বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সংহিসতার ঝুঁকিতে রয়েছে ২৯টি জেলা। এরমধ্যে উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকাসহ ৫টি জেলা এবং মাঝারি ঝুঁকিতে রয়েছে ২৪টি জেলা।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ আয়োজিত ‘মসজিদ, মন্দির, মাজার, আখড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় সম্প্রীতি যাত্রার ডাক এবং আসন্ন দুর্গাপূজায় ঝুঁকি পর্যালোচনা ও করণীয়’ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে এ তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মীর হুজাইফা আল মামদূহ জানান, “বাংলাদেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও রাষ্ট্রচেতনার ভিত্তি গড়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের দীর্ঘ ঐতিহ্যের ওপর। এই মাটিতে মসজিদের মিনার যেমন দাঁড়িয়ে আছে, তেমনি শত শত বছর ধরে পূজামণ্ডপ, মাজার, আখড়া, বাউল আসর ও অন্যান্য আধ্যাত্মিক-সাংস্কৃতিক কেন্দ্র মানুষের জীবন ও চেতনাকে আলোকিত করেছে।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সম্প্রীতি বিনষ্টের অপতৎপরতা চলছে, এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার পরিসর আরও বিস্তৃত হয়েছে। বৈষম্যহীনতার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের পরও এ প্রবণতার কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটেনি। বরং গুজব, উসকানি ও সহিংসতার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে মন্দির-মণ্ডপে ভাঙচুর, মাজার ও দরগাহে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট, আখড়া ও বাউল-কাওয়ালি আসরে হামলা, এমনকি মসজিদে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার জেরে বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও গোলযোগ সংঘটিত হয়েছে—এসব কেবল বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এগুলো হলো একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বহিঃপ্রকাশ, যার লক্ষ্য বাংলাদেশের সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে দুর্বল করা। তাছাড়া এই হামলাগুলো কোনো একক সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে হয়নি বরং এগুলো বাংলাদেশের সামগ্রিক সামাজিক সংহতি ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলার ওপর আঘাত আনতে করা হয়েছে। ”
তিনি জানান, বিগত দশ বছরের (২০১৪ থেকে ২০২৫) বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, পূজা ও অন্যান্য সময়ে পূজামণ্ডপ, শোভাযাত্রার রুট বা সংখ্যালঘু বাড়িঘরে হামলার ঘটনাসমূহ বিশ্লেষণ করে আমরা একটা ঝুঁকি মানচিত্র তৈরি করেছি। এতে দেখা গেছে, মোট ২৯টি জেলা ঝুঁকিপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে, যার মধ্যে উচ্চ ঝুঁকিতে ৫টি এবং মাঝারি ২৪টি জেলা। উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জেলাগুলো হলো—ঢাকা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, রংপুর এবং যশোর।
মাঝারি ঝুঁকিতে থাকা ২৪ জেলা হলো—গাজীপুর, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কুমিল্লা, ব্রহ্মণবাড়িয়া, লক্ষীপুর, ফেনী, পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, সুনামগঞ্জ, বরিশাল, পটুয়াখালী ও নেত্রকোনা।
সম্প্রীতি যাত্রার মতে, “এসব হামলা কোনো একক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়, বরং বাংলাদেশের সামাজিক সংহতি ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলার ওপর সরাসরি আঘাত। ”
সাম্প্রতিক হামলার পর্যালোচনা করে বলা হয়, পূজার প্রস্তুতির মধ্যেই মণিপুরে প্রতিমা ভাঙচুর এবং কুমিল্লায় চারটি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে। রাজবাড়ীতে এক ব্যক্তির লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলার মতো পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছে।
একটি পত্রিকার বরাত দিয়ে জানানো হয়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসেই ৮০টি মাজার ও দরগাহে হামলা হয়েছে। সংখ্যালঘু, সুফি, বাউল এবং আদিবাসী—সব ধরনের প্রান্তিক গোষ্ঠী আজ একযোগে ঝুঁকির মুখে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাড়তি শঙ্কার কথা তুলে ধরে বলা হয়, সংগঠনটি সতর্ক করে জানায়, নির্বাচনের আগমুহূর্তে সহিংসতার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ভোটের আগে-পরে সংখ্যালঘুদের আবাসিক এলাকা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ও দরবারগুলো সহজে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন কবি ফেরদৌস আরা রুমী, লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা, বংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, শিল্পী অরূপ রাহী ও বিথী ঘোষ।
জিসিজি/এমজেএফ