ঢাকা: বর্তমান অর্ন্তবর্তী সরকারের উদ্দেশে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, আপনারা তো ঐকমত্য কমিশন নিয়ে প্রতিদিন মিটিং করছেন। আমরা জানি না এ মিটিংয়ের ফল কী হবে।
শনিবার (৫ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি আয়োজিত 'বাংলাদেশ পুলিশ সংস্কার: প্রেক্ষিত নাগরিক ভাবনা' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গোলটেবিল বৈঠকে মাহমুদুর রহমান আরও বলেন, পুলিশ যে আজ একটি প্রচণ্ড ভাবমূর্তি সংকটে পড়েছে, এর জন্য কি পুলিশ দায়ী? এর জন্য পুলিশ দায়ী নয়। এর জন্য সিস্টেম দায়ী। যে ফ্যাসিবাদী সিস্টেম গত ১৬ বছর ধরে তৈরি করা হয়েছিল বাংলাদেশে। পুলিশকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে অপরাধী বানিয়ে লাভ নেই। এ প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো।
তিনি বলেন, গত ১৬ বছরে পুলিশের চেইন অব কমান্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছিল। পুলিশের ভেতর চেইন অব কমান্ড বলতে কিছু ছিল না। এভাবেই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল পুরো সিস্টেমকে। এ জন্য জুলাই মাসের ম্যাসাকারটা হওয়ারই ছিল। জুলাই বিপ্লবটা যেমন হওয়ার কথা ছিল, তার জবাবে যে পুলিশ বাহিনী করা হয়েছিল, সেই পুলিশ বাহিনী যে ম্যাসাকারটা করবে- এটাও হওয়ার ছিল।
আমার দেশ সম্পাদক আরও বলেন, এখন আমাদের লক্ষ্য কি? লক্ষ্য হচ্ছে- আরেকটা ফ্যাসিবাদ যেন বাংলাদেশে আর কখনো ফিরে না আসে। সব সংস্কারের প্রধান উদ্দেশ্যই এটা। কিন্তু ফিরে না আসতে হলে প্রথমে যে কাজটি আমাদের করতে হবে, আমাদের গণতন্ত্রের উত্তরণ হতে হবে। এ গণতন্ত্র উত্তরণের রাস্তাটা হলো একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। এ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন যদি করতে হয়, সেটিকে আমরা পুলিশ ছাড়া করতে পারবো?
তিনি বলেন, বিপ্লবের পূর্ব বাংলাদেশে পুলিশ ছিল দানবীয় আর বিপ্লব পরবর্তীতে আজকে পুলিশ মনোবলহীন একটি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। এটা হচ্ছে বাস্তবতা। আইনের শাসন যদি বাংলাদেশে থাকতো তাহলে পটিয়া ও পাটগ্রামের ঘটনা দুটি ঘটতো না। এমন যদি ঘটতে থাকে তাহলে মনবল ভেঙে পড়া পুলিশ দিয়ে আমরা কীভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবো?
তিনি আরও বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে এদের (পুলিশ) হারিয়ে যাওয়া নৈতিকতা ফিরিয়ে দেওয়া। আর কোনো সংস্কার এ সরকারের কাছে আশা করলে আপনারা (আয়োজকরা) ভুল করবেন। সময় নেই, সময় শেষ হয়ে গেছে, পার হয়ে গেছে সময়। এ সরকারের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত পুলিশের নৈতিক শক্তিকে ফিরিয়ে আনা।
মাহমুদুর রহমান বলেন, পুলিশ কেন খারাপ হয়ে যায় বা জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ায় এর কতগুলো কারণ আছে। প্রধানতম কারণ আমি মনে করি, রাজনৈতিক প্রভাব। রাজনৈতিক প্রভাবের কারণেই পুলিশের এতটা অধঃপতন ঘটে। যার প্রমাণ আমরা গত সরকারের আমলে দেখেছি। কাজেই পুলিশের সংস্কার যদি মিনিংফুল করতে হয়, তাহলে আগেই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে কীভাবে পুলিশকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করা যায়। এটাকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো সংস্কার করে লাভ নেই।
তিনি আরও বলেন, র্যাবের একটি মৌলিক দুর্বলতা আছে। র্যাবে সামরিক কর্মকর্তাদের ঢুকানো একটা ভুল ছিল। আমি সর্বদা বলে যাবো এ কথা। এতে পুলিশ ও সামরিক বাহিনী দুটোরই বাহিনীর সর্বনাশ হয়েছে। সামরিক বাহিনী র্যাবে ঢুকে দুর্নীতিগ্রস্ত ও ক্রিমিনাল হয়েছে। এর কারণে সামরিক বাহিনীও বিতর্কিত হয়েছে। সুতরাং এ সরকারের কাছে আমার আহ্বান, আপনাদের হাতে সাত মাস সময় আছে। অন্তত একটি কাজ করে যান পুলিশের সংস্কার। র্যাব থেকে সামরিক কর্মকর্তাদের উঠিয়ে নেন। এ সংস্কারটুকু যদি করে যেতে পারেন, দেশবাসী আপনাদের মনে রাখবে।
বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ড. এম আকবর আলীর সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি ড. মো. মতিয়ার রহমান। সাবেক আইজিপি আশরাফুল হুদার স্বাগত বক্তব্যে গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব এস এম জহুরুল ইসলাম, সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে ইলাহি আকবর, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ফরিদ আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দিন খান, বিএনপির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, পুলিশ সংস্কার কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধি জারিফ রহমান ও খেলাফত মজলিসের সাধারণ সম্পাদক ড. আহমেদ আব্দুল কাদের।
এসসি/জেএইচ