ঢাকা, বুধবার, ১৪ শ্রাবণ ১৪৩২, ৩০ জুলাই ২০২৫, ০৪ সফর ১৪৪৭

জাতীয়

ড. ইউনূস কি শহীদ পরিবারের মুখোমুখি হতে ভয় পান, প্রশ্ন ইয়ামিনের বাবার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭:৫৭, জুলাই ২৯, ২০২৫
ড. ইউনূস কি শহীদ পরিবারের মুখোমুখি হতে ভয় পান, প্রশ্ন ইয়ামিনের বাবার ‘জুলাই গণহত্যার বিচার: আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী’তে বক্তব্য দেন শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন | ছবি: শাকিল আহমেদ

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জুলাই আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের মুখোমুখি হতে ভয় পান কি না, এমন প্রশ্ন করেছেন শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহিউদ্দিন।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ‘জুলাই গণহত্যার বিচার: আলোচনা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শনী’ শিরোনামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

মো. মহিউদ্দিন বলেন, “বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কি শহীদ পরিবারের মুখোমুখি হতে ভয় পান? কারণ, ওনার সঙ্গে আমরা কিছু কিছু পরিবার আলাদাভাবে বা জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্য হিসেবে দেখা করতে গিয়েছি। উনি বলেছেন, আপনাদের (শহীদ পরিবার) সঙ্গে আমার বসা হয়নি। আমি একদিন সারাদিন আপনাদের জন্য রাখব, আপনাদের কথা শুনব। কিন্তু এক বছর পার হয়ে গেছে, উনি আমাদের সময় দেননি, দিতে পারেননি।

শহীদ ইয়ামিনের বাব বলেন, আগামী ৫ আগস্ট জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আমরা একটি প্রজেক্ট সাবমিট করলাম বাংলাদেশ ব্যাংকে, সেখানে ওনার (প্রধান উপদেষ্টা) সম্মতিতে চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে সকল শহীদ পরিবারকে আনা হবে এবং উনি সেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, ওনার দপ্তর এটা অস্বীকার করেছে। এখন বলা হচ্ছে, ৫ আগস্ট সমস্ত জুলাই যোদ্ধা এবং শহীদ পরিবার স্ব স্ব ডিসি অফিসে উপস্থিত থাকবেন, আর উনি ওইদিন আমাদের ভিডিও বার্তা দেবেন। কেন? যাদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে উনি আজকে প্রধান উপদেষ্টা এবং অপ্রিয় সত্যি হলেও বলব, ওনার হাজার কোটি টাকার ট্যাক্স মাফ করে নিয়েছেন, উনি ছয় মাসে দণ্ডিত আসামি ছিলেন, সেটিও মাফ করে নিয়েছেন, উনি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিয়েছেন আমাদের সন্তানদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে। এখন আমাদের মুখোমুখি হতে উনি ভয় পান, কেন?

তিনি আরও বলেন, আমার সন্তানরা শহীদ হয়েছে যে আবেগ নিয়ে, যে বৈষম্যহীন একটি দেশ গঠনের জন্য, কোথাও তার কোনো প্রকাশ দেখছি না। দুঃজনক হলেও সত্য, কাকে দিয়ে আমরা জুলাই হত্যার তদন্ত করব? যে বাহিনী হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত, তাকে দিয়েই যদি তদন্ত করানো হয়....। দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারক দোসরের কাছ থেকে সুবিধাভোগী। আপনারাই প্রমাণ করেছেন, ওনার নামে বরাদ্দ ফ্ল্যাট বাতিল করা হয়েছে। তার মানে কী? তিনি একজন অপরাধী, তিনি বিচারক থাকতে পারেন না। কিন্তু তিনি এখনো বহাল। তিনি কি বিচার করবেন আমাদের সন্তানদের।

মো. মহিউদ্দিন বলেন, বিভিন্ন জায়গায় স্বৈরাচারের দোসরদের বসিয়ে রেখে, আপনারা আমাদের শোনাচ্ছেন সংস্কারের কথা। প্রত্যেকটা জায়গায় স্বৈরাচারের দোসরদের ঢুকিয়ে রেখে আমাদের সান্ত্বনা দেওয়া হয়। এই কথাগুলো বলতে গেলে আমরা বলতে পারি না। আমাদের নাকি বিদেশ থেকে কারা বার্তা দেয়!

তিনি আরও বলেন, একটি মামলায় বাবর সাহেব ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে খালাস করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ওই মামলায় যারা আলেম-ওলামা ছিলেন, তাদের এখনো আটকে রেখেছে কোন আইনের বলে? বিডিআরের একটি মামলায় অভিযুক্তদের খালাস দেওয়া হয়েছে, তাদের শাস্তি হয়েছে। কিন্তু তাদের আবার অস্ত্র আইনে আটকানো হয়েছে কোন আইনের বলে? এখনো যদি আমাদের এই আইনই দেখতে হয়, তাহলে আপনারা কী করলেন? একটি বছর চলে গেল! যদি ব্রিটিশ আইনই মানতে হয়, স্বৈরাচারের সেই সংবিধানই মানতে হয়, আমাদের সন্তানরা তো সংবিধান মেনে আন্দোলন করেনি। আর আপনাদের কে বাধ্য করছে সংবিধান মানতে হবে?

শহীদ ইয়ামিনের বাবা আরও বলেন, আপনারা (সরকার) যে সিস্টেমের ভেতর দিয়ে যাচ্ছেন, আপনারা বলছেন, পরবর্তী সরকার এসে আমাদের এই বিচার করে যাবে। কোনোভাবেই সম্ভব না। আপনারা কোনো ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেননি। পরবর্তীতে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা ভোটের বিনিময়ে ক্ষমতায় আসবে। তারা চোরের ভোট চায়, তারা ঘুষখোরের ভোট চায়, তারা চাঁদাবাজদের ভোট চায়, তারা আওয়ামী লীগের দোসরদের ভোটও তারা চায়। ভোটের বিনিময়ে তারা ক্ষমতায় আসবে, তাদের এত ঠেকা পড়ে নাই শহীদদের বিচার করবে। কখনোই তারা করবে না। এই কথাগুলো বললে আমরা আপনাদের কাছে অপ্রিয় হচ্ছি।

তিনি বলেন, এস আলমের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকার দেশ থেকে লক্ষ কোটি টাকা পাচার করেছে। আর এতে সহযোগিতা করেছে মুখোশধারী কিছু ইসলামি ব্যক্তিত্ব। কারণ তারা ইসলামি ব্যাংকগুলোকেই বেশি লক্ষ্য করেছিল। আর তারা লক্ষ্য কোটি টাকা পাচারে সহযোগিতা করেছিল।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব শেখ আবু তাহেরের স্বাগত বক্তব্যে অনুষ্ঠান শুরুর পর জুলাই আন্দোলনে নিহত ও সম্প্রতি মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে হতাহতদের স্মরণে দোয়া ও মোনাজাত করেন আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের যুগ্ম সচিব রুহুল আমীন। এরপর জুলাই আন্দোলন নিয়ে একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধের বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধি আরমান হোসেন প্রমুখ।

এসসি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।