রাজধানীর মিরপুরের শিয়ালবাড়িতে ভয়াবহ আগুনে পুড়ে যাওয়া পোশাক কারখানায় প্রাণ হারিয়েছেন ১৬ শ্রমিক। আগুনের ভয়াবহতা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেছেন তরিকুল ইসলাম নামের এক শ্রমিক।
বুধবার (১৫ অক্টোবর) বাংলানিউজের সঙ্গে কথা হলে তরিকুল বলেন, যদি আমি দুই তলায় থাকতাম, তাহলে আমিও মারা যাইতাম। আমার ভাগ্য ভালো ছিল তাই বাইচা (বেঁচে) গেছি। কিন্তু আমার সঙ্গে যারা কাজ করতো, তারা আগুনে পুড়ে মারা গেছে। এই ঘটনার জন্য কারখানার মালিক দায়ী।
ঘটনাস্থলে দেখা গেছে হৃদয়বিদারক দৃশ্য। মেয়ের পাসপোর্ট সাইজের ছবি হাতে আহাজারি করছেন সুরমা বেগম। তার মেয়ে নার্গিস আক্তার মাত্র দুই সপ্তাহ আগে ‘আনোয়ার ফ্যাশন’ নামে পোশাক কারখানায় অপারেটর হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে সুরমা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, আর্মি, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস কেউ কিছু বলতেছে না। ভিতরে কী অবস্থা, মাইয়াডার কিছু হইল কি না, কিছুই জানি না।
তিনি জানান, এসএসসি পরীক্ষার পর নার্গিস নিজের চেষ্টায় চাকরি নিয়েছিল। মেয়েকে তিনিই বাসায় সেলাই শেখান।
আগুনের প্রত্যক্ষদর্শী আফজাল সরকার। তিনি পাশের একটি শোরুমের ব্যবস্থাপক। আফজাল বলেন, আগুন প্রথমে লাগে কারখানার নিচতলার ওয়াশ সেকশনে। মুহূর্তের মধ্যেই উপরের তলাগুলো ধোঁয়ায় ভরে যায়।
অন্য শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, ভবনের ছাদে ওঠার দুটি দরজায় তালা দেওয়া ছিল। ফলে কেউ উপরে গিয়ে রক্ষা পেতে পারেননি। তারাও বলছেন, তালা না থাকলে ১৬ জনের কারওই মৃত্যু হতো না। এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষের ওপর ক্ষোভ ঝাড়েন তারা।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, পোশাক কারখানা ও রাসায়নিক গুদামের আগুন পুরোপুরি নেভেনি। ঘটনাস্থল থেকে এখনও ধোঁয়া বের হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিস জানায়, আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও ভবনের ভেতরে থাকা কেমিক্যালের কারণে পুরোপুরি নির্বাপণে সময় লাগছে।
আজও পুড়ে যাওয়া ‘রাইজিং ফ্যাশন’ কারখানার শ্রমিকরা ঘটনাস্থলে ভিড় করছেন— কেউ এসেছেন সহকর্মীদের খোঁজে, কেউবা দেখতে যে কারখানাটি আবার চালু হবে কি না।
এর আগে, মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে শিয়ালবাড়িতে পোশাক কারখানা ও ‘কসমিক ফার্মা’ নামের রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ১১টা ৫৬ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম পাঁচটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করে; পরে আরও সাতটি ইউনিট যোগ দেয়।
অবশেষে ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলা থেকে ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ফায়ার সার্ভিসের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, আগুনের সূত্রপাত হয় নিচতলায়। ছাদে ওঠার দরজা দুটি তালাবদ্ধ থাকায় শ্রমিকরা বের হতে না পেরে পুড়ে মারা যান।
এমএমআই/এমজে