ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ভিলেজের আমদানি কমপ্লেক্সে লাগা ভয়াবহ আগুন ঘণ্টার পর ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিস পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেওয়া হলেও সম্পূর্ণ আগুন নির্বাপণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা।
শনিবার (১৮ অক্টোবর) রাত দেড়টার দিকে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুম থেকে ডিউটি অফিসার রাকিবুল হাসান এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, বিমানবন্দরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলে এখনও ফায়ার সার্ভিস থেকে ৩৫টা ইউনিট ড্যাম্পিংয়ের কাজ করে যাচ্ছে। ড্যাম্পিং সম্পূর্ণ হলে পুরোপুরি নির্বাপণের ঘোষণা দেওয়া হবে।
এর আগে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট কাজ করে রাত ৯টা ১৮ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেওয়া হয়। দুপুর আনুমানিক ২টা ১৫ মিনিটের দিকে বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করেন সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনীসহ বিমানবন্দরের অগ্নি নির্বাপনের স্পেশাল টিম ও আরও ছিলেন আনসার সদস্যরা।
এই অগ্নিকাণ্ডের সময় পুরো বিমানবন্দর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছিলেন বিপুল সংখ্যক ডিএমপির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাশাপাশি বিজিবি।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকার (দক্ষিণের) জোনকমান্ডার ফয়সালুর রহমান, বিমানবন্দর অগ্নিকাণ্ডের স্থল থেকে রাত পৌনে দুইটার দিকে বলেন, আগুন অনেক আগেই নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। বর্তমানে অগ্নিকাণ্ডের স্থলে ভেতরে প্রবেশ করে ড্যাম্পিংয়ের কাজ চলছে মানে জায়গায় জায়গায় কোন ছোট ছোট আগুন আছে কি না সেগুলো খোঁজা হচ্ছে। রাতভর এই কাজ চলমান থাকবে। আগুন নিয়ন্ত্রণের পর ‘ড্যাম্পিং’ বলতে বোঝায়, আগুন পুরোপুরি নিভে যাওয়ার পর অবশিষ্টাংশকে ঠান্ডা করা এবং সম্ভাব্য পুনরায় জ্বলে ওঠা রোধ করা। এর মধ্যে জল দিয়ে পুরো এলাকা ঠান্ডা করা, ধোঁয়া ও গ্যাস অপসারণ করা, জায়গায় জায়গায় লুকিয়ে থাকা আগুন খুঁজে বের করা ও নির্বাপণ করা এবং পেশাদার অগ্নিনির্বাপক কর্মীদের দ্বারা সবকিছু পুরোপুরি পরীক্ষা করে নিশ্চিত করা যে আগুন আর জ্বলে ওঠার সম্ভাবনা নেই। আর নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, আগুন আছে তবে সেটা আর বেড়ে যাওয়া অথবা ছড়িয়ে পড়ার কোন সম্ভাবনা নাই। অগ্নিনির্বাপণের সদস্যরা আগুন আয়ত্তে রেখেছেন।
এদিকে জানা যায়, কার্গো কমপ্লেক্স হচ্ছে, আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীর পাশাপাশি পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা হয়। যাত্রীরা টার্মিনাল দিয়ে চলাচল করেন। সেখানেই সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন। কিন্তু পণ্য আমদানি-রপ্তানির প্রক্রিয়াটি কিছুটা ভিন্ন। পণ্যের চালান বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরপরই তা বিমানে তুলে বিদেশে পাঠানো হয় না। কিংবা বিদেশ থেকে পণ্যের চালান বিমানবন্দরে নামার সঙ্গে সঙ্গে তা খালাস হয় না। শুল্ক বিভাগ, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বিমান সংস্থাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়। একে কার্গো ভিলেজ বলা হয়।
পণ্য আমদানি রপ্তানি হয় তিনভাবে। এগুলো, স্থলপথ, সমুদ্রপথ ও আকাশপথ। আকাশপথের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালিত হয় বিমানবন্দর থেকে। বিমানবন্দর দিয়ে সাধারণত তুলনামূলকভাবে কম ওজনের মেশিনপত্র, তৈরি পোশাক, শাকসবজিসহ পচনশীল পণ্য, ইলেকট্রনিক পণ্য ইত্যাদি বাংলাদেশে রপ্তানি ও আমদানি হয়। ডিএইচএলসহ বিশ্বখ্যাত কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমেও এ দেশে আকাশপথে পণ্য ও দলিলপত্র (ডকুমেন্ট) আসে।
শুল্কায়ন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য যেখানে আমদানি-রপ্তানির পণ্য রাখা হয়, সেই জায়গা বা গুদামটিকে কার্গো ভিলেজ বলা হয়। অনেক বিমানবন্দরে আমদানি ও রপ্তানির জন্য আলাদা আলাদা কার্গো কমপ্লেক্স থাকে। যেমন হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আমদানি ও রপ্তানির জন্য আলাদা কার্গো ভিলেজ বা কমপ্লেক্স আছে। এই আমদানি কমপ্লেক্সেই আগুনের ঘটনা ঘটে।
এজেডএস/এএটি