কারিগরি ও অধিভুক্তির দ্বৈত কাঠামো বাতিল এবং বাংলাদেশ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউট (বিআইটি) গঠনের দাবিতে আন্দোলনরত তিন বিভাগের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি পালন করছিলেন। সোমবার (২৮ জুলাই) দুপুরে এই কর্মসূচি পুলিশের লাঠিচার্জে ছত্রভঙ্গ হয়ে গেছে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কর্মসূচি পালনকালে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সংস্কার আন্দোলনের ব্যানারে একত্রিত শিক্ষার্থীদের ওপর এ লাঠিচার্জ চালানো হয়।
দাবি আদায়ে দীর্ঘদিন ধরে ফরিদপুর, বরিশাল ও ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন। দুই মাসের বেশি সময় ধরে নিজ নিজ বিভাগে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা দাবি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি না দেখে রোববার ‘মার্চ ফর ঢাকা’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমবেত হন।
সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক সংক্ষিপ্ত মানববন্ধন করেন আন্দোলনকারীরা। শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ২০ মে থেকে আমরা একাডেমিক শাটডাউনের ঘোষণা দিই। এর কয়েকদিন পর প্রশাসনিকভাবে শাটডাউনে যায় কলেজ। ফলে ক্লাস, পরীক্ষা ও অন্যান্য সব কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে স্মারকলিপি, মানববন্ধন, বিক্ষোভ, সমাবেশ, অবরোধসহ সব ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি। অথচ আন্দোলনে ৩০ শিক্ষার্থী আহত হলেও সংশ্লিষ্টদের টনক নড়ছে না।
তারা বলেন, আমাদের ১ দফা দাবি পূরণের মধ্যদিয়ে শিক্ষক সংকট স্থায়ীভাবে সমাধান করতে হবে। ল্যাব ও ক্লাসরুম আধুনিকায়ন করাসহ জনবল সংকট রয়েছে। ক্যাম্পাসের উন্নয়নে বরাদ্দ নেই। রেজাল্ট প্রকাশে বিলম্ব, সেমিস্টার ও রি-টেক ফি অধিক হারে নেওয়া হচ্ছে। শতভাগ আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগ হচ্ছে। ছয় মাসেরও বেশি সময় ব্যয় হচ্ছে একটি সেমিস্টার শেষ করতে। এসব সংকট দূর করতে এক দফা দাবি আদায় সময়ের দাবি বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সালমান বলেন, আপনারা কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকান। এখানে এখনো স্বৈরাচারী দোসর রয়েছে। কারিগরি অধিদপ্তর আমাদের ল্যাব দিতে পারে না, শিক্ষক দিতে পারে না। অথচ নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে। আমরা মানসম্মত শিক্ষা চাইতে এসেছি। আমরা নাগরিকদের ভোগান্তি সৃষ্টি করতে আসি নাই। আমরা জনদূর্ভগ সৃষ্টি না করে, যা যা করার তাই করেছি। আমরা যার যার বিভাগে দুই মাস আন্দোলন করে কোনো ফলাফল পাইনি। কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি। উপায়ন্তর না পেয়ে আমরা লং মার্চ করে ঢাকায় এসে অবস্থান নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দাবি না মানা হলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যাবো। এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে তার দায় নিতে হবে কারিগরি অধিদপ্তরকে। রক্ত লাগলে রক্ত দেবো, কিন্তু নামমাত্র সার্টিফিকেট নেবো না।
এ সময় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সংস্কার আন্দোলনের সদস্য শিবাজী রায় মিলন ঘোষণা দেন, আমরা সকল শিক্ষার্থী মিলে শিক্ষা ভবনের সামনে তিন ঘণ্টা অবস্থান করব। এরমধ্যে দাবি না মানা হলে আমরা আমরণ অনশনে যাব।
মানববন্ধন শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রেসক্লাব থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষা ভবনের দিকে যাত্রা শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয় এবং ১০ মিনিটের মধ্যে এলাকা ত্যাগ করতে বলে। শিক্ষার্থীরা পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং কর্মসূচি ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
আহত শিক্ষার্থী কামরুল বলেন, আমরা রাস্তা বন্ধ করে কোনো দুর্ভোগ সৃষ্টি করিনি। শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলাম। তারপরও আমাদের ওপর লাঠিচার্জ চালানো হয়েছে। আমাদের অনেক সহপাঠী আহত হয়েছে। আমরা রক্ত দিয়েই নতুন বাংলাদেশ এনেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
ডিএইচবি/এমজে