ঢাকা, শনিবার, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২, ০২ আগস্ট ২০২৫, ০৭ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা মিলেছে

সেই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩:২২, আগস্ট ১, ২০২৫
সেই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত আদালত গঠন

ব্যাপক নাশকতার ছক কষতে সম্প্রতি ঢাকায় আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের একটি গোপন বৈঠকে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সেই কর্মকর্তাকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ঘটনাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে একটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ওই কর্মকর্তাকে আটকের বিষয়টি জানিয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি একটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এক জনৈক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা সংক্রান্ত অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগটি প্রাপ্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে।  
এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৭ জুলাই ওই সেনা কর্মকর্তাকে তার নিজ বাসস্থান রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে আটক করে সেনা হেফাজতে নেওয়া হয়।  

আইএসপিআর জানায়, ঘটনাটির সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে একটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে। পূর্ণ তদন্ত শেষ হওয়ার পর প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে সেনা আইনে তার বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থার সঙ্গে প্রয়োজনীয় সমন্বয় সাধন করা হচ্ছে। এ ছাড়া তার কর্মস্থল থেকে অনুপস্থিত থাকা সংক্রান্ত ব্যত্যয়ের বিষয়ে অপর আরেকটি তদন্ত আদালত গঠন করা হয়েছে এবং তদন্ত শেষে আদালতের সুপারিশক্রম সেনা আইন অনুযায়ী দায় নিরূপণ করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।  

আইএসপিআর বলেছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক, শৃঙ্খলাপরায়ণ ও পেশাদার প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার কোনো সুযোগ নেই। রাজনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে কোনো সেনা সদস্যের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার সব সদস্যের মধ্যে পেশাদারিত্ব, শৃঙ্খলা ও সাংবিধানিক দায়িত্ববোধ বজায় রাখার প্রতি সর্বদা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধান ভারতে পলাতক শেখ হাসিনা দেশে ফেরানোর প্রেক্ষাপট তৈরি করতে দলটি অনেক আগে থেকেই নানা চক্রান্তে লিপ্ত। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সূত্র মারফত জানা যায়, নাশকতার মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ তাদের বাছাইকৃত ‘ক্যাডারদের’ প্রশিক্ষণও দিয়েছে।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে দেওয়া এসব প্রশিক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত মেজর পদমর্যাদার সাদেকুল হক সাদেক নামে ওই কর্মকর্তা। তদন্তে তিনি দোষী প্রমাণিত হলে সেনাবাহিনীর প্রচলিত নিয়মে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত করতে আগস্ট মাসে দেশজুড়ে নাশকতার ‘নীলনকশা’ সাজিয়েছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ ও কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রায় আড়াই হাজার ক্যাডারকে এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ দিয়েছে দলটি। রাজধানীর মিরপুর, ভাটারা, কাটাবন ও পূর্বাচল এলাকায় দেওয়া হয় এসব প্রশিক্ষণ।

সূত্র জানায়, প্রশিক্ষণের জন্য কর্মশালার নামে গত ৮ জুলাই রাজধানীর ভাটারা থানা এলাকার একটি কনভেনশন সেন্টার ভাড়া নেওয়া হয়। ৪০ হাজার টাকায় ভাড়া নেওয়া ওই কনভেনশন সেন্টারে ওইদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠন এবং ভাতৃপ্রতিম সংগঠন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের প্রায় ৪০০ জন ক্যাডারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই প্রশিক্ষণে অংশকারীদের আগে থেকেই একটি টোকেন দেওয়া হয়। যা দুই দিন আগে মিরপুর ডিওএইচএসে একটি মিটিংয়ে আবেদনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়েছিল। পূর্বের দেওয়া সেই টোকেন দেখিয়ে প্রশিক্ষণস্থলে প্রবেশ করেন অংশগ্রহণকারীরা।

এজেডএস/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।