম্মিলিতভাবে অগ্নিনির্বাপণ কার্যক্রমে অংশ নেয়। প্রায় সাত ঘণ্টার চেষ্টায় রাত ৯টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। রোববার বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণ নির্বাপন করা হয়। প্রায় সাড়ে ২৬ ঘণ্টা পর পুরোপুরি নিভেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আগুন, নিশ্চিত করেছে ফায়ার সার্ভিস।
এমএমআই/এমজে